Connect with us

বিনোদন

চলে গেলেন নজমুল সঙ্গীতশিল্পী হুদা বাচ্চু

Published

on

চলে গেলেন বরেণ্য অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পী নজমুল হুদা বাচ্চু। বুধবার ভোর ৪টা ১৪ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহির রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

জানা যায়, বাসায় হার্টঅ্যাটাক হলে তাকে বাসার নিকটস্থ স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তথ্যটি নিশ্চিত করেন তার ছোট মেয়ে সাদিয়া নাজ। আজ বাদ জোহর রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আগামী ১১ জুলাইকে ঘিরে নজমুল হুদা বাচ্চুর ছিল নানান পরিকল্পনা। কারণ, সেদিন তার ৮০-তে পা রাখার কথা। কিন্তু তার আগেই তিনি চলে গেলেন পরপারে।

চলচ্চিত্র এবং নাটকের কিংবদন্তী অভিনেতা হিসেবেই নজমুল হুদা বাচ্চুর পরিচিতি। কিন্তু এর বাইরেও তিনি একজন সঙ্গীতশিল্পী এবং সঙ্গীত পরিচালকও ছিলেন। জীবনের শুরুটাই তার সঙ্গীত দিয়ে। অথচ সঙ্গীতশিল্পী না হয়ে হলেন অভিনেতা।

ছোটবেলা থেকেই তার গানের প্রতি ছিল এক অন্যরকম ভালোলাগা। আর তাই ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গানেও নিজেকে গড়ে তুলেন। তবে গানের চেয়ে তখন তিনি বেশি ব্যস্ত হয়ে ওঠেন অভিনয়ে। এসএম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন তিনি। হলের নাটকের নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি তিনি অভিনয়ও করতেন। ‘ডাকসু’র অনেক নাটকেও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

ছাত্র জীবনেই বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রয়াত প্রযোজক মনিরুল আলমের প্রযোজনায় একটি নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে টিভি নাটকে তার অভিষেক ঘটে। এ নাটকে তার সহশিল্পী ছিলেন সৈয়দ আহসান আলী সিডনী (অভিনেতা জিতু আহসানের বাবা) ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। তবে যে নাটকে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি সেটি হচ্ছে আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় নির্মিত ধারাবাহিক নাটক ‘চাচা-ভাতিজা’। এতে চাচা চরিত্রে বাচ্চু এবং ভাতিজা চরিত্রে টেলিসামাদ অভিনয় করেছিলেন। এরপর থেকে আজ অবধি বহু নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন।

চলচ্চিত্রে নজমুল হুদা বাচ্চুর অভিষেক ঘটে একজন প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে। ১৯৬১ সালে মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে প্রয়াত রবিন ঘোষের সুর সঙ্গীতে ‘অভিমান করো না’ গানটিতে প্রথম কণ্ঠ দেন। এরপর তিনি ‘জোয়ার এলো’, ‘চান্দা’, ‘ফির মিলিঙ্গে হাম দোনো’, ‘কার পাপে’সহ বহু চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন।

বাবুল চৌধুরীর নির্দেশনায় তিনি প্রথম ‘আকাঁবাঁকা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। নজমুল হুদা বাচ্চু বলেন, ‘আঁকাবাঁকা চলচ্চিত্রে আলতাফ মাহমুদের সুর সঙ্গীতে আমি একটি প্লে-ব্যাক করি। এতে তিনি আমারই গানে লিপসিং করতে বলেন। তার জোরাজুরিতেই আসলে অভিনয়ে আসা আমার। তা না হলে হয়তো অভিনেতা বাচ্চুর এভাবে অভিনয়ে আসা হতো না।’

এরপর অচেনা অতিথি, সারেং বউ, সখি তুমি কার, জীবন মৃত্যু, স্বামী, গাংচিল, ভালো মানুষ, বাজিমাত, মাটির মায়া, কী যে করি, ঘর জামাই, আবার তোরা মানুষ হ, সূর্য দীঘল বাড়ি, দুই বেয়াইয়ের কীর্তি, দড়িয়া পাড়ের দৌলতী, রানওয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সর্বশেষ তিনি তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘অজ্ঞাতনামা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনই তিনি বেতারের তালিকাভুক্ত কণ্ঠশিল্পী হন। শেষ দিন পর্যন্ত তিনি গানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বেতারে তিনি সরাসরি গান করতেন। ‘লালন ফকির’র নাটকসহ অনেক নাটকের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

নাজমুল হুদা বাচ্চুর বাবা শামসুল হুদা ও মা আনোয়ারা হুদা। ১৯৩৮ সালের ১১ জুলাই তার জন্ম। ১৯৬৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি লিনা’র সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার তিন মেয়ে সানিয়া নাজ, সায়কা নাজ ও সাদিয়া নাজ। বড় মেয়ে সানিয়াও গান করেন। এ মুহূর্তে নজমুল হুদা বাচ্চু জাহানারা আহমেদের রচনায় ‘ছোবল’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছিলেন, যা নিয়মিত বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হচ্ছে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *