Connect with us

ঠাকুরগাঁও

বন্যা আর দ্রব্যমূল্য; ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ আনন্দের ছোঁয়া নেই গ্রামে

Published

on

আব্দুল আউয়াল, ঠাকুরগাঁও: উত্তর জনপদের হিমালয় পাদদেশে ঠাকুরগাঁও জেলার অবস্থান। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অনেক উঁচু জেলা এটি। উঁচু এলাকা হওয়ায় ঠাকুরগাঁওসহ পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে সহসা বন্যা হয় না। যে কারণে ঠাকুরগাঁও জেলায় আগে থেকে বন্যা নিয়ে মানুষের তেমন কোন প্রস্তুতি ছিল না।

সম্প্রতি হঠাৎ বন্যায় ঠাকুরগাঁও প্রত্যন্ত অঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘর-বাড়িসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে এবারে ঈদ আনন্দের ছোঁয়া নেই এ গ্রামগুলোতে।

গত কয়েক বছরে গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় ঈদের আগে জামা-কাপড়সহ নানা প্রসাধনী সামগ্রী কেনার ধুম পড়ে যেত যা এবার পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি ঈদের দিনের জন্য কোন ভাল খাবার কিনে খাওয়ার মত মানুষের হাতে অর্থ নেই।

কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ঘর-দুয়ার মেরামত করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ক্ষেত তৈরি করাই এখন তাদের একমাত্র লক্ষ্য। অথচ এ জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা হাতে নেই অধিকাংশ কৃষকের। সরকারি-বেসকারি ব্যাংক কিংবা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ দেয়ারও কোনো উদ্যোগ নেই। তাই চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ঈদের জন্য কিছু কেনা তাদের জন্য আকাশকুসুম কল্পনা ।

ঠাকুরগাঁওয়ে রাজু, বাবুসহ কয়েকজন সমাজকর্মীরা জানান, সরকারিভাবে ত্রাণ সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হলেও তাতে আস্থা নেই অনেকের। বিশেষ করে যেসব এলাকায় এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছেনি এছাড়া অভাবের কারণে মানুষ চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। বানের পানি সরে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত ফসল ও সবজির ক্ষেত চাষযোগ্য করে তাতে ফসল উৎপাদন করা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়টুকু তারা কী খেয়ে বাঁচবে এ দুশ্চিন্তা তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। যার প্রভাব তাদের শহরবাসী স্বজনদের ওপরও পড়বে।

ঠাকুরগাঁওয়ের ব্যবসায়ী হাশেম আলী জানান, গত কয়েক মাসে লাগামহীনভাবে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে শহরের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের মাঝেও ঈদ আনন্দের উচ্ছ্বাস অনেকটাই ম্লান। তরুণদের দল বেঁধে হাটে হাটে ঘুরে কোরবানির পশু কেনার উদ্যোগেও যেন ভাটা পড়েছে এবার। বরং কেউ কেউ দলবদ্ধ হয়ে ঈদের ছুটিতে অসহায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জোরালো প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনেকে এরমধ্যে বানভাসিদের জন্য খাবার সামগ্রী ও চাল সংগ্রহ করেছেন। সামর্থ্যবান অনেকে তাদের এসব কাজে নানাভাবে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। তবে ব্যক্তিপর্যায়ের এসব উদ্যোগ অসহায় মানুষের মুখে কতটা হাসি ফোটাতে পারবে তা নিয়ে খোদ উদ্যোক্তারাই সংশয়ে রয়েছে।

সদর উপজেলা রুহিয়া এলাকার মোসলেম উদ্দিন জানান, ঈদ আনন্দ সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে সরকারি সর্বোচ্চ সহায়তা লাগবে। বন্যাদুর্গতদের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনার জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে ঈদ উপলক্ষে দেয়া সামান্য চাল তাদের কাছে ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ হয়ে দাঁড়াবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, উত্তরের জেলার একমাত্র জীবিকার উৎস কৃষিকাজ। হঠাৎ বন্যায় বেশ কিছু এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আবার গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলে আবারো গ্রামে ঈদের আমেজ ফিরে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *