Connect with us

জাতীয়

মেয়র আনিসুল হক আর নেই

Published

on

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক আর নেই। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ইউস্টনের ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। আজ বাদ জুমা লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

মেয়র হিসেবে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তার মোড় থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণ, গাবতলীতে ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়ে রাস্তা সংস্কার, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কূটনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গুলশান-বারিধারার নিরাপত্তা জোরদার, গুলশান-বনানী এলাকা থেকে পুরনো বাস সরিয়ে ‘ঢাকা চাকা’ নামের নতুন এসি বাস সার্ভিস চালু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, ‘সবুজ ঢাকা’ নামের বিশেষ সবুজায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে নাগরিকমহলে বিশেষ প্রশংসিত হন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সমস্যায় দিনে-রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েও নাগরিকবাসীর আস্থাভাজন হয়েছিলেন তিনি।

তার বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। মৃত্যুকালে স্ত্রী,সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজন ও বহু গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে ১৩ আগস্ট থেকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সাড়ে তিন মাস ধরে অসুস্থ আনিসুল হকের অবস্থার মাঝে উন্নতি ঘটলেও গত মঙ্গলবার ফের আইসিইউতে নেওয়া হয় তাকে।

নাতির জন্ম উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই সপরিবারে লন্ডনে যান আনিসুল হক ও তার স্ত্রী রুবানা হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন আনিসুল হক। তার মস্তিস্কের রক্তনালীতে প্রদাহজনিত সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিস শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা।

এদিকে আনিসুল হকের মৃত্যূর খবরে তার স্বজন,বন্ধু-বান্ধব ও গুনগ্রাহীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। যুক্তরাজ্যে স্বামীর পাশে থাকা রুবানা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আনিসুল হকের ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। তার অবস্থা ভালো নয়। তার জন্য দোয়া করুন। পরে রাতে তার মৃত্যুর খবর জানা যায়।

আগস্ট থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আনিসুল হকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে গত ৩১ অক্টোবর আইসিইউ থেকে ফিজিওথেরাপি দেওয়ার জন্য রিহ্যাবিলিটেশনে স্থানান্তর করা হয়। ওই সময় চিকিৎসকরা বলেছিলেন, মেয়র শঙ্কামুক্ত রয়েছেন। পরে গত মঙ্গলবার তাকে ফের হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। এদিন তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

ব্যবসায়ীদের নেতা আনিসুল হক ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। মেয়র হিসাবে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন এবং গন পরিবহন ব্যবস্থায় শৃংখলা আনার ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্যেগ নেন তিনি। বিশেষ করে অভিযাত এলাকা গুলশান-বনানীতে তিনি ঢাকা চাকা নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গনপরিবহন চালু ও বেপরোয়া রিকশা নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখেন তিনি।

আনিসুল হকের জন্ম নোয়াখালি জেলায় ১৯৫২ সালে। তার শৈশবের বেশ কিছু সময় কাটে তার নানাবাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনও করেছিলেন তিনি। এরপর ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। মোহাম্মদি গ্রুপ ও দেশ এনার্জি লি: এর কর্নধার তিনি।

পারিবারিক সূত্র জানায়, অন্তিমকালে তার পাশে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাদ্বয় । তাঁর মরদেহ শনিবার সকাল ১১:৪০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানযোগে ঢাকায় আনা হবে। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ তাঁর বাসায় নেওয়া হবে। ওই দিন বাদ আসর নামাজে জানাজা শেষে তাঁকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ঢাকাসহ সারা দেশে তার সকল শুভান্যুধায়ীর কাছে তাঁর জন্য দোয়া তাঁর চেয়েছে তার পরিবার।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *