Connect with us

ঝিনাইদহ

আতঙ্কের জনপদ ঝিনাইদহ, ৭ মাসে ৩৩ খুন

Published

on

Jhinaidahমনিরুজ্জামান সুমন, প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ জেলা এখন আতঙ্কের জনপদ। একের পর এক হত্যাকান্ডই আতঙ্কের কারণ। গত ৭ মাসে এ জেলায় সর্বমোট ৩৩টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। ব্যক্তিগত কোন্দলের কারণেই এসব খুনের ঘটনা ঘটছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলায় ৭ মাসের হত্যাকান্ডের মধ্যে আছে সেবায়েত, পুরোহিত, হোমিও চিকিৎসক, তিন শিশুকে পুড়িয়ে হত্যা, ৭ জন বন্ধুক যুদ্ধে নিহত, ভাগ্নের হাতে মামা,ভাতিজার হাতে চাচা, নির্বাচনী সহিসংতা আওয়ামীলীগ সমর্থক নিহত, ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে যুবক নিহত, গনপিটুনিতে নিহত, সন্ত্রাসীকে জবাই করে ও মহিলাদেরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার মত ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ সুপার অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় এক মহিলা ও এক যুবকসহ ১১ জন, শৈলকুপায় তিন শিশু দুই মহিলাসহ ৯জন, কালীগঞ্জে এক যুবকসহ ৪জন, হরিণাকন্ডেু এক মহিলাসহ ৬ জন ও মহেশপুরে এক যুবক সহ ৪জন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আড়–য়াকান্দি গ্রামে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সাইফুল ইসলাম মামুন (২৫) নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যাণয়ের আরবি বিভাগের মাস্টার্সের বর্ষের ছাত্র নিহত।
গত ৪ জুলাই শৈলকুপা উপজেলায় আব্দুল হান্নান নামে এক যুবকের গলাকাটা লাশ ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সীমান্ত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
গত ২ জুলাাই সদর উপজেলার মধুপুর কবরস্থানে পুলিশের সাথে “বন্দুকযুদ্ধে” ইবনুল ইসলাম পারভেজ (২৯) নামে এক শিবির নেতা।
গত ১৬ জুন রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৯ নাম্বার রোডের ১১ নাম্বার বাসার ৬ তলা থেকে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায় পারভেজকে এবং পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে পরিবার জানান।
গত ১ জুলাই সদর উপজেলার উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামে এবার স্থানীয় শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস ওরফে বাবাজিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। একই দিনে সদর উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের মাঠে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শহীদ আল মাহমুদ ও আনিচুর রহমান নামে দুই শিবির কর্মী নিহত হয়।
গত ১৩ জুন সদর উপজেলার নিজ বাড়ি বদনপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন শহীদ আল মাহমুদ তুলে নিয়ে যায় বলে পরিবারের দাবি।
গত ২২ জুন শৈলকুপার বড়দা গ্রামে রোজিনা আক্তার তমা নামে এক গৃহবধুকে ধর্ষনের পর শ্বাসরোধ ও নির্যাতন করে হত্যা করে একটি প্রভাবশালী মহল।
গত ৭ জুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার করাতিপাড়া গ্রামের পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
গত ৬ জুন হরিণাকুন্ডু উপজেলাার কাপাসহাটিয়া ইউনিয়নের দাড়িয়াপুর গ্রামে আলফাজ উদ্দীন মন্ডলকে কুপিয়ে হত্যা করে ভাগ্নে ও ভাতিজারা।
গত ৫মে হরিণাকুন্ডু উপজেলার ফলসী ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ দুই প্রার্থীর সংঘর্ষে ফলসী গ্রামে দিদারুল ইসলাম মন্ডলের মৃত্যু হয়।
গত ১০মে ঝিনাইদহের মহেশপুরের বজরাপুর গ্রামে জমির বিরোধ নিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছোট ভাই মোহন বড় ভাই মজিবর রহমান খোকনকে পিটিয়ে হত্যা করে।
গত ১২ মে নির্বাচনী সহিংসতায় হরিণাকুন্ডু উপজেলার ফলসি গ্রামে আওয়ামীগের দু’গ্রপের সংঘর্ষে আহত মুলায়েম হোসেন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
গত ২৫ এপ্রিল শৈলকুপা উপজেলার ধাওড়া গ্রামে যৌতুক না দেওয়ায় গৃহবধূ যমুনা বেগমকে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করে তার স্বামী নাজের আলী ।
গত ২৩ এপ্রিল হরিণাকুন্ডু উপজেলা পরিষদ এলাকায় নিপা খাতুন নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্বামী ঠান্ডু আলী ।
গত ২২ এপ্রিল শৈলকুপা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাইয়ের হাতে ভাই শামিম মন্ডল খুন হয়।
গত ১৯ এপ্রিল মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর গ্রামে গরু চোর সন্দেহে গনপিটুনিতে নুর ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে এলাকাবাসী।
গত ১৩ এপ্রিল দুই শিবির নেতা যশোর এমএম কলেজের অনার্স বাংলা ৩য় বর্ষের ছাত্র আবুজার গিফারি ও ঝিনাইদহ সরকারী কে সি কলেজের অনার্স ব্যবস্থাপনা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শামীম হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
গত ০৮এপ্রিল সদর উপজেলার ছয়াইল গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে আকামীর হোসেন নামে আওয়ামীলীগ সমর্থক ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
গত ০৩ এপ্রিল ঝিনাইদহ পৌর এলাকার বড়কামারকুন্ডু থেকে সীমা খাতুন নামের এক গৃহবধুর হত্যা করে তার স্বামী রয়েল হোসেন।
গত ১৪ মার্চ কালীগঞ্জে আব্দুর রাজ্জাক নামের এক হোমিও চিকিৎসককে কুপয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
গত ০৪ মার্চ হরিণাকুন্ডু উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের হিঙ্গারপাড়া গ্রামের শোষপাড়া মাঠ থেকে জসিম উদ্দিন নামের এক শিবির সভাপতির গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শহরের আদর্শপাড়ায় ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে নয়ন হোসেন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ফুলবাড়ি গেট নামক স্থান থেকে অজ্ঞাত যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গত ২৩ ফেবব্রুয়ারি মহেশপুর উপজেলার হলিদাপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে চন্তু হোসেন (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়।
গত ১৮ফেব্রুয়ারি নিখোজের চার দিন পর মহেশপুর উপজেলার সেজিয়া গ্রামের গম ক্ষেত থেকে হাকিমুল ইসলাম পেনু নামে এক সেলুন কর্মীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
গত ৪ফেব্রুয়ারি হরিণাকুন্ডু উপজেলার ঘোড়াগাছা গ্রামের মাঠে আনোয়ার হোসেন আনু নামে এক সন্ত্রাসীকে জবাই করে হত্যা করে দুর্বত্তরা।
গত ৩১জানুয়ারী শৈলকুপা উপজেলার বিজুলীয়া গ্রাম থেকে লিটন বিশ্বাস নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত ১৫ জানুয়ারী শৈলকুপায় হাবিবপুর গ্রামের শাহিন শেখ নামে এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত ৭জানুয়ারী সদর উপজেলার বেলেখাল বাজারে ছমির উদ্দিন খাজা নামে এক হোমিও চিকিৎসককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
গত ৫জানুয়ারী সদর উপজেলার রাধানগর গ্রামে নাসির উদ্দীন বিশ্বাস নামে এক ভাইয়ের হাতে আরেক ভাই খুন হয়।
এছাড়া গত ২ জানুয়ারী শৈলকুপা শহরের কবিরপুর নতুন ব্রীজপাড়া এলাকায় আগুনে পুড়িয়ে দুই ভাতিজা সহোদর
মোস্তফা সাফিন ও মোস্তফা আমীন এবং ভাগ্নে মাহীনকে পুড়িয়ে হত্যা করে ঘাতক ইকবাল হোসেন ।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, বিশেষ কয়েকটি হত্যাকান্ড ব্যতিত বাকি সবই ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া ২০১৬ সালের ৭ মাসে যে সব হত্যাকান্ড ঘটেছে তার জন্য সামাজিক ও পারিবারিক দ্ব›দ্বই দায়ী। প্রায় সব কটি হত্যাকান্ডের খুনিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের ধরতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে ভবিষ্যতে এ সব হত্যাকান্ড কমে আসবে বলে তিনি দাবী করেন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *