Connect with us

জাতীয়

কার সন্তুষ্টির জন্য মওদুদের এই বক্তব্য জানি না: রিজভী

Published

on

বিএনপির ভুল ধরিয়ে দিতে চেয়েছি: মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার:

বিগত চার দলীয় জোট সরকার নিয়ে মওদুদ আহমেদের লেখা সাম্প্রতিক বইয়ের ভাষ্য দুভার্গ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী হয়েও মওদুদ কার সন্তুষ্টির জন্য এমন ভাষ্য দিয়েছেন- সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তবে প্রতিক্রিয়ায় মওদুদ আহমেদ দাবি করেছেন, কারো সন্তুষ্টির জন্য তিনি তার বইয়ে এ ধরনের বক্তব্য দেন নি, বরং বিএনপির ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্যই তিনি এ সব কথা লিখেছেন।
গতকাল নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, “নিজের বাড়ি রক্ষার জন্য, নাকি ক্ষমতাসীন দলের মন রক্ষার জন্য এরকম ভাষ্য তিনি দিয়েছেন তা জানি না। আমি মনে করি তার এহেন ভাষ্য দুর্ভাগ্যজনক।” সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদের দলবদলের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে ইংগিত করে রিজভী তাকে কখনো উল্লেখ করেন ‘দল ছুট ও আদর্শ ছুট নেতা হিসাবে, কখনো আবার তুলনা করেন কাকের সঙ্গে।
বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দি আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮ শিরোনামে ওই বইয়ে চারদলীয় জোট সরকারের অপশাসন ও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গে মিত্রতা, বিএনপি সরকারের কিছু মন্ত্রীর স¤পৃক্ততায় জঙ্গিবাদের উত্থান, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে হাওয়া ভবনের ক্ষমতা, প্রভাব ও দুর্নীতি এবং ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিতর্ক সমাধানে ব্যর্থ হয়ে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে দায়িত্ব দেয়ায় মতো বিষয়গুলো এসেছে। মওদুদের মতে, মূলত এসব কারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটাররা বিএনপির কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। অন্যদিকে বইয়ের একটি অধ্যায়ে ওই নির্বাচনের ফলকে ‘নীরব বিপ্লব’ এর সঙ্গে তুলনা করেন মওদুদ আহমদ, যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এই বিএনপি নেতার মতে, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে ও জঙ্গিবাদের বিপক্ষে শেখ হাসিনার অবস্থান এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তার পরিবর্তনের আহ্বানে দেড় কোটি তরুণ ভোটারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। পাশাপাশি ১০ টাকায় চাল, বিনামূল্যে সার, প্রতিটি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্র“তি গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। এসব ইতিবাচক বিষয়ের পাশাপাশি বিএনপির বিপক্ষে নেতিবাচক ভোটও ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়কে এগিয়ে নেয় বলে মনে করেন মওদুদ।
বিগত সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাবন্দি অবস্থায় ইংরেজিতে লেখা মওদুদের ওই বই গত শনিবার ইউপিএল থেকে প্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রিজভী বলেন, “দলের পক্ষ থেকে আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। তবে ব্যক্তিগতভাবে বলব- তিনি নিজেই তো চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। এরশাদ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী পদে থাকা মওদুদের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে ইংগিত করে রিজভী বলেন, “যারা দলছুট, আদর্শছুট এবং নিজের প্রয়োজনে দল পাল্টায়- তাদের এদেশের জনগণ চেনে।” তিনি বলেন, “সাত-সমুদ্র তের নদী পার হলেও কাক কাকই থেকে যায়। এক ধরণের মানুষ আছে তারা রং বদলায়। ভারতের এক প্রখ্যাত সাংবাদিক তাদের ফাস্ট ফুডের সঙ্গে তুলনা করেছেন।” “১/১১ এর পর খালেদা জিয়ার কাছে তার দুই সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর ভাগ্যই ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো আলোচনায় যেতে তিনি রাজি ছিলেন না” – মওদুদের বইয়ের এমন ভাষ্য ‘ঠিক নয়’ বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারছি না, কার সন্তুষ্টির জন্য নিজের লেখা বইয়ে এরকম ভাষ্য দিয়েছেন।” রিজভী বলেন, “দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য বেগম খালেদা জিয়া কখনোই আপস করেননি। দেশের জনগণের কথা ভেবে তিনি দেশ ত্যাগ করেননি। তার ওপর অনেক চাপ ছিল বলেই তারেক রহমানের ওপর বন্দি অবস্থায় নির্যাতন করা হয়েছে। এই জ্যেষ্ঠ নেতাসহ অনেকে সে সময় মুক্তি পেয়েছেন।” অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুস সালাম, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
তবে রুহুল কবির রিজভীর সমালোচনার জবাবে মওদুদ আহমেদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, কারো সন্তুষ্টি বা বাড়ি রক্ষার জন্য নয় বরং বিএনপির ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেই তার এই বক্তব্য। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময়ের ওই ভুলগুলো সংশোধন করে নিলে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় যেতে পারব বলেই তার বিশ্বাস। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক চার দলীয় জোট সরকারের আইন মন্ত্রী মওদুদ বলেন, “সরকারের মন রক্ষা কিংবা বাড়ি রক্ষার সঙ্গে এই বইয়ের কোনো স¤পর্ক নেই। এই বইতে ওই সময়ে আমাদের দলের নানা ব্যর্থতা ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের পরাজিত হওয়ার কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যেসব কারণগুলো চিহ্নিত করেছি, আমি বিশ্বাস করি, তা সংশোধন করে আগামীতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা ক্ষমতায় ফিরে আসব। দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। মওদুদ বলেন, “বইয়ের বিষয়বস্তুর সঙ্গে রিজভীর মন্তব্যের কোনো সম্পর্ক নেই। তার মন্তব্য শুনে আমি দুঃখ পেয়েছি। বইটি পুরোপুরি পড়ে মন্তব্য করা উচিৎ ছিল। এরকম মন্তব্য তার কাছে থেকে আমি আশা করিনি।” নিজের বই প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, “এই বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য ২০০৮ সালের নির্বাচন। ক্ষমতায় থাকাকালে আমাদের দলের ব্যর্থতা ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার অনেক কারণ ছিল। তা আমি উল্লেখ করেছি বইতে।” তিনি আরো বলেন, “এই বই লেখার পর আমার ভয় ছিল- সরকার অসন্তুষ্ট হবে। আমাকে কারাগারে যেতে হবে। কিন্তু এখন দেখছি আমার দলের ভেতরে এক সহকর্মী অসন্তুষ্ট। তিনি বইটি না পড়ে মন্তব্য করেছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হেডিং ও প্রতিবেদন দেখে তার মন্তব্য করাটা ঠিক হয়নি। আমি তাকে খুব øেহ করি। রিজভী বইটি পড়ে অভিনন্দন জানাবে- এমন আশাও করেছিলেন বলে জানান মওদুদ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *