Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমিপে খোলাচিঠি

Published

on

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সালাম গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্র পরিচালনার মতো গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের মতো সাধারণ মানুষের এই চিঠি আপনার দৃষ্টিগোচর হবে কি না জানি না। তবু অনিবার্য কারণে আপনার কাছে চিঠিটি পৌঁছানোর জন্য পত্রিকার আশ্রয় নিতে হলো।
জঙ্গিবাদকে ইস্যু বানিয়ে সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিগুলো একটার পর একটা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশকে নিয়েও স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বহুমুখী ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। বিষয়টি আপনি বহুবার নানা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের সামনে উল্লেখ করেছেন। জঙ্গিবাদের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে এবং কারা মুসলমানদের রক্তের বিনিময়ে অস্ত্র ব্যবসা করছে সে বিষয়েও আপনার সাহসী উচ্চারণ আমরা শুনেছি। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী ২০০৯ সালে আপনার সরকারের প্রতি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াইয়ের প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন যার অনুলিপি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ১৮টি দফতরেও প্রেরণ করা হয়েছিল। সেই প্রস্তাবনায় তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, জঙ্গিবাদ পৃথিবীর অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী ঘটনার মতো নয়। কারণ এটা হলো সম্পূর্ণরূপে ধর্ম দ্বারা অনুপ্রাণিত। এর সম্পর্ক পরকালের জান্নাত জাহান্নামের সঙ্গে। যারা এটা ঘটাচ্ছে তারা প্রথমত বিশ্বের মুসলমান জাতির বর্তমান দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিকে সামনে এনে ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে কোর’আন হাদীসের বিভিন্ন রেফারেন্স দিয়ে কথিত ‘জেহাদে’ উদ্বুদ্ধ করে তুলছে। সরকারগুলো চেষ্টা করছে শক্তি দিয়ে এই সন্ত্রাসবাদকে দমন করতে কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে সর্বত্র জঙ্গিবাদের প্রকোপ অতীতের তুলনায় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ করে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করে ফেলেছে, ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ফেলেছে কিন্তু জঙ্গিবাদ নির্মূল হয় নি।
মাননীয় এমামুয্যামান লিখেছিলেন, “জঙ্গিবাদ মোকাবেলার জন্য শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি ইসলামের সঠিক আদর্শটি তুলে ধরে জঙ্গিবাদের অসারতা মানুষের সামনে পরিষ্কার করে দিতে হবে। তাহলে জান্নাতের আশায় কেউ আর ঐ ভুল পথে পা বাড়াবে না। কেবল জঙ্গিবাদ থেকে বিরত হতে আহ্বান করলেই হবে না, জান্নাতে যাওয়ার সঠিক পথটিও মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। এই কাজটি ইনশাল্লাহ হেযবুত তওহীদ করতে পারবে।”
এখন ২০১৭ সাল। জঙ্গিবাদকে কেন্দ্র করে গোটা মানবজাতির অস্তিত্ব চরম সংকটে পড়েছে। এ যাবৎ আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় অ-পারমাণবিক বোমাটি আফগানিস্তানে প্রয়োগ করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়া এখন দুই পরাশক্তির যুদ্ধক্ষেত্র। পুরো আরববিশ্বের টালমাটাল অবস্থা। আমাদের দেশের গোয়েন্দা প্রধানসহ চিন্তাশীল নাগরিকগণ, সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমর বিশেষজ্ঞ, জাতিসংঘ মহাসচিব, সাবেক সিআইএ প্রধান, জঙ্গিবাদের মোকাবেলা করছেন এমন রাষ্ট্রনায়কগণও একমত যে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হলে একটি পাল্টা আদর্শ বা কাউন্টার ন্যারেটিভ লাগবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, “জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়তে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার প্রচার করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।” এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হলো, সেই প্রকৃত ইসলামটি কোথায় আছে এবং কে সেটা তুলে ধরবে?
এটা আনন্দের বিষয় যে, যে কথাগুলো আমরা এতদিন থেকে বলার চেষ্টা করেছি এখন সে কথাগুলো মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মুখ থেকে শুনতে পাচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষের কাতারে থেকে বিগত বছরগুলোতে এ কথাগুলোই হাজার হাজার বার বলে এসেছি। প্রশ্ন হতে পারে, আমরা কেন উদ্যোগী হয়ে এ কথাগুলো বলছি? এক্ষেত্রে আমাদের দায়বদ্ধতা হচ্ছে এই যে, ঐ পাল্টা আদর্শ যার প্রয়োজনীয়তা এখন সবাই উপলব্ধি করছেন, সেই আদর্শটা আমাদের কাছে আছে। সেটা মহান আল্লাহ অতীব দয়া করে এই মাটিতে দান করেছেন। আমরা লক্ষ লক্ষ পত্রিকা, পুস্তিকা, ম্যাগাজিন, বই প্রকাশ করে, জনসভা, সেমিনার, পথসভায়, ঘরোয়া বৈঠকে, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে দেশের সর্বত্র, মাঠে-ঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে, নগরে-বন্দরে রোদ, ঝড়, বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে মানুষের সামনে এ কথাটিই বলে এসেছি। আমরা যেদিন থেকে মাঠে নেমেছি সেদিন থেকে আর এক দিনের জন্যও মাঠ থেকে উঠি নি, এই ভয়াবহ সংকটের বিরুদ্ধে, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের সম্পূর্ণ সামর্থ্য দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা বহুবার জঙ্গি ভাবাপন্ন গোষ্ঠীর দ্বারা এবং ধর্মকে যারা রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়েছে তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছি, আহত হয়েছি, আমাদের অনেককে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে। তবু আমরা দমে যাই নি। এ পর্যন্ত আমরা লক্ষাধিক গণসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করেছি যার সুস্পষ্ট পরিসংখ্যান আমাদের কাছে আছে। এ কাজে স্থানীয় অনেক রাজনৈতিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধি আমাদের সহযোগিতা করে এসেছেন। তবে আমাদেরকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি না থাকায় বিড়ম্বনার শিকারও প্রতিনিয়ত হচ্ছি। আমাদের জানামতে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে, নিজেদের জীবন সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে জাতির কল্যাণে, দেশের মানুষের জন্য এমন উদ্যোগ এই দেশে আর নেই, পৃথিবীতেও দ্বিতীয়টি আছে কিনা সন্দেহ। আর হেযবুত তওহীদ এমন একটি আইন মান্যকারী আন্দোলন যার কর্মীরা বিগত ২২ বছরে দেশের একটি আইনও ভঙ্গ করে নি, একটি অপরাধও করে নি। এটা আমাদের মৌখিক দাবি না, এটি সর্ব আদালত কর্তৃক স্বীকৃত সত্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো আমরা এই কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দ্বারা অকারণ হয়রানির শিকার হচ্ছি। আপনি বলছেন জনগণকে এগিয়ে আসতে, আমরা এগিয়ে গেলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহযোগিতার বদলে অসহযোগিতাই বেশি করা হয়।
যাহোক, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সরকার দুটো উপায়ে জঙ্গিবাদকে মোকাবেলার চেষ্টা করছেন। প্রথমত শক্তি দিয়ে, কঠোর থেকে কঠোরতর আইনী পদক্ষেপের মাধ্যমে জঙ্গিবাদীদেরকে দমন করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি সরকার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন্যান্য আলেম ওলামা, মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করছেন। তারা ওয়াজ করছেন, ফতোয়া দিচ্ছেন, টিভিতে বিবৃতি প্রদান করছেন। জঙ্গিবাদীদের ডি-মোটিভেটেড বা নিরুৎসাহিত করতে এটি একটি ভালো উদ্যোগ তবে এই উদ্যোগটি যারা বাস্তবায়ন করবেন তারা যদি সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসতেন তবে তা কার্যকর ও ফলপ্রসূ হতো।
আমরা যখন দেখতে পাচ্ছি যে, জাতির একটি অংশ বিপথগামী হয়ে নিজেদেরকে ধ্বংস করার পাশাপাশি দেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে তখন তা আমাদেরকে ব্যথিত ও চিন্তিত করছে। একই সাথে মাতৃভূমি ও ইসলাম ধর্মকে নিয়ে যে বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে তার বিরুদ্ধে এগিয়ে আসাকে আমরা দায়িত্ব বলে মনে করছি এবং এই অনুপ্রেরণা থেকে জাতির কর্ণধার হিসাবে আপনার প্রতি আমাদের বক্তব্য তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছি।
১. এটা চিরন্তন সত্য যে, তার কথাই ফলপ্রসূ হয় যে তার নিজ কথা আত্মা থেকে বিশ্বাস করে এবং যেটা সে নিজে কাজে পরিণত করে। যে উপদেশের মধ্যে অর্থ বা কোনো প্রকার স্বার্থ জড়িত থাকে সেই উপদেশ কখনও কার্যকর হয় না। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যারা ইসলামের রেফারেন্স দিয়ে কথা বলবেন জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা থাকাটা জরুরি। তারা কোনো স্বার্থ হাসিলকারী গোষ্ঠী হলে, ধর্মব্যবসায়ী হলে, টাকার কাছে আত্মবিক্রয়কারী হলে মানুষ তাদের ওয়াজের দ্বারা প্রভাবিত হবে না। আর জঙ্গিবাদীদের তো প্রভাবিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাই যিনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন তাকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে হবে। তিনি ধর্মের নামে কোনো বিনিময় নিতে পারবেন না। বিনিময় নিলে তার কথা ফলপ্রসূ হবে না, মানুষ নেবে না। এ পর্যন্ত আমরা দেখেছি একটি শ্রেণি ধর্মের নামে কেবল স্বার্থই হাসিল করছেন। একজন অন্ধ যেমন অপর অন্ধকে পথ দেখাতে পারে না, একটি অন্যায় দিয়ে আরেকটি অন্যায় নির্মূল করা যায় না, তেমনি যারা নিজেরাই সমাজে ফেতনা সৃষ্টি করছে, স্বার্থ উদ্ধার করছে, তাদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের মতো ফেতনা দূর হওয়া সম্ভব নয়। এটা কেবলমাত্র সময়, অর্থ আর শ্রমের অপচয় ঘটাবে।
২. জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় আমাদেরকে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। সময়ের গতির সঙ্গে সঙ্গে দেশ ও বিশ্ব পরিস্থিতি এখন অনেক পাল্টেছে। বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের অবস্থা আর ২০১৭ সালের অবস্থা এক নয়। পাঁচশ বছর আগে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূখ-গুলোর যে অবস্থা ছিল আজকের অবস্থা তার ঠিক উল্টো। তখন যারা ছিল শ্রেষ্ঠত্বের আসনে, গত কয়েক শতাব্দী থেকে তারা দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। যাদের একটু দৃষ্টিশক্তি আছে তারা দেখতে পাচ্ছে যে, বিশ্বময় শত শত বছর ধরে মুসলমানেরা মার খাচ্ছে। তারা আফ্রিকায় শত শত বছর থেকে না খেয়ে মরছে। মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলছে অর্ধশত বছর ধরে। সাড়ে ছয় কোটি মুসলমান আজ উদ্বাস্তু। তাদের বহু সমৃদ্ধ শহর নগর দেশ বোমার আঘাতে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় সমগ্র মুসলিম জাতি ব্যথিত হচ্ছে। কাজেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যখন কেউ কথা বলবেন তখন মানুষ বিবেচনা করবে যে, লোকটির কথা কি মুসলিমদের উপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে নাকি তিনি সাম্রাজ্যবাদীদের সুরে কথা বলছেন। জঙ্গিবাদের বিরোধিতা করতে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থরক্ষামূলক বক্তব্য মুসলমানদের কাছে গৃহীত হবে না।
৩. এ জনগোষ্ঠীর কাছে অবিকৃত ঐশী গ্রন্থ আছে। জঙ্গিবাদীরা কোর’আনের যে আয়াতগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে থাকে মানুষ সেগুলো কোর’আন খুলে যাচাই করে। যখন দেখে সেগুলো কোর’আনে আছে তখন তাদের কেউ কেউ জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। যারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পাল্টা মতাদর্শ প্রচার করবেন তাদের কথাকেও মানুষ সেভাবেই কোর’আনের সাথে মিলিয়ে দেখবে। কোর’আনের সেই সমস্ত আয়াতগুলো যেখানে যুদ্ধ সংক্রান্ত নির্দেশ রয়েছে সেগুলোরও গ্রহণযোগ্য ও সঠিক ব্যাখ্যা তাদের দিতে হবে। রসুলাল্লাহর মদীনাজীবন কেটেছে যুদ্ধের ময়দানে, কোর’আনের অন্তত পাঁচ শতাধিক যুদ্ধ সংক্রান্ত আয়াত রয়েছে, রসুলাল্লাহ শত্রুদের আক্রমণ করেছেন, তাদের সাথে সন্ধি করেছেন, যুদ্ধে যা হয়ে থাকে। এ সম্পর্কিত হাজার হাজার ঘটনা হাদিসগ্রন্থগুলোতে এসেছে এবং জঙ্গিবাদীরা এ বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। এগুলোকে এড়িয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা যাবে না।
এখানে আমাদের কথা হচ্ছে, রসুলাল্লাহ (স.) শুধু রসুল ছিলেন না, তিনি মদীনায় গঠিত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, সেনাবাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন, আদালতের বিচারক ছিলেন। কাজেই তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে জাতির সামগ্রিক কল্যাণে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেমনটা অপরাপর রাষ্ট্রনায়কদের নিতে হয়। সেনাপ্রধান হিসাবে যুদ্ধের আয়োজন করেছেন, শত্রুকে বন্দী করেছেন, সন্ধি করেছেন। বিচারক হিসাবে তিনি ফায়সালা দিয়েছেন, অপরাধীদের দ- কার্যকর করেছেন। এখন বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে কোর’আনের একটি আয়াত বা হাদিস উল্লেখ করে যারা ফতোয়া দিয়ে মানুষ মেরে ফেলছে তারা যে এটা কোর’আন হাদীসে থাকলেও করতে পারেন না, এটা তাদেরকে কে বোঝাবে? ঐ ফতোয়া প্রদানকারীরা কি রসুলাল্লাহর মতো জাতির স্বীকৃতিক্রমে রাষ্ট্রনায়ক হয়েছে, বিচারক হয়েছে, সেনাপ্রধান হয়েছে যে ইসলামের ঐ পর্যায়ের সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করার নির্দেশদান করতে পারে? দেশের মানুষ কি তাদেরকে এই অথরিটি দিয়েছে? মোটেই না। এখন এই ব্যাখ্যাগুলো তারাই দিতে পারবে যাদের ইসলাম সম্পর্কে সম্যক ধারণা, সামগ্রিক ধারণা রয়েছে, পূর্ণাঙ্গ আকিদা রয়েছে। যাদের কাছে ইসলামের প্রকৃত আকিদা নেই তারা কখনওই জেহাদ কেতাল আর সন্ত্রাসের সীমারেখা টানতে পারবে না। জঙ্গিবাদীরা যেটা করছে সেটা জেহাদ বা কেতাল নয়, সেটা সন্ত্রাস- এ বিষয়টি অকাট্যভাবে ইসলামের আলোকে প্রমাণ করতে হবে। ইসলামের বিশেষজ্ঞ ও ফকীহগণ সবাই একমত যে, আকিদা সঠিক না হলে ঈমানের কোনো দাম নেই, আর ঈমান যখন মূল্যহীন তখন আমলেরও কোনো দাম থাকে না। ইসলাম সম্পর্কে আকিদা সঠিক না থাকার কারণে আমাদের জাতির ঈমান আজ ভুল পথে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, আল্লাহ আমাদেরকে দয়া করে ইসলামের প্রকৃত আকিদা দান করেছেন। ইসলামের সামগ্রিক রূপটা কেমন সেটি আমরা ধর্মবিশ্বাসী মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি যাতে করে কেউ তাদের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে মানবতাবিরোধী, জাতিবিনাশী কর্মকা- ঘটাতে না পারে।
এ পত্র লেখার কারণ- আমরা দেখতে পাচ্ছি ধর্র্র্মের নামে বিভিন্ন ধরনের দল রয়েছে যাদের কেউ ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করছেন, কেউ বিপুল সম্পদের মালিক হচ্ছে, কেউ জঙ্গিবাদী কর্মকা- করে দেশে আতঙ্ক বিস্তার করছে এবং সাম্রাজ্যবাদীদের অস্ত্রব্যবসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। এতে একদিকে মুসলমানদের দেশগুলো আক্রান্ত হচ্ছে, অন্যদিকে বদনাম হচ্ছে ইসলামের। মুসলিমদেরকে সন্ত্রাসী বলে ঘৃণা করা হচ্ছে। কাজেই এই সংকট থেকে দেশকে নিরাপদ রাখা একজন নাগরিক হিসাবে যেমন আমার কর্তব্য, তেমনি ধর্মকে, ঈমানকে হেফাজত করাও মো’মেন হিসাবে ঈমানী দায়িত্ব। যে মহা সংকটে পৃথিবী পড়েছে তার হাত থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য জাতিগতভাবে সামগ্রিক কোনো উদ্যোগ নেই। সত্যিকারভাবে মুসলমান নামক জাতি আজ বিরাট সঙ্কটে পড়েছে। ভিতর থেকে যেমন, বাইরে থেকেও তেমন। কাজেই মামুলি কোনো উদ্যোগ দিয়ে এই সংকট থেকে বাঁচা সম্ভব হবে না। ষোল কোটি মানুষ যদি দেশপ্রেম ও ঈমানী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এক ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্তায় রূপান্তরিত হতে পারে যার মধ্যে কোনো একটি ফাটলও থাকবে না, তাহলেই সম্ভব হবে বৈশ্বিক সংকট থেকে, সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে এই ভূ-খণ্ডকে নিরাপদ রাখা। আমরা আপনার দলের বহু নেতাকর্মীকে, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ ও সাংসদবর্গকে আমাদের অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি যেন তারা কাছে থেকে আমাদেরকে দেখেন, আমাদের বক্তব্য শোনেন ও বিবেচনা করেন। আমরা সরকারের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন কর্র্র্র্মকর্তাকে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাকেও বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু তাদের কেউ কেউ পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হন না, উপরন্তু তারা আমাদের আন্দোলনের আরবি নাম “হেযবুত তওহীদ” দেখে অন্যান্য সংগঠনের সাথে গুলিয়ে ফেলেন বা একই পাল্লায় ফেলে দেন। আমরা কী বলছি, কী করছি তা বিবেচনা করার সময়ও তাদের হয় না। হেযবুত তওহীদের কোনো গোপন কর্মকা- নেই, আমাদের সব কাজ, সব ধারণা দিনের আলোর মত প্রকাশ্য। আমাদের সব কাজ জনগণকে নিয়ে, জনগণের জন্য। আমরা প্রমাণ দিয়েছি, জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়ে ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও, হরতাল, অবরোধ আরোপের প্রয়োজন হয় না। জনগণের সামনে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার পর জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে যে তারা কোন্টা গ্রহণ করবে। মানুষের মনের উপর জোর চলে না, আদর্শিক কাজ জোর জবরদস্তি করে হয় না। যেমন একাত্তর সালে জনগণই দেশ স্বাধীন করেছিল। আমরা বিশ্বাস করি সেই জনগণকেই যদি একটি সঠিক আদর্শে অনুপ্রাণিত করা যায় তারাই দেশের সম্পদে পরিণত হবে, তারা দেশ রক্ষায় মানবতার কল্যাণে নিঃস্বার্থ ভূমিকা রাখবে। ষোল কোটি মানুষের জাতীয় ঐক্যের শক্তি বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি সমৃদ্ধ, সম্মানিত ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিতি এনে দেবে।
আল্লাহর রসুল যে ইসলাম নিয়ে এসেছিলেন আর আজকে ইসলামের যে রূপটি আমরা দেখছি, এই দুইয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সেই ইসলাম আরবের আইয়্যামে জাহিলিয়াতের বর্বর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, পারস্পরিক দাঙ্গা হাঙ্গামায় লিপ্ত জাতিটাকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, শত্রুকে ভাই বানিয়েছিল। স্বার্থপরকে নিঃস্বার্থ বানিয়েছিল। সেই ইসলামে জাতির মধ্যে এত মতভেদ, মাযহাব ছিল না, গোঁড়ামি, কূপম-ূকতা, অন্ধত্ব ছিল না, শিয়া-সুন্নি বলে কোনো কিছুর অস্তিত্বই ছিল না, পুরো জনগোষ্ঠী ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবে আর একটি গোষ্ঠী তাদের যাবতীয় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা করিয়ে টাকা রোজগার করবে এমন রীতি ছিল না। সেই ইসলাম মুসলিম জাতিটিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষায়, নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে, নিত্যনতুন প্রযুক্তিতে পৃথিবীর সকল জাতির শিক্ষকের আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। সেই ইসলমের অনুসারীদের আজ এই হীন দশা কেন? কাজেই বৈশ্বিক এ ভয়াবহ সংকটে যখন জাতির ঐক্য জরুরি তখন বিভক্তি সৃষ্টিকারী কোনো ব্যবস্থা- সেটা শিক্ষাব্যবস্থা হোক, রাজনৈতিক ব্যবস্থা হোক, প্রশাসনিক ব্যবস্থা হোক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হোক কোনোটাই রাখা যাবে না। বিভক্তি সৃষ্টিকারী প্রত্যেকটি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন না করা হলে জাতির অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হবে।
প্রশ্ন আসতে পারে, আকাশের মত উদার, সমুদ্রের মতো বিশাল, চূড়ান্ত যৌক্তিক, ভারসাম্যপূর্ণ, সকল শ্রেণির মানুষের জন্য প্রযোজ্য, প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে সঙ্গতিশীল একটি জীবনব্যবস্থা ইসলাম কেমন করে বিকৃত হলো? সে এক দীর্ঘ ইতিহাস যা বলার জায়গা এটা নয়। ১৩০০ বছর ধরে ফকীহ, মোফাসসির, মোহাদ্দিসদের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দ্বারাই দীনের মধ্যে এই বিকৃতি এসেছে, গুরুত্বের ওলট-পালট ঘটেছে। বিকৃতির চূড়ান্ত সীমানা অতিক্রম করল যখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করল। তারা সেখানে তাদের পছন্দ মোতাবেক সিলেবাস তৈরি করে এমন একটি ইসলাম মুসলমানদেরকে শিক্ষা দিল যা শিখে তারা কোনোদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে অবদান রাখতে পারবে না। তাদেরকে কোনো কর্মমুখী শিক্ষাই দেওয়া হলো না যাতে করে তারা ঐ ধর্মীয় শিক্ষাকেই পুঁজি করে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হয়। আর এইভাবে ব্রিটিশদের শেখানো ইসলামটা জাতির মনে মগজে গেড়ে যায়। ১৪৬ বছর খ্রিষ্টান প-িতেরাই নিজেদের তত্ত্বাবধানে মাদ্রাসা পরিচালনা করল। আজও মোটামুটি সেই শিক্ষাব্যবস্থাই চলছে, সেই সিলেবাসই চলছে। সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা এই বিভাজনমূলক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সেই উপনিবেশ যুগ থেকেই জাতির মানসিকতাকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে, একে অপরের প্রতি বিদ্বেষী করে রাখা হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে এই অবস্থায় রেখে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না।
আমাদের প্রিয় জন্মভূমির সংকট মুহূর্তে দেশ রক্ষার কাজে এগিয়ে আসাকে আমরা দায়িত্ব মনে করছি। আমরা অন্তত একটা কথা বুঝি, দেশ যদি আক্রান্ত হয়, তবে আমাদের দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না। তখন আমাদের না থাকবে জাতি, না থাকবে ধর্ম। তাই দেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করাকে আমরা ধর্ম মনে করি। আমরা সর্বান্তকরণে চেষ্টা করে যাচ্ছি ষোল কোটি মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা জাগিয়ে তুলতে, ঈমানী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে। কিন্তু যে কাজটি সরকার করতে পারে তা কি একটি আন্দোলনের পক্ষে সম্ভব হয়? হয় না। তাই সরকারপ্রধান হিসাবে আপনার নিকট আমাদেরকে প্রস্তাবনা পেশ করতে হচ্ছে। আমরা পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে আবারও বলছি, আমাদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষকে মহাসংকট থেকে মুক্তির পথ আছে। এবং সেটা মহান আল্লাহর করুণার দান। সেই মুক্তি ইহকালেরও, পরকালেরও। পরাশক্তিগুলি পারমাণবিক যুদ্ধ বাঁধানোর জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। অথচ আমাদের এখনো দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে যেতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় পরাশক্তিগুলোর হাতে আগ্রাসন চালানোর কোনো অসিলা কেউ যেন তুলে দিতে না পারে সে বিষয়ের জাতির প্রত্যেকটি লোকের সতর্ক থাকা জরুরি। কেননা ইসলামবিদ্বেষ হোক আর জঙ্গিবাদ হোক কোনো একটা অসিলা পেলেই স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের উপর হামলে পড়া তাদের মজ্জাগত স্বভাব।
পরিশেষে আমাদের বক্তব্য এই যে, আমরা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা জনগণের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদসহ যাবতীয় হুমকি থেকে এ দেশের মাটিকে রক্ষা করতে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ কাজ করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও অযৌক্তিক হয়রানির শিকার হচ্ছি। দেশের আইন মান্য করে জাতির কল্যাণার্থে পরিচালিত আমাদের এই কার্যক্রমে কেউ যেন কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে আপনার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রত্যাশা করছি।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে এবং প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে হেফাজত করুন। আপনার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি।

বিনীত
(হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম)
এমাম, হেযবুত তওহীদ

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *