জাতীয়
নবযুগের সূচনালগ্নে সত্যনিষ্ঠ সকল মানুষকে স্বাগত জানাই -মেহেরপুরের জনসভায় হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
আমরা মানুষ (আশরাফুল মাখলুকাত), মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এক অসাধারণ সৃষ্টি। এই মানুষ তো পশুর মতো জীবন-যাপন করতে পারে না। পশু খায়, বংশবৃদ্ধি করে, মানুষও করে। পশু একটা পর্যায়ে এসে মরে যায়, মাটির সঙ্গে মিশে যায়। মানুষ যদি কেবল এইরকম একটা জীবন নির্বাহ করে, তাহলে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যর্থ হলো। তাই আমাকে ভাবতে হবে আমি কে? কোথা থেকে এসেছি? আমার গন্তব্য কোথায়? ভাবতে হবে আমার সমাজকে নিয়ে। কারণ, আমার সমাজ আমার দেহের মতো। আমার দেহের মধ্যে যদি কোন রোগ হয়, সঙ্গে সঙ্গে যদি ঔষধ না খাই তবে আমি মৃত্যুমুখে পতিত হবো। আমাকে ভাবতে হবে আমার রাষ্ট্রকে নিয়ে। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব না থাকলে আমার অস্তিত্ব থাকবে না। আমাকে ভাবতে হবে আমার এই বিশ্বকে নিয়ে। কারণ আল্লাহ এই পৃথিবীতে মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি বা খলিফা হিসাবে প্রেরণ করেছেন (সুরা বাকারা- ৩০)। কাজেই এই পৃথিবীর কোথায় কি হচ্ছে-না হচ্ছে, কে অশান্তির মধ্যে আছে, এই অশান্তির কারণ কী, এই অশান্তি দূর করায় আমার কী ভূমিকা রয়েছে- এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। যদি না ভাবি, স্বার্থপরের মতো আত্মকেন্দ্রিক জীবন-যাপন করলে আমি তো মানুষই থাকতে পারব না। আমার সকল এবাদত-বন্দেগী তো ব্যর্থ।
জঙ্গিবাদ কারা সৃষ্টি করল:
আজকে পৃথিবীময় যে জঙ্গিবাদী তা-ব চলছে এই জঙ্গিবাদী তা-ব কোত্থেকে শুরু হলো, কারা এটাকে পৃষ্ঠপোষণ করছে, কারা অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে, গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সমস্ত বিশ্বময় জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে- এই তথ্য আজকে জানতে হবে। কারণ যে সংবাদ এতদিন আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাকের সংবাদ ছিল আজকে সেই সংবাদ আমার পবিত্র জন্মভূমির। কাজেই এই জঙ্গিবাদ নিয়ে আজকে আমাদের প্রত্যেকটি জনগণকে সজাগ এবং সতর্ক হতে হবে। এই জঙ্গিবাদ আমার পবিত্র ধর্ম ইসলাম থেকে সৃষ্টি হয় নি। এ এক বিরাট ষড়যন্ত্রের অংশ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ান ব্লক ও পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন ব্লকের মধ্যে চলছিল শীতল যুদ্ধ। আফগানিস্তানের মাটিতে যখন সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ান ব্লক আসলো তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করার জন্য পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্লক যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ব্যবহার করলো। সমাজতন্ত্রকে কুফরি ব্যবস্থা আখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝানো হলো সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে তথা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুসলমানদের জন্য জেহাদ। সেখানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তৈরি করা হলো তালেবান, তাদেরকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, অর্থ দিয়ে সাহায্য করল যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা। সারা পৃথিবী থেকে মুসলিম তরুণদের রিক্রুট করা হলো আফগানিস্তানের মাটিতে। এখান থেকেই জঙ্গিবাদের উত্থান। এটা ছিল মূলত দুই পরাশক্তির ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। দুর্ভাগ্য, ব্যবহৃত হয়েছে মুসলিম ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মানুষ। লক্ষ লক্ষ তরুনের প্রাণ আফগানিস্তানের মাটিতে চলে গেছে। আল্লাহর উপকার হয় নি, রসুলের উপকার হয় নি। মানবজাতি উপকৃত হয় নি। সেখানে মানুষের ঈমান ভুল খাতে প্রবাহিত হয়েছে। সেখান থেকে শুরু হলো জঙ্গিবাদী তা-ব। আজ একটা একটা করে মুসলিম নামক দেশ আক্রান্ত হচ্ছে যা থেকে স্বার্থ হাসিল করছে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোই।
জঙ্গিবাদের ইসলাম প্রকৃত ইসলাম নয়:
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এখানে আমরা ৯০% মুসলমান। আমরা আল্লাহকে, রসুলকে বিশ্বাস করি, কেতাবকে বিশ্বাস করি। সম্প্রতি যে জংঙ্গি হামলাগুলো হলো এই হামলা শুধু আমার দেশের বিরুদ্ধে নয়, আমার প্রিয় ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধেও। এই পৈশাচিক কর্মকা- দেখে পৃথিবীময় ইসলাম সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। কয়েকদিন আগে বিবিসির একটি সংবাদে বলছে, এই হামলাগুলির পর দুনিয়াময় ইসলামের প্রতি বিদ্বেষভাব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার রসুলকে আক্রমণ করে কথা বলছে, আমার পবিত্র কোর’আনকে দোষারোপ করছে এবং দুনিয়াময় যারা আল্লাহকে পছন্দ করে না, মুসলমানদের ভাল চায় না, তারা এই অপবাদ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পেয়েছে যে- মুসলমান সন্ত্রাসী, ইসলাম একটা সন্ত্রাসের ধর্ম।
আমরা মো’মেন-মুসলিম-উম্মতে মোহাম্মদীরা মাথা উঁচু করে এই কথার প্রতিবাদ করতে পারি না। কেন পারি না? কিসের এত হীনম্মন্যতা আমাদের? আমরা পরিষ্কার বলব, তোমরা যা করছ এটা আল্লাহ-রাসুলের ইসলাম নয়। তোমাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকা- দেখে একথা চিন্তা করার কোনো কারণ নেই যে, আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস হারাবো, পবিত্র কোর’আনের প্রতি ঈমান হারাবো, আখেরী নবী হুজুরেপাক (সা.) এর প্রতি শ্রদ্ধা হারাবো। কক্ষনো নয়। কারণ আমরা জানি আল্লাহর পক্ষ থেকে আজ আমাদের কাছে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা চলে এসেছে।
শাস্ত্রে একটি কথা আছে, বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়। প্রকৃত ইসলামের ফল হয়েছিল মিষ্টি আর বর্তমানে যেটা চলছে তার ফল হয়েছে তিতা। মানুষ তা ঘৃণা করছে। আমরা বলতে চাই, তোমরা যারা ইসলামের নামে-ধর্মের নামে স্বার্থ উদ্ধার করছ, অর্থ রোজগার করছ, অপরাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করছ, যারা জঙ্গিবাদী কর্মকা- করে ইসলামের নামে চালিয়ে দিচ্ছ এটা আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়। এই কথা বলার জন্য হেযবুত তওহীদের আগমন হয়েছে।
আক্রান্ত হয় সাধারণ মানুষ, ভাবতে হবে সাধরণ মানুষকেই:
জঙ্গিবাদীরা ত্রাস সৃষ্টির জন্য সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে হত্যা করে জান্নাত পাওয়া যায় না, এই কথাটা আজকে বুঝতে হবে সবাইকে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করছেন, জনগণকে শান্তি দেয়ার জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন। কিন্তু আমাদের জনগণকে ভাবতে হবে এই সঙ্কট শুধু একা সরকারের সঙ্কট নয়। সমস্ত বিশ্বময় এই সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে। একটা বিরাট টার্গেট তাদের রয়েছে। কাজেই এই বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলা করতে হলে আমাদের জনগণকেও বুঝতে হবে এই সঙ্কটের গোড়া কোথায় এবং জনগণের কী দায়িত্ব রয়েছে? জনগণ যদি স্বার্থপর হয়, জনগণ যদি আত্মকেন্দ্রিক হয় তাহলে এই জনগণের সমাজ থাকে না। এই জনগণের রাষ্ট্র থাকে না। এটার প্রমাণ হচ্ছে সিরিয়া।
আমাদের জনগণকে কয়েকটি মৌলিক বিষয় জানতে হবে। কারণ যারা জঙ্গিবাদী কর্মকা- করছে তারা ইসলামের নামে এগুলি চালিয়ে দিচ্ছে। এতদিন বলা হতো মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি হচ্ছে। এখন এই ব্যাখ্যা আর থাকছে না। এখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও জঙ্গি হচ্ছে। এতদিন বলা হতো গরীব ঘরের সন্তানরা অর্থের লোভে জঙ্গি হচ্ছে। এখন আর এই ব্যাখ্যা টিকছে না। এখন দেখা যাচ্ছে ধনীর দুলালরা যাদের কোনো অর্থ-সম্পদের অভাব নেই তারাও জঙ্গি হচ্ছে। এর কারণ কী? আসল কারণ হচ্ছে মানুষের ঈমান, মানুষের ধর্মবিশ্বাস। সমস্ত আলেমরা একমত ছিলেন, আকিদা যদি ভুল হয় তাহলে ঈমানের কোন মূল্য নেই, ঈমানও ভুল খাতে প্রবাহিত হবে।
আকিদা-ঈমান-আমল:
তিনটি বিষয় আমাদেরকে বুঝতে হবে- ১. ইসলামের প্রকৃত আকিদা, সম্যক ধারণা, সামগ্রিক ধারণা। ২. ঈমান। ৩. আমল। আমরা মসজিদ নির্মাণ করছি, নামায পড়ছি, হজ্জ করছি, যাকাত দিচ্ছি। এগুলি সব আমল। আমলের পূর্বশর্ত হচ্ছে ঈমান। সেই ঈমান কী? “লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহ মোহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ (সা.)’-আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারও হুকুম মানবো না এবং মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল।” আল্লাহর হুকুম মানে হলো যাবতীয় অন্যায়কে প্রত্যাখ্যান করা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ কলেমার সহজ অর্থ হলো- যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে আমি ঐক্যবদ্ধ হবো। যারা এই কলেমার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হবে তারা হবেন মো’মেন। এই মো’মেনের নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত আল্লাহর কাছে কবুল হবে। ঈমানেরও আগে রয়েছে আকিদা। সেই আকিদা হলো সামগ্রিক ধারণা। ইসলাম কী, কেন, কীভাবে? আল্লাহর রসুল কেন এসেছেন? কেতাব নাযিলের কারণ কী? রসুল (সা.) একটি জাতি তৈরি করলেন কেন? এই জাতি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব কীভাবে পালন করবে এটা সামগ্রিক জানার নাম হচ্ছে আকিদা। সেই আকিদা ভুলের কারণে আজকে ঈমানদার মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করে নিয়ে ভুলখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে, জাতিবিনাশী কর্মকা-ে সেই ঈমান ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য সর্বপ্রথম ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করার জন্য, মানবজাতির কল্যাণে ব্যবহার করার জন্য তাদেরকে ইসলামের প্রকৃত আকিদা শিক্ষা দিতে হবে।
দেশ রক্ষায় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে:
এই মহাসত্য আমারও জানা ছিল না। আমিও পথহারা ছিলাম, গোমরাহ ছিলাম। টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মাদ বায়াজীদ খান পন্নী এই মহাসত্য আমাদেরকে শিক্ষা দিলেন। আজ আমাদের হৃদয় উম্মুক্ত, আমাদের দৃষ্টি প্রসারিত। আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায়, কোনটা ধমর্, কোনটা অধর্ম, কোনটা বৈধ, কোনটা অবৈধ। ইনশাল্লাহ আর আমাদের ঈমানকে কোন শক্তি হাইজ্যাক করে নিয়ে মানবতার ক্ষতি হয় এমন কর্মকা-ে লিপ্ত করাতে পারবে না। জনগণকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এখন জনগণকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা দিতে হবে।’ যদি শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহলে এই জঙ্গিরা আমাদের সমাজে আর জায়গা পাবে না। আর সা¤্রাজ্যবাদী পরাশক্তি আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ নিয়ে আর ষড়যন্ত্র করে সফল হতে পারবে না।
পরাশক্তিদের কোন ধর্ম নেই। আল্লাহ, এলি, গড, ইশ্বর তারা কোনোটাই মান্য করে না। তারা চায় শুধু অর্থ। তারা দুনিয়াতে নতুন নতুন যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করতে চায়। নতুন নতুন বোমা বানানো হচ্ছে। আমাদের যেমন কৃষি প্রধান অর্থনীতি তাদের হচ্ছে যুদ্ধ ভিত্তিক অর্থনীতি । এ কারণে তাদের নতুন নতুন যুদ্ধক্ষেত্র লাগবে। তা না হলে তাদের অর্থনীতি সচল থাকবে না। অতি কষ্ট করে, সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালে এ দেশের বীর জনতা এই ভূখ- স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছিলেন। আজ যদি পায়ের নিচের আমাদের এই মাটিটুকু না থাকে, আমাদের দাড়ানোর কোনো জায়গা থাকবে না। এই মহাসত্য আজ ১৬ কোটি বাঙালিকে হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতে হবে। সমস্ত বিশ্ব আজ টালমাটাল। সমস্ত বিশ্বে আজ যুদ্ধের দামামা বাজছে। এই মাটিতে আমি সেজদাহ করি। এই মাটিতে আমার পূর্ব পুরুষের রক্ত, অস্থি, মজ্জা মিশে আছে। এখানের ফসল খেয়ে আমি সমৃদ্ধ হয়েছি। এই মাটিকে রক্ষা করা এখন আমার ঈমানী দায়িত্ব, নাগরিক কর্তব্য।
যে কারণে আমরা আশান্বিত:
সিরিয়ার জনগণ তাদের দেশ রক্ষা করতে পারেনি। ইরাকের জনগণ দেশ রক্ষা করতে পারেনি। আফগানিস্থানের জনগণ দেশ রক্ষা করতে পারে নাই। ঐ দেশগুলির সঙ্গে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশের বিরাট একটা পার্থক্য রয়েছে। সেটা হলো- ওই মানুষগুলি সঠিক পথের দিশা পায়নি, মুক্তির পথ পায়নি, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো রাস্তা খুঁজে পায়নি। কিন্তু আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তির পথ পেয়ে গেছি। এই জমিনে, এই বাংলার মাটিতে সত্য এসে গেছে। হেদায়াহ এসে গেছে, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য এসে গেছে। কোনটা ইসলাম, কোনটা ইসলাম নয়, কোনটা হক, কোনটা বাতিল, কোনটা সওয়াবের কাজ, কোনটা গুনাহের কাজ- এখন আমাদের সামনে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। কাজেই এখন আমার দেশের সাধারণ মানুষকে সত্য-ন্যায় দ্বারা সঠিক পথের মাধ্যমে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে পারি ইনশাআল্লাহ আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের উপর কেউ একটা আঁচড় দিতে পারবে না।
আল্লাহকে নিয়ে রাজনীতি চলবে না:
জাতীয় সংকট নিয়ে কোন রাজনৈতিক খেলা চলে না। যারা অতীতে আল্লাহকে নিয়ে পলিটিক্স করেছে, আল্লাহ তাদের অপমানিত করে ছেড়েছেন। ধর্মকে নিয়ে পলিটিক্স চলে না। ধর্ম আগে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। বাস্তব জীবনে ধর্মের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। তবেই আল্লাহ এই মানুষকে শান্তি দিবেন। এই সংকট অত্যন্ত ভয়ংকর সংকট। এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আর একটি শর্ত আছে। সেটা হল এই, জাতির মধ্যে ঐক্য বিনষ্টকারী কোন ব্যবস্থা রাখা যাবে না। যে রাজনৈতিক সিস্টেম আমার জাতির মধ্যে ঐক্য নষ্ট করে, পারস্পরিক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে, শত্রুতার সৃষ্টি করে, যেই শিক্ষাব্যবস্থা জাতির মধ্যে ঐক্য নষ্ট করে, যেই সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা জাতির মানুষের মনের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি করে, যেই সমাজ ব্যবস্থা প্রতিবেশীর মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি করে সেই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কারণ, এখন জাতির সামনে ইস্পাতকঠিন একটা ঐক্যবদ্ধতার প্রয়োজন রয়েছে।
ধর্মের নামে যেমন স্বার্থ চলে না তেমনি রাজনীতির নামে কোন স্বার্থ চলে না। আল্লাহ যাকে শক্তি দিয়েছেন, মেধা দিয়েছেন, অর্থ দিয়েছেন তিনি রাজনীতি করবে মানবতার কল্যাণে। নিজের ঘরে খাবেন, নিজের টেলিফোন বিল ব্যবহার করবেন, নিজের টাকা দিয়ে গাড়ির তেল পোড়াবেন আর মানবতার কল্যাণে ভূমিকা রাখবেন। আপনি হবেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা। হাশরের দিন এ রাজনীতি আপনাকে জান্নাতে নিবে। বংশ পরম্পরায় আপনার জন্য মানুষ দোয়া করবে। আজ দুনিয়াময় চলছে স্বার্থের রাজনীতি। রাষ্ট্রগুলো নির্বাচনে শত শত কোটি ডলার খরচ করে। সেই টাকা জোগাড় করছে কীভাবে? বর্তমান রাজনীতিতে নীতি-নৈতিকতার কোনো হিসাব নেই, ন্যায়-অন্যায়ের কোনো বোধ নেই, সত্য-মিথ্যার কোন বোধ নেই। একটা মেয়রের জন্য, একটা চেয়ারম্যান পদের জন্য নিজের দলের লোকদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। এ রাজনীতির জন্য হাশরের দিন আল্লাহর কাছেও জবাবদিহি করতে হবে।
এখন বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের এই সঙ্কট ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। এখন এই যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে স্বার্থের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। সেই রাজনীতিকদের আমরা চাই যারা দেশের মানুষের জন্য, দেশের মাটির জন্য জীবন দিবেন। এখন থেকে ধর্মের নামে কোন স্বার্থ উদ্ধার চলবে না। আর রাজনীতির নামেও কোন স্বার্থ চলবে না। ধর্ম এবং রাজনীতি হবে মানবতার কল্যাণে। তবেই দেশ বাঁচবে, ধর্ম বাঁচবে, সমাজ বাঁচবে, সবকিছু বাঁচবে।
আমরা যুগসন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছি। একটা যুগের বিনাশ হবে আর একটা যুগের শুরু হবে। একটা নতুন যুগের সূচনা শুরু হয়ে গেছে। কাজেই এই নবযুগের সূচনালগ্নে আমি সত্যবাদী জনতাকে স্বাগত জানাই। শেষ কথা হচ্ছে, সবাইকে যাবতীয় অন্যায়ের বিরূদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে, সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরূদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, শুধু বাংলাকে নয় এই সত্য দিয়ে আমরা একদিন সমস্ত দুনিয়াকে লীড দেব ইনশাল্লাহ।