Connect with us

দেশজুড়ে

নড়াইলে ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে মধুমতি পাড়ের বাসিন্দারা

Published

on

Narail River Image..01

হিমেল মোল্যা, নড়াইল প্রতিনিধি : প্রতিবছরই বর্ষা মওসুমে মধুমতি নদী সংলগ্ন লোহাগড়া উপজেলার শিয়েরবর, মাকড়াইল, মঙ্গলহাটা, মহাজন, শালনগর, ধানাইড়, বকজুড়ি, রামকান্তপুর, আমডাঙ্গা, বারইপাড়া, এলাকা ভাঙ্গনের মুখে পড়ে নদীগর্ভে চলে যায়। বাড়িঘর, গাছপালা বাজারসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শত শত একর ফসলি জমি।

এবছর ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে মাকড়াইল প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালনা সরকারি সরকারি বিদ্যালয়, টি-করগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার প্রায় ২০ টি গ্রামের বাড়িঘরসহ শত শত একর ফসলি জমি। যে কোন সময়ে মধুমতী নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এলাকার কাঁচা-পাকা বাড়িসহ শত শত একর ফসলি জমি। গত দশ বছরে বিভিন্ন সময় ভাঙ্গন রোধে অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয় করলেও বেশির ভাগ টাকাই এলাকার কোন কাজে লাগেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ভাঙ্গন রোধে গত দশ বছরে কয়েক ধাপে মহাজন বাজারে নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ ১.৯৫০ কিঃ মিঃ ২২০৪ লক্ষ টাকা, ভোমবাগ নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ ০.১০০ কিঃ মিঃ ১২৭.৬৮ লক্ষ টাকা, চান্দেরচর নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ ১.৩৫০ কিঃ মিঃ ১০০৬.০০ লক্ষ টাকা, ইসলামপুর নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ ০.৫০০ কিঃ মিঃ ৫৪৭.০০ লক্ষ টাকা, ভুটিয়া বিল, বড়নাল, ছলিমপুর ও কোলা-বাসুখালী ০.৪৮০ কিঃ মিঃ ৭ কোটি টাকাসহ মোট অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়াও লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় দশটিরও বেশি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এলাকার নদী তীরের মানুষের অভিযোগ, এ সকল টাকা সরকার খরচ করলেও ঠিকাদারদের অনিয়মের কারণে নদী ভাঙ্গনরোধে তাদের কোন উপকারে আসেনি।

লোহাগড়া উপজেলার টি-করগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনের মাধ্যমে দেখা যায়, গত বছর বর্ষা মওসুমে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরিয়ে অন্যত্র ক্লাস করানো হলেও এবছরও বর্ষায় একই অবস্থা হবে জেনে ও ভাঙ্গনের মুখে এ বিদ্যালয়ে চলছে ক্লাসের কার্যক্রম। কোমলমতি শিশুরা প্রতিদিনই স্কুলে আসে আর নদীতীরে দাঁড়িয়ে দেখে তাদের স্কুল কবে গ্রাস করবে মধুমতি নদী। ইতোমধ্যে স্কুলের বাথরুম, টিউবওয়েল নদীতে চলে গেছে, চলে গেছে শিশুদের খেলার মাঠও। আর কয়েকদিন পরেই নদী ভেঙ্গে ফেলবে তাদের প্রিয় ক্লাসরুম আর অবশিষ্ট খেলার মাঠ। ভয়ে আর আতঙ্কে রয়েছেন অভিভাবক আর শিক্ষকেরা। কিন্তু তাদের কিছুই করার নেই। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করে বিদ্যালয় নিলাম করে নতুন জায়গায় সরানোর পরিকল্পনা করলেও কবে আবার নতুন ভবন এবং বিদ্যালয় চালু হবে তা জানেনা কোমলমতি শিশুরা ।

সরেজমিনে লোহাগড়া উপজেলার শিয়েরবর বাজার এলাকায় ভাঙ্গনের খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৫০ বছর ধরে ভাঙ্গছে মধুমতি নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা ব্রিটিশ আমলের শিয়েরবর বাজার। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এই বিশাল বাজার একটু একটু করে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে প্রায় শেষের পথে। গত বছর তীব্র ভাঙ্গনে নদী পাড়ের বাজারের ৩টি চান্দি, প্রায় ৩৫টি দোকান আর শতাধিক বসতবাড়ি সহ একটি রেষ্ট হাউস, পাঠাগার আর মসজিদ চলে গেছে মধুমতির কবলে। এলাকার শিশুদের জন্য একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও গত মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছরে মধুমতি নদীর শিয়েরবর অংশে এ বছর তীব্র ভাঙ্গন প্রবন অন্তত ১ কিলোমিটার এলাকার নারায়ণ চৌধুরী, কার্ত্তিক চৌধুরী, বাসুদেব চৌধুরী, কুতুব মোল্যা, আতিয়ার শেখ, তাঁরা আলী, আতর আলী সহ কমপক্ষে ১০০টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে আর বাকি সম্বলটুকু ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার জন্য পরিবারগুলোর লোকেরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। আর আশ্রয় খুঁজছেন নতুনভাবে বাঁচার জন্য। বছরের পর বছর ধরে নদী ভাঙ্গনের মধ্যে বাস করা এ সব মানুষেরা এবারের ভাঙ্গনের পরে আর নতুন কোন জায়গা খুঁজে না পেয়ে উ™£ান্তের ন্যয় ছুটে চলেছেন।

ভাঙ্গনপীড়িত এলাকার মানুষের আশা, নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হবে। এলাকাবাসীর অভিযোগ রাজনৈতিক দলের লোকেরা ভোট নেয় আর নদী ভাঙ্গন এলাকার নিপীড়িত মানুষের কোন খোঁজ নেয় না ।

দীর্ঘদিন ধরে মধুমতি নদীভাঙ্গন কবলিত শিয়েরবর বাজার ও এলাকা রক্ষায় নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোন আশার কথা শোনাতে না পেরে বললেন, প্রকল্প আর ফান্ড হলে এক বছরের মধ্যে ভাঙ্গন ঠেকানো যাবে। ততদিনে হয়ত শিয়েরবর বাজারের কোনই অস্তিত্ব থাকবে না আর নতুন করে উদ্বাস্তু হবে কয়েক হাজার মানুষ।
নড়াইল পওর উপ-বিভাগ, বাপাউবো উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অমৃত কুমার দাস বলেন, আমরা বিষয়টি উপর মহলে জানিয়েছি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে যথাসময়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *