জাতীয়
বাংলাদেশে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেল জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা-আইএমও আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এ দুটি সংস্থার পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ইউএনএইচসিআর-এর সহকারী হাইকমিশনার জর্জ ওকথ ওবো এবং আইএমও’র মোহাম্মদ আবিদকার মাহমুদ।
তারা জানান, গত ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত খুলে দেয়ায় নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণ যাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং এই সমস্যা মোকাবেলা করছে। তারা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার পাশপাশি খাদ্য ও নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন শুরু করেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
তারা বলেন, আফ্রিকা থেকে এক বছরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক লাখ শরণার্থী আশ্রয় গ্রহণ করেছে। যেখানে বাংলাদেশে মাত্র ১৫ দিনে চার লাখ। এসব শরণার্থীর খাদ্যের সংস্থান, বাসস্থানের ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা দেয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত মানবিকতার সঙ্গে এসব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এসব সমস্যা সমাধানে ইউএনএইচসিআর এবং আইএমও’র পক্ষ থেকে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। তারা বলেন, এরই মধ্যে ৭৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা নিশ্চিত করা গেছে। তবে এ বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য এই সহায়তা অপ্রতুল।
ইউএনএইচসিআর-এর সহকারী হাইকমিশনার জর্জ ওকথ ওবো বলেন, তিনি কুতুপালংয়ে এক রোহিঙ্গা নারী শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তার কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, ওই নারী ৫ সন্তান নিয়ে একনাগারে ৬ দিন হেঁটে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। যা অত্যন্ত হƒদয়বিদারক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পাশপাশি দেশের মানুষও অত্যন্ত মানবিক। তিনি বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে দেখেছেন সেখানে ব্যক্তিগতভাবে দেশের মানুষে খাদ্য, কাপড়সহ বিভিন্ন সহায়তা রোহিঙ্গাদের পৌঁছে দিচ্ছেন। যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের জন্য ইউএইচসিআরের পক্ষ থেকে তিনটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। প্রথমত, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। বিশেষ করে নিরাপদ পানি ও খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত তাদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা। যদিও এটা করা কঠিন হবে। কারণ, সেখানে অনেক ছিন্নমূল শিশু ও নারী রয়েছে। তৃতীয়ত, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেন নতুন করে কোনো জরুরি অবস্থার সৃষ্টি না হয়। বিশেষ করে, সেখানে বিশুদ্ধ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর কী ধরনের নিপীড়ন চলছে জানতে চাইলে তারা বলেন, সেখানে তারা গিয়েছিলেন। সরেজমিন সবকিছু অবলোকন করেছেন।
কিন্তু এখন তাদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে।