Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

বিশ্বপরিস্থিতি সম্পর্কে বেখবর জাতির ধ্বংস অনিবার্য -মসীহ উর রহমান

Published

on

ইংরেজিতে একটি কথা আছে, All depends on circumstance. সবকিছুই পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। পঞ্চাশ বছর আগে টাইপরাইটারের খুব মূল্য ছিল। আর আজ টাইপ রাইটার যন্ত্রটিই জাদুঘরে চলে গেছে। কথাটি বলার কারণ হচ্ছে ১৯৭১ সালে দেশের পরিস্থিতি ছিল একরকম। তখন জাতীয় নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। অবশেষে যুদ্ধ হয়ে লক্ষ লক্ষ বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে একটি মানচিত্র আমরা লাভ করেছি। এর পর ৪৬ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, পদ্মা মেঘনায় বহু পানি গড়িয়ে গেছে, বহু বার সূর্য উদিত হয়েছে অস্ত গেছে। আমাদের দেশের ও বিশ্বের পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আমাদের দেশে অনেক উন্নয়ন কর্মকা- হয়েছে, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট হয়েছে, বৈদেশিক রেমিট্যান্স বেড়েছে। যে গ্রামের মানুষ ঢাকা শহর চিনত না তারা এখন ইংল্যান্ড আমেরিকা যায়। কিন্তু আজকে জাতিকে একটি জিনিস বুঝতে হবে, বর্তমানে তাদের মূল সমস্যা কি সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। সারা বিশ্বে যুদ্ধের দামামা বাজছে। পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো দেশে দেশে সৈন্য মোতায়েন করে চলেছে, আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিষ্ঠার জন্য একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। তারা পারমণাবিক বোমা পরীক্ষা করছে, মুসলিম প্রধান দেশগুলোয় বোমা নিক্ষেপ করে শক্তি দেখাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আমাদের জাতিকেও বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হবে। আজকে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের উন্মাদনায় লিপ্ত করে রাখা হয়েছে। ক্রিকেট উন্মাদনা, বিভিন্ন সংস্কৃতি পালনের কথা বলে সেদিকে তাদেরকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখে মূল সঙ্কট থেকে জাতির দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা স্বীকার করি যে বিনোদনের প্রয়োজন আছে, কিন্তু আনন্দ, উৎসব, সংস্কৃতিচর্চা আর বিনোদনই জীবন নয়, ওগুলো জীবনের অনুষঙ্গমাত্র। ওসবের মধ্যে ডুবে থাকা চলবে না, বিশ্ব কোন তালে চলছে, আমাদেরকে আনন্দ উপভোগে ভুলিয়ে রেখে কেউ দাস বানিয়ে রাখছে কিনা, দেশকে দখল করে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে কিনা সেটাও আমাদের প্রত্যেকটি মানুষকে ভাবতে হবে। ওটা শুধু সরকার ভাববে আর আমি মজা করে বেড়াব এই নীতির উপর কোনো ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। আমাদের দেশে যে ঔপনিবেশিক যুগের রাজনীতির চর্চা চলছে তাদের ভাবে মনে হয় যেন এটা কোনো ঐশী নিদের্শনা যে একটি সরকার থাকবে, একটি বিরোধী দল থাকবে। বিরোধী দল সরকারের সবকিছুর বিরুদ্ধে আন্দোলন করার মওকা খুঁজবে, দিনরাত সরকারের পি-ি চটকাবে, আর সরকারও সুযোগ পেলেই বিরোধীপক্ষের মু-ুপাত করবে। মামলা হামলা করে দেশছাড়া করে ছাড়বে নয় তো হাজতে পুরে রাখবে। মারামারি, খুনোখুনি করতেই হবে, না করলে আমরা নরকে যাবো। এর ফল হয়েছে এই যে জাতীয় পর্যায় থেকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্র চলছে এই হানাহানির রাজনীতি।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, যেই ধর্মগুলো মানুষকে শান্তি দিতে পারত, যে ধর্মগুলো এসেছে মানুষের কল্যাণে সেগুলো এখন ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে বন্দী হয়ে গেছে। যে ধর্মগুলো মানুষকে উদারতা, মানবতা, পরোপকার শিখিয়েছে, ঐক্যহীনকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, শত্রুকে ভাই বানিয়েছে সেই ধর্মগুলো এখন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে দূষিত। যারা এই ধর্মগুলোর ধারক বাহক তারাই আজ একে অপরের শত্রু, তারাই হাজারো মাজহাব ফেরকায় বিভক্ত। যারা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত তারাও আজকে বিভক্ত। ডাক্তার, ছাত্র, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী উকিল কোথাও কোনো ঐক্যের সুর নেই, কেবল বিভাজন আর হিংসা। তারা রীতিমত মারামারি করেন আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুরি মারামারি, রাজনৈতিক হানাহানিতে লিপ্ত। আগে গোত্রভিত্তিক সমাজে মানুষের নিরাপত্তার জন্য গোত্রীয় বন্ধন খুব দৃঢ় ছিল। আজ সেটার লেশ মাত্রও নেই। যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। বাবা-মায়ের সম্মান নাই, গুরুজনদের মান্য করার তো প্রশ্নই আসে না। এখন প্রতিটি মানুষ বিচ্ছিন্ন। কেউ কারো খবর রাখে না, দেশ জাতি রসাতলে গেলেও তাদের কোনো ভাবান্তর নেই। তারা আছে রুজি রোজগার নিয়ে, আনন্দ ফুর্তি নিয়ে। মিডিয়া আছে অন্য বিষয় নিয়ে। তারা বাণিজ্য করছে আর জনগণ তাদের কাস্টমার। মিডিয়া জাতীয় সংকট নিয়ে আলোচনা করছে না, তারা ছোটখাট বিষয়গুলোকে অনেক বড় করে দেখায়। যারা গ্রামে থাকে তারা রেডিও টেলিভিশন থেকে কী সংবাদ পাচ্ছে। সেখানে নিশ্চয়ই জাতীয় লক্ষ্য নিয়ে বেশি কথা হয় না, আন্তর্জাতিক সংকট নিয়ে বেশি কথা হয় না। সেখানে হয় বিনোদন আর বিজ্ঞাপন। ফলে আজ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে সবাই বেখবর। রাজনৈতিক নেতারা স্বার্থ নিয়ে হানাহানিতে লিপ্ত। ধর্মীয় নেতারা দুই টাকার জন্য, মসজিদ মাদ্রাসা টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যায়ের সাথে আপস করে। এখন জাতির উপর বড় কোনো আঘাত আসলে তো কিছুই করা সম্ভব হবে না, সরকারি বাহিনীগুলো তো বালির বাঁধের মত ভেসে যাবে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ যতগুলো দেশ আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তাদের কি বাহিনী কম ছিল? শক্তি সামর্থ্য কম ছিল? না। আমাদের চেয়ে বহুগুণ বেশিই ছিল কিন্তু সা¤্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে তারা দেশ রক্ষা করতে পারে নি। কারণ তাদের জনগণ ছিল আমাদের মতই বেখবর। ঢেউ আসবেই, বিশ্বপরিস্থিতি খুবই অস্থির। এখন সুনামি হবেই। আমরা কি সেটা সামাল দেওয়ার জন্য চেষ্টা করব নাকি পরিণতি মেনে নিয়ে মরে যাবো সেটা ভাবার সময় এখনও শেষ হয়ে যায় নি। এখনও আমরা যদি সামগ্রিক জীবনে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, ন্যায়কে ধারণ করি তাহলে সেই আঘাত, সেই ঢেউ আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব ইনশাল্লাহ।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ
যোগাযোগ: ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫, ০১৭৮২১৮৮২৩৭, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩ । bajroshakti@gmail.com

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *