Connect with us

দেশজুড়ে

বেনাপোলে মানবপাচারকারিদের খপ্পরে পড়ে ১৩ যুবক নিখোঁজ

Published

on

Capture 22কামাল হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি :
বেনাপোলে মানব পাচারকারিরেদর খপ্পরে পড়ে আড়াই বছরে ১৩ যুবক নিখোঁজ রয়েছে। বারিপোতা গ্রামের জামাল হোসেন (২৮) অভাব অনটনের সংসারে দালালের খপ্পরে পড়ে। চুক্তি হয় প্রাথমিক ভাবে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে বাকি টাকা বিদেশ যেয়ে চাকরি করে শোধ করতে হবে।এ সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করে জামাল হোসেন।এভাবেই প্রতিবেশী মানব পাচারকারী দালাল হামিদ মোড়লের ছেলে চান্দুর ফাঁদে পা দেন তিনি।

দালালের সঙ্গে চুক্তি শেষে বাড়িতে জানান তিনি বিদেশ যাবেন। কিন্তু বাবা, মা ও স্ত্রী অবৈধ এ বিদেশ যাত্রার বাঁধা দেন। তাই হঠাৎ করে একদিন কাউকে না জানিয়ে দালালের হাত ধরে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন।এদিকে,পরিবারের লোকজন তাকে খোজ করতে থাকে।হঠাৎ ৫দিন পর তার চাচার কাছে ফোন করে জানাই সে টেকনাফে। কিছুক্ষণ পর জাহাজে করে মালয়েশিয়া রওনা হবে।বিদেশ গিয়ে অনেক টাকা পাঠাবেন।এটাই ছিল তার শেষ কথা।

এরপর আড়াই বছর পার হয়ে গেলেও পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। পরিবারের লোকজন আশায় বুক বেঁধেছেন, একদিন বাড়ি ফিরে আসবে।শুধু জামাল নয় একই দিনে ওই গ্রামের আরো চার যুবক মনসুর আলীর ছেলে মজিবর (২৮),আইয়ুব আলীর ছেলে মহর আলী (২৬) ও মকবুলের ছেলে সুমন (২৮) মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে।

একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী বেড়ি নারায়ণপুরের মৃত সমসের মোড়লের ছেলে তাহাজ্জত হোসেন তানা (২৯), আব্দুস ছাত্তারের ছেলে আব্দুল কাদের (৩০), পান্তা পাড়া গ্রামের খালেকের ছেলে ইকবাল (২৬), বলিদাহ গ্রামের জাহান আলীর ছেলে মোকলেসুর (৩২), চান্দুরী ঘোপ গ্রামের মোস্তফার ছেলে সেলিম (২৫), ওলিয়ারের ছেলে আব্দুল্লাহ্-আল মামুন (৩৩), বেনাপোলের খড়িডাঙ্গা গ্রামের নজরুলের ছেলে শাহিন (২৬), গয়ড়া গ্রামের ছিদ্দিক মিস্ত্রির ছেলে নজরুল (৩১) ও ঘিবা গ্রামের মতিয়ারের ছেলে আলামিন (৩৬) নিখোঁজ রয়েছেন।

নিখোঁজ তাহাজ্জত হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে কেউ নেই।বাড়ির পাশে রাস্তায় তার তিন ছেলে-মেয়ে খেলা করছে। মা তাদের বাড়িতে রেখে মাঠে দিন মুজুরির কাজ করতে গেছে।কিছুক্ষণ পর ছুটে আসেন তাহাজ্জত হোসেনের স্ত্রী ও বিধবা মা। মা লতিফুন্নেছা হাউ মাউ করে কেঁদে বলেন, আমার ছেলেকে ফেরত এনে দেও। দুই বছর ধরে আমার ঠিক মত খাওয়া-ঘুম নেই। কে দেখবে আমাদের? বউমা দিন মজুরের কাজ করে যা আয় করে তা দিয়ে সংসার চলে না। ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনাও সেই থেকে বন্ধ রয়েছে।

তাহাজ্জত হোসেনের পরিবারের মত নিখোঁজ প্রতিটি পরিবারে এখন কান্না।সংসারের উপার্জনক্ষম মানুষ নিখোঁজ হওয়ায় পর অভাবের তাড়নায় পথে বসেছে পরিবারগুলো। বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি পরিবারে সন্তানদের খেলাপড়া। এ পর্যন্ত কেউ দাঁড়ায়নি এ সব অসহায় পরিবারগুলোর পাশে।স্বজনরা দালালের কাছে নিখোঁজদের সন্ধান নিতে গিয়ে হুমকির শিকার হয়েছেন।ভয়ে অসহায় পরিবারগুলো এতদিন মুখ বন্ধ করে ছিল।বিদেশে মানবপাচার নিয়ে দেশ-বিদেশে সংবাদ প্রকাশিত হলে সাহস পেয়ে সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে মুখ খোলে এসব পরিবার।

শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মনজু বলেন,পাচার প্রতিরোধে আমরা বিভিন্ন সময় এলাকাবাসীকে সচেতন করে আসছি। কিন্তু তার পরেও এসব যুবকরা দালালের মিথ্যা প্রলোভনে এ ঘটনা ঘটেছে। নিখোঁজ যুবকদের সন্ধান পেতে আমরা বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করছি।

এ ব্যাপারে শার্শা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক জানান, নিখোঁজ পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বাদী হয়ে ২৮ মে সাত জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১৫ জনের নামে মামলা করেছে।এ পর্যন্ত চান্দু ও শফিকুল ইসলাম নামে দুই মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া, তবি নামে এক মানব পাচারকারীর বাড়ি থেকে ১৩টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *