Connect with us

জাতীয়

রাজধানীর মুগদায় হেযবুত তওহীদের জনসভা; যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান

Published

on

রাজধানীর মুগদায় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বিরোধী জনসায় বক্তব্য রাখছেন হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

বাংলাদেশেরপত্র ডেস্ক: রাজধানীর মুগদায় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মুগদায় অবস্থিত মানিকনগর মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আয়োজন করে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ। এই আন্দোলনটি গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সবকটি জেলা, থানা এমনকি গ্রামে-গঞ্জে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা জনসাধারণের মধ্যে তুলে ধরছে। জঙ্গিবাদকে ইস্যু করে যখন একটির পর একটি মুসলিম দেশ ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশকে নিয়েও একই ষড়যন্ত্র চলছে তখন হেযবুত তওহীদের সদস্যগণ দেশকে নিরাপদ রাখতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতাসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ষোল কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের অর্থ খরচ করে নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে এই জনসভার আয়োজন করে বলে আন্দোলনটি জানিয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক বজ্রশক্তির প্রকাশক ও সম্পাদক এস. এম. সামসুল হুদা, হেযবুত তওহীদের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোশনের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দরুল হোদাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সভাপতি আলী হোসেন। অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়, বৃষ্টি শুরু হয় কিন্তু তখনও অতিথি ও দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে পিনপতন নীরবতা ও শৃঙ্খলা দেখা যায়। অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত বিশ্বের বহু দেশ। বিকৃত ধর্মীয় আদর্শ থেকে উদ্ভূত এই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে বিশ্বময় শক্তি প্রয়োগের পন্থা বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন সকলেই স্বীকার করছেন যে, শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি ধর্মীয় দলিল ভিত্তিক নির্ভুল আদর্শ দিয়ে জঙ্গিবাদ যে ভুল পথ তা প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মানুষের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে দেশে সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটাতেই থাকবে। ফলে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকেও ইরাক-সিরিয়ার মতো করুণ পরিণতি বরণ করতে হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক আদর্শের। অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন এবং এই সঠিক আদর্শটি হেযবুত তওহীদের কাছে আছে বলেও বক্তৃতায় উঠে আসে।
প্রধান বক্তা তার বক্তব্যে বলেন, “সমগ্র মানবজাতি একজাতি, বাংলাদেশে মারা গেলে সে যেমন আমার ভাই, আফ্রিকাতে না খেয়ে মারা গেলে সেও আমার ভাই, সিরিয়া-ইরাকে বোমার আঘাতে মারা গেলে সে আমার ভাই, ভারতে ধর্ষিতা হলে সেও আমার বোন, আমেরিকাতে মারা গেলেও সে আমার ভাই। এই কথাটা না বোঝার কারণেই আমরা একজন অন্যজনকে বোমা মেরে হত্যা করছি, নদীতে বাধ দিয়ে এক দেশ অন্য দেশের মানুষকে কষ্টে ফেলে দিচ্ছি। আমরা স্বার্থপর হয়ে গেছি। আমরা এতটাই স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছি যে একে অপরকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য ১৬ হাজার এটম বোমা তৈরি করে রেখেছি। মানবজাতির বর্তমান এই অবস্থা নিয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে।” তিনি বলেন, “ভাবতে হবে নিজেকে নিয়ে, পরিবারকে নিয়ে, সমাজ নিয়ে, দেশ নিয়ে, মুসলিম হিসাবে মুসলিম জাতিকে নিয়ে আর মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতিকে নিয়ে। বর্তমান পৃথিবীতে ১৬০ কোটি মুসলমান, যে জাতিকে আল্লাহ বলেছেন শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে তাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে সেই জাতির আজ প্রকৃত অবস্থা কী এবং কেন তাদের এই অবস্থা সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের আল্লাহ এক, রসুল এক, কোর’আন এক, উম্মতে মোহাম্মদী একজাতি ছিল কিন্তু আজ মুসিলম নামক জাতিটা হাজার হাজার মত-পথে বিভক্ত হয়ে গেছে। এখন যদি তাদের পূর্ব গৌরব ফিরে পেতে হয় তাহলে তাদেরকে এক কলেমার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
তিনি জঙ্গিবাদ সম্পর্কে বলেন, “আমাদের এই প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশ যে জঙ্গিবাদী সঙ্কটে পড়েছে তা থেকে উদ্ধারের জন্য এখন একটি আদর্শ লাগবে। এই আদর্শের অভাবেই ইরাক-সিরিয়া-আফগানিস্তানসহ একটা পর একটা মুসিলম দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু মহান আল্লাহ অতি দয়া করে সেই আদর্শ হেযবুত তওহীদকে দান করেছেন। হেযবুত তওহীদ সেই আদর্শ মানুষের সামনে উপস্থাপন করছে। মানুষ যদি এটা গ্রহণ করে নেয় তবে তারা রক্ষা পাবে।”
তিনি ইসলামের মৌলিক বিষয় আকীদা, ঈমান ও আমল সম্পর্কে অত্যন্ত সহজ ব্যাখ্যা প্রদান করে বলেন, “আজ আমরা নামাজ পড়ছি, রোজা করছি, হজ্ব করছি এগুলো হলো আমল, কিন্তু তার আগে আমাদেরকে ঈমান আনতে হবে। ঈমান আনার অর্থ হলো- কলেমা তওহীদ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানি না, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল’। এখানে আল্লাহর হুকুম বলতে যাবতীয় ন্যায়। অর্থাৎ আমাদেরকে আগে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যায় যেই করুক তার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। আর আকীদা হলো- ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও সম্মক ধারণা। অর্থাৎ কেন আল্লাহ সত্যদীন দিলেন, কেন আল্লাহ নবী-রসুল পাঠালেন ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা।”

তিনি দেশবাসীর প্রতি ঐক্যবদ্ধ হবার আহŸান করে বলেন, “ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রচারিত ধর্মের অপব্যাখ্যা থেকে বের হয়ে আমাদের ধর্মের প্রকৃত চেতনা দ্বারা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রকৃত মো’মেন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর হুকুমের পরিপন্থী অর্থাৎ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার জীবন-সম্পদকে মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করেন। বর্তমানে আমাদের দেশে যে ষড়যন্ত্র চলছে, দেশ যে সঙ্কটে পতিত হয়েছে তা থেকে দেশকে বাঁচানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব ও সামাজিক কর্তব্য।”
মিথ্যাচার চালিয়ে তার নিজ পৈত্রিক বাড়িসহ অন্যান্য স্থানে ধর্মব্যবসায়ীদের উসকানিতে জঙ্গিভাবাপন্ন ধর্মান্ধ মানুষগুলো কীভাবে হামলা করে তিনি সে বিষয়ও তুলে ধরেন এবং সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে কারো দ্বারা প্ররোচিত না হয়ে নিজেই যাচাই-বাছাই করার আহŸান জানান।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *