Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

জাতিসংঘ ও মানবাধিকার আর কত অরণ্যে রোদন?

Published

on

রুফায়দাহ পন্নী:
প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী বিশ্বের সকল দেশে পালিত হয় বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। সার্বজনীন মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ তারিখকে নির্ধারণ করা হয়। বলা হয়ে থাকে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা ছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নবরূপে সৃষ্ট জাতিসংঘের অন্যতম বৃহৎ অর্জন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম নেওয়া জাতিপুঞ্জ বা লীগ অফ নেশান ২৭ বছর টিকে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হওয়ামাত্রই এটা প্রমাণিত হয়ে যায় যে জাতিপুঞ্জ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ এর স্থলাভিষিক্ত হয়। দুটো বিশ্বযুদ্ধে প্রায় এগারো কোটি বনি আদম নিহত হওয়ার পর পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে মধ্যস্থতার দায়িত্ব নিয়ে যে জাতিসংঘ গঠিত হয়েছিল, ৭১ বছর পরে এসে আমাদের সেই জাতিসংঘের সফলতা ব্যর্থতার পাল্লাটা মূল্যায়ন করতে হবে, কেননা অতীতের মূল্যায়ন ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করে। আমরা কতটুকু মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলাম সেটা নিয়ে এখন কথা বলতে হবে, আত্মসমালোচনা করতে হবে।
রেনেসাঁ কেন হয়েছিল?
এই যে আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা, এর মধ্যে আমরা কীভাবে প্রবেশ করলাম সেই প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপটের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা মুহূর্তে জরুরি। আমরা ধর্মকে জাতীয় জীবন থেকে নির্বাসন দিয়ে ধর্মহীন একটি বস্তুবাদী সভ্যতা যাকে ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশান বলা হচ্ছে, তার জন্ম দিয়েছি। মানুষের চিন্তা চেতনায় বিপুল জাগরণের মাধ্যমে ঘটেছিল ইউরোপীয় রেনেসাঁ। এর সূত্রপাত হলো পশ্চিম জার্মানিতে, তারপর তা ফ্রান্স, ইতালি হয়ে পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ল। একে বলা হলো এনলাইটমেন্ট বা আলোকময়তা। আলোকিত মানুষের ক্লাব হলো বহু রকমের। এই যে আলোর দিকে চলা, এখানে অন্ধকার বলতে কাকে বোঝানো হচ্ছে? সেটা হচ্ছে ধর্মীয় শাসন, জাতীয় জীবনে গির্জার কর্তৃত্ব, ধর্মের নামে যাবতীয় অন্ধত্ব, যুক্তিহীনতা, কূপম-ূকতা, পরকালের স্থবির চিন্তা ও সওয়াবভিত্তিক কর্মকাণ্ড। এসবের বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং বিকল্প চিন্তা করতে শুরু করেছিল। প্রতিনিধি হিসাবে মানুষের মধ্যেও প্রচণ্ড সৃষ্টিশীলতা আল্লাহ দিয়েছেন। মানুষ যখন চিন্তা করতে দল বেঁধে নামল তখন বহু সাহিত্যিকের জন্ম হলো, বহু দার্শনিকের জন্ম হলো, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, বহু ভাস্কর, সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পীর জন্ম হলো। তারা সবাই যার যার ভাবে ও ভাষায় বলতে লাগলেন, ধর্ম মানুষকে কূপম-ূক করে, প্রাচীন ধারণার অন্ধ অনুকরণ শেখায়। আসলে সেটা ছিল খ্রিষ্ট ধর্মের ব্যর্থতার ফসল, রসুলাল্লাহর (সা.) মাধ্যমে মুসলিম শাসনের অর্ধ পৃথিবীতে রেনেসাঁ ঘটে গিয়েছিল তার বহু শতাব্দী আগে, এবং তখন বিশ্বের সবচেয়ে সভ্য জাতি, জ্ঞানে বিজ্ঞানে অগ্রসর জাতি ছিল মুসলিমরা। যাহোক, প্রযুক্তি ও বস্তুবাদের উপর ভর করা এই ইউরোপীয় সভ্যতা বিকশিত হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল। প্রতিটি সভ্যতারই একটি উষালগ্ন থাকে, এক সময় তার পঁচন হয়, একসময় পতন হয়। যখন তা মানুষকে শান্তি দিতে পারে না, মানবাধিকার দিতে পারে না তখন তার পতন হয়। কোনো শক্তি দিয়েই তার মৃত্যুকে ফেরানো যায় না। মুসলিমদের পতন হলো, ইউরোপের উত্থান হলো।
এ সভ্যতা কি শান্তি দিতে পারল?
এখন আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে চলমান এই পশ্চিমা সভ্যতা এখন তার জীবনকালের কোন পর্যায় অতিক্রম করছে। সাফল্য ব্যর্থতা যাচাইয়ের প্রথম শর্তই হচ্ছে সেটা মানুষকে শান্তি দিতে পারছে কিনা। হ্যাঁ প্রযুক্তিগত উন্নতি অনেকটাই দিতে পেরেছে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু দুই দুইটা বিশ^যুদ্ধ ঘটে যাওয়ার পর থেকে এ সভ্যতা শান্তি ও মানবাধিকারের প্রশ্নে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সারা পৃথিবীতে গত ৭০ বছরে শতাধিক রক্তক্ষয়ী আগ্রাসী যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, গণহত্যা ইত্যাদি হয়ে গেছে। মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে, মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। সেই কোরিয়ার যুদ্ধ থেকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ, রাশিয়া আফগানিস্তানের যুদ্ধ, ফিলিস্তিন যুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ থেকে আজকের ইরাক, লিবিয়া, ইয়ামেন, আইএস আর সিরিয়ার যুদ্ধ, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে হওয়া গৃহযুদ্ধ, এই সবকিছুর নেট ফল কী? মায়ানমারে তো সোজা বাংলায় একটি জনগোষ্ঠীর সব নারী পুরুষকে হত্যা করে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ত্রিশ হাজার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, নারীদেরকে গণধর্ষণ করা হচ্ছে, শিশুদের পর্যন্ত টুকরো টুকরো করে ফেলা হচ্ছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে। নারী শিশুর লাশ ভেসে বেড়াচ্ছে পানিতে। রাষ্ট্রনীতির জালে বন্দী মানবতা, রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাগুলোকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার যে মানবিক দায়বদ্ধতা সেটা পূরণ করতে আমাদের আজকের যে অপারগতা তার দায় এই সভ্যতাকেই নিতে হবে। আমাদের দেশেও চলছে গুম খুন। হঠাৎ একজন গায়েব হয়ে গেল, কয়েকদিন পর ভিন্ন কোনো জায়গায় ধানক্ষেতে তার লাশ পাওয়া গেল। জাতিসংঘ করে, মানবাধিকার সংস্থা করে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মালিক হয়েও মানুষের উপর মানুষের এই পাশবিক বর্বর নির্যাতন বন্ধ করা যাচ্ছে না। আধুনিক এই সভ্যতা এমন কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে পারে নি যা দিয়ে মানুষের পাশবিকতাকে প্রশমিত করা যায়। রাষ্ট্র ও মানুষকে মানবিক করা যায়।
জাতিসংঘের ব্যর্থতা:
সমস্ত কিছু মেলালে গত ৭০ বছরে মানবধিকার শুধু লঙ্ঘন হয় নি, মানবজাতিকে বিনাশের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে এ কথিত সভ্যতা। এ সভ্যতা এখন আর মানুষকে বাঁচাতে পারবে না বা মানবধিকার রক্ষা করতে পারবে না, মানুষকে অস্তিত্বের সংকট থেকে আর উদ্ধার করতে পারবে না। এটা তাদের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সমস্ত অন্যায় নিয়মকানুন মেনে বৈধভাবে করা হচ্ছে। সুতরাং মানুষের আর রক্ষা নেই। এখন পরিষ্কার সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে, জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়েছে, যেভাবে একদিন জাতিপুঞ্জ ব্যর্থ হয়েছিল। জাতিসংঘ ইরাক অভিযান থেকে আমেরিকাকে শত চেষ্টা করেও থামাতে পারে নি, আফগান যুদ্ধ থামাতে পারে নি, গাদ্দাফি ও তার দেশকে রক্ষা করতে পারে নি, প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি সিরিয়াকে ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে নি। জাতিসংঘ ১৬০ কোটি মুসলমানের সম্মান রক্ষা করতে পারে নাই, জাতিসংঘ ফিলিস্তিনীদের রক্ষা করতে পারে নি, বসনিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষকে গণহত্যার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে নি, দুই লক্ষ মুসলিম নারীকে ধর্ষিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে নি। তারা পেরেছে কিছু উদ্বাস্তু শিবিরে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করতে। তারা শুধু সফল হয়েছে দুর্বল দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর উপর খবরদারিতে আর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর তাবেদারিতে। এ সভ্যতা পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ মাত্র ৬২ জন মানুষের কাছে পুঞ্জিভূত করেছে, বিশ্বকে শোষণ করে আজকে পশ্চিমা উন্নত দেশগুলো আমাদেরকে পাঁচ-দশ টাকা ঋণ দেয়, ভিক্ষা দেয় আর আমরা ভিক্ষা নিয়ে জীবন ধারণ করি।
আমাদেরকে বুঝতে হবে পশ্চিমাদের কাছে থেকে আমাদের আর শেখার কিছু নেই, পাওয়ার কিছু নেই। যা হওয়ার শেষ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো আত্মস্বীকৃত বর্ণবাদী, নারীবিদ্বেষী, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী, নারী নিগ্রহকারী, কর ফাঁকি দিয়ে অর্থ তসরুপকারী যদি বিশে^র পরাশক্তিধর রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হতে পারে তাহলে আর মানবাধিকারের ফাঁকাবুলি দিয়ে লাভ নেই।
মানুষের পরাজয়ের পর আরেকটি রেনেসাঁর অপরিহার্যতা:
এখন আমাদেরকে একটি নতুন রেনেসাঁ, নতুন বিপ্লব, নতুন এক গণজাগরণের সৃষ্টি করতে হবে। এই চলমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে মানুষ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না, কথা বলার চিন্তাও করছে না, সমস্ত অন্যায়কে মানুষ মুখ বুজে মেনে নিয়ে স্বার্থপরের মতো নিজেকে নিয়ে জীবনযাপন করে যাচ্ছে – এখানেই মানুষের পরাজয় হয়ে গেছে। মানুষ অন্যায় হতে দিচ্ছে নির্দ্বিধায়, অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করা হচ্ছে, ধর্মের অজুহাতে অন্যায়-অবিচার, শোষণ করা হচ্ছে। মানুষ নিশ্চুপ। সমাজের মানুষগুলি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলে না, তারা আসলে ভিতরে বাইরে মরে গেছে। তাদের ধ্বংস কেবল সময়ের ব্যাপার। এটাই হচ্ছে রেনেসাঁ সৃষ্টির পটভূমি। এই স্থবিরতা, পাশ্চাত্যের প্রতি এই অন্ধত্বের বিরুদ্ধে, এই অসত্যকে আলিঙ্গন করার ভয়াবাহ অমানবকিতার বিরুদ্ধে এখন রেনেসাঁ করতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। সেজন্য আদর্শ লাগবে সেটাও এসে গেছে। সেটা আমরা তুলে ধরছি।
স্রষ্টার কাছে জবাবদিহিতা
প্রথমত মানুষকে অনুধাবন করতে হবে যে সে কেবল দেহসর্বস্ব নয়, তার আত্মাও আছে। তার ইহকাল যেমন সত্য, পরকালও সত্য। তার একজন স্রষ্টা আছে যার কাছে তার জবাবদিহি করতে হবে। শুধু কঠিন আইন করে লাভ নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প আইনের ফাঁক দিয়ে শত শত কোটি ডলারের মালিক হয়েছেন, বৈধভাবে হয়েছে। অর্থাৎ আইনের চোখকে ফাঁকি দিতে পারলেই মানুষ দুরাচার প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে। তার কাছে নীতি-নৈতিকতার কথা হাস্যকর, অচল। যখন কৃতকর্মের জন্য স্রষ্টার কাছে জবাবদিহি করার বিশ্বাস হারিয়ে গেছে তখনই নৈতিকতার সীমারেখা মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে গেছে। যখন এই চেতনা সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে তখন মানুষ মরে গেছে। এখন ধর্ম বন্দী হয়ে গেছে ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে, রাজনীতি হয়ে গেছে স্বার্থের হাতিয়ার। আর শিক্ষা হয়ে গেছে পণ্য। প্রযুক্তিগত উন্নতি যথেষ্ট হয়েছে, দেড়শ তলা বিল্ডিং হয়েছে, তার উপরে সুইমিংপুল হয়েছে, কাঁচা রাস্তা ফ্লাইওভার হয়েছে। কিন্তু আমরা মানুষ হিসাবে আমরা পচে গেছি। এই পচন চলমান সভ্যতারই পরিণাম, এটা আমাদের উচ্চকণ্ঠে বলতে হবে, নয়তো নবজাগরণ সম্ভব হবে না।
মেকি কর্মসূচি আর নয়:
আল্লাহ লোক দেখানো জিনিস পছন্দ করেন না। তিনি বলেছেন যে, তিনি মানুষের পোষাক দেখেন না, দেখেন অন্তর। বোখারীর প্রথম হাদীসেই বলা হয়েছে যে, মানুষের সমস্ত আমল তার নিয়তের উপর, অভিপ্রায়ের উপর নির্ভরশীল। ধরুন আমি সমাজের অসংগতির বিরুদ্ধে মানব বন্ধন করালাম – এটা কেন করলাম। আমার ভিতরে অবশ্যই নিয়ত আছে। আমি কি মিডিয়ার প্রচারের জন্য করলাম, স্বার্থ হাসিলের জন্য করলাম নাকি সত্যিকার অর্থেই সমাজ থেকে সেই অন্যায়কে নির্মূল করার জন্য করলাম? এখন মেকি আচরণ করতে করতে মানুষের অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি হয়ে গেছে। সমাজ তো দেহের ন্যায়। আমার দেহে যদি এক সংঙ্গে ক্যনসার হয়, ডায়বেটিস হয়, হেপাটাইটিস হয়, কিডনি নষ্ট হয়, লিভার সিরোসিস হয়, কুষ্টরোগ হয়, চোখ নষ্ট হয়, দাঁত পড়ে যায় – তখন আমি কী করব? বসে বসে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হবে। আমি কি মেকি চিকিৎসা করব? না। আমাদের সমাজের এখন সেই অবস্থা। সেখানে কোন মানুষের কিছুর নিরপত্তা নেই, একের বিপদে অন্যে চেয়ে দেখে না, মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা নাই, জীবনের নিরাপত্তা নাই, অর্থের নিরাপত্তা নেই, ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। নিরাপত্তার জন্য মুরগীর মতো সব মানুষ দিনরাত দরজা বন্ধ করে থাকে, তবুও সে নিরাপদ বোধ করে না। সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারে না। শক্তিমানের বিধান সে অনুগত ভৃত্তের মত মেনে চলে। তারা আর মানুষের অধিকার রক্ষা করতে পারবে না, সেটা করতে হলে আমাদেরকে জাগতে হবে।
মানুষের সৃষ্টিগত অধিকার কী?
প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে মানুষের কী কী অধিকার আছে। কয়েকটি মৌলিক সত্যে আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে। আমরা সবাই এক স্রষ্টার সৃষ্টি। আমরা সবাই তার কাছে ফিরে যাবো। এই পৃথিবী আমার সম্পত্তি না, এটা আল্লাহ সৃষ্টি করছেন আমাদের সবার জন্য। কাজেই পৃথিবীর ইঞ্চি মাটির উপর প্রত্যেকের সমান অধিকার আছে। এটা জন্মগত নয়, এটা সৃষ্টিগত অধিকার। এর মাটির উপরে, বায়ুর উপরে, পানির উপরে, বনাঞ্চলের উপরে মানুষের সৃষ্টিগত অধিকার। এই অধিকারকে কেউ বাঁধ দিয়ে, কৃত্রিম সীমানা দিয়ে আটকিয়ে করতে পারে না। আটকালেই মানবধিকার লঙ্ঘন হবে। কেউ ফেরাতে পারবে না, আজ বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ-বিগ্রহ আর মানবাধিকার লংঘন চলছে তার অধিকাংশই এ কারণে উৎপন্ন। তাই বাঁচতে হলে এ ব্যবস্থার জাল আমাদেরকে ছিন্ন করতে হবে। নয়তো মানুষ তার সৃষ্টিগত অধিকার ফিরে পাবে না।
এবাদত কী?
আজ এ কথাগুলি সবাইকে বলতে হবে যে আমরা এ মেকি সভ্যতা আর চাই না, যথেষ্ট হয়েছে। এ ভারসাম্যহীন বস্তুবাদী তথাকথিত সভ্যতাকে আমরা প্রত্যাখান করলাম। আমরা এমন একটা ভারসাম্যপূর্ণ সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেখানে সব মানুষকে ‘মানুষ’ হিসাবে গণ্য করা হবে। শক্তিমানের কথায় সব চলবে না, সেখানে সব হবে ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি বিচার করে। যেটা ন্যায় সেটা ন্যায়, যেটা অন্যায় সেটা অন্যায়। সবাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে থাকবে, ন্যায়ের পক্ষে থাকবে, সেটা আমার পরিবারের লোক হলেও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যার পারমাণবিক অস্ত্রের শক্তি বেশি তারই হুকুম মানতে সবাই বাধ্য হয়ে গেছে, ন্যায়-অন্যায়-মানবতা সব কিছুই কথার কথা। আমাদেরকে বুঝতে হবে আমাদের মানুষ হিসাবে প্রকৃত এবাদতটি কী। মুসা (আ.) কে আল্লাহ বললেন যাও স্বৈরাচারী ফেরাউনের কাছে। তার থেকে বনী ইসরাইলের নির্যাতিত লোকদেরকে উদ্ধার করো। এটাই তোমার এবাদত। আজকে এবাদত করতে মানুষ শুধু গির্জায় যায়, মসজিদে যায়, অথচ নিপীড়িত মানুষের ক্রন্দনে আকাশ বাতাস মুখরিত। কাজেই ধর্ম থেকে মানুষ আর মানবধিকার পাচ্ছে না, পশ্চিমাদের কাছে থেকে মানবধিকার পাচ্ছে না, স্কুল-কলেজের শিক্ষা থেকে মানবধিকার পাচ্ছে না, সরকার থেকে মানবধিকার পাচ্ছে না। কোথায় মানবাধিকার পাবে? সেট আমরা দেব ইনশাল্লাহ। সেজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, একটি নতুন রেনেসাঁর সূচনা করতে হবে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *