আত্মমর্যাদাবোধ থাকলে মাহফুজ আনামের পদত্যাগ করতেন
বিডিপি ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিএফআই সরবরাহ করা মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের জন্য ডেইলি স্টারের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, পত্রিকাটির সম্পাদক ভুল স্বীকার করে পদত্যাগের সাহস দেখাতে পারেননি।
তিনি বলেন, মাহফুজ আনাম তার ভুল স্বীকার করলেও ডেইলি স্টারের সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করে তার সাহস দেখাতে পারেননি। আত্মমর্যাদাবোধ থাকলে তার অবশ্যই পদত্যাগ করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ভুলের জন্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, ব্যবসায়ী এবং ছাত্র সমাজসহ সাধারণ মানুষকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। পত্রিকাটিতে প্রকাশিত এই ভুলের খেসারত আমি এবং আমার পরিবারকেও দিতে হয়েছে।
অমর একুশে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সোমবার একথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
এতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসিম কুমার উকিল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ এবং ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতার নীতি বিরোধী বিশেষ সংস্থার প্রেসক্রাইব সংবাদ ছেপে রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ীদের চরিত্র হরণের অপচেষ্টাকারী দুটি বিশেষ জাতীয় দৈনিকের সম্পাদককেও একদিন বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘..যদি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন তাহলে ষড়যন্ত্রকারীদের-যারা এ দেশের গণতন্ত্র হত্যা করে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার ষড়যন্ত্র করেছিল, এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল, দেশের মানুষকে এইভাবে নির্যাতনের স্বীকার করেছিল, যুদ্ধাপরাধীদের যেমনি বিচার হচ্ছে তেমনি একদিন এদের দেশের সংবিধান ধ্বংস করার অপরাধে বিচার হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সৃষ্ট মাইনাস টু ফর্মুলার সঙ্গেও ঐ দুটি জাতীয় পত্রিকা সম্পাদকের সম্পৃক্ততার প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাধায়ক সরকারের সময় ডিজিএফআই’র পরিচালক বিগ্রেডিয়ার বারী এবং বিগ্রেডিয়ার আমিনের কথা মত সাংবাদিকতা নীতি-বহির্ভূত অসত্য সংবাদ পরিবেশনের ভুল স্বীকার করায় (সম্প্রতি মিডিয়ায় মাহফুজ আনাম একে ভুল বলে মেনে নেন) পদত্যাগের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে এক ব্রিটিশ এমপি বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভুল খবর প্রচার করায় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ’বিবিসি’ শুধু ভুল স্বীকার করেই ক্ষান্ত হয়নি। সংস্থাটির মহাপরিচালক এবং ভুল খবর পরিবেশনে সংশ্লিষ্ট সকলে পদত্যাগ করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সীমাহীন নির্যাতন চালানো হয়। ঐ পত্রিকা দু’টি তখন কিছু না লিখে বলেছিল, নতুন সরকারকে অন্তত ৩ মাস সময় দিতে হবে। এর আগে কিছু লেখা যাবে না। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, কালোবাজারি মানিলন্ডারিং এবং লুটপাটের জন্যই দেশে ইমার্জেন্সী আসে।
তিনি বলেন, ‘তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে নির্বাচন দেয়ার পরিবর্তে ক্ষমতায় গেড়ে বসলো। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে চাকরী করতো ফখরুদ্দিন, খালেদা তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর বানায়। ৯ জন সেনা অফিসারকে ডিঙ্গিয়ে মইনকে সেনাবাহিনী প্রধান করা হয়। আর যখন তারা ক্ষমতায় বসলো তখন তাদের ভিন্ন রূপ দেখা গেল। তারা যেটা করলো ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত কিভাবে করা যায় আর ঐ দুটি পত্রিকা আবার উঠে পড়ে লেগে গেল।
তিনি বলেন, আপনারা ইতোমধ্যেই দেখেছেন ঐ দুটি পত্রিকার একটির সম্পাদক যিনি স্বীকার করেছেন- তিনি যা লিখতেন, ডিজিএফআই যা দিত তাই তিনি লিখে দিতেন। হ্যাঁ ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সময় ডিজিএফআই খুবই শক্তিশালী হয়ে গিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওনাদের কাছে এই প্রশ্ন কেউ করেনি, আমি করেছিলাম- দেশ চালায় কে? সরকার চালায় কে? ঐ ডিজিএফআই’র দুই বিগ্রেডিয়ার আমিন আর বারী ? তারাই হয়েগেছিল হিরো, তারাই দেশ চালাতো। কিভাবে তাদের হাতে ছাত্র-শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ব্যবসায়ী, রাজনতিবিদ সকলেই তখন নির্যাতিত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ধরে ধরে টাকা আদায় করা হয়েছে। অনেকে দেশ ছেড়েছেন। অনেকেই কারাগারে বন্দী হন। এই মদদটা তাদের দেয়ার জন্য ঐ বিগ্রেডিয়ার আমিন যে কাগজ তাদের ধরিয়ে দিতেন ঐ সম্পাদক সাহেব তাই তার পত্রিতায় লিখতেন বলে তিনিই স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, সত্য কখনও চাপা দেয়া যায় না। একসময় তা বেরিয়ে আসে। আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। কিন্তুু আমার মনে মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে উনি বললেন ডিজিএফআই’র কাগজই ছাপাতেন তাহলে পত্রিকার ওপরে যে লেখা থাকে নির্ভীক সাংবাদিকতা, সেটা কি?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতটাই নির্ভীক যে ডিজিএফআই আমিনের কাগজ পত্রিকায় ছেপে দিচ্ছেন। কিন্তুু একবারও তাকাচ্ছেন না। এর অর্থ কি দাঁড়ায়। আমার প্রশ্ন এখানেই ডিজিএফআই বিগ্রেডিয়ার আমিন ও বারীর সঙ্গে তার কি সখ্যতা ছিল। অথবা তিনি কি তাদের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন যে তারা যা দিত তাই তিনি ছেপে দিতেন?
যে মাইনাস টু ফর্মুলার একটা ষড়যন্ত্র চলছিল, যাতে আমাকে এবং খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় দেবে- এই ষড়যন্ত্রের সাথে ঐ সম্পাদক বা সম্পাদকদের জড়িত থাকাই প্রমাণ করে কি?
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি বুকের পাটা থাকে, সাহস থাকে জাতির কাছে স্বীকার করেন, ভয়ে লিখেছেন। তাহলে আর নির্ভীক সাংবাদিকতা থাকে না। আর যদি তাদের কাছে বিক্রি হয়ে থাকেন বা তাদের সাথে সখ্যতা থাকে সেখানে আমার কিছু বলার নেই।’
প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের মতই ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার কথা জানিয়ে অভিযুক্তদের কাছে জানতে চান, তারা কোন পথ বেছে নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে দুর্নীতিগ্রস্ত বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন এবং প্রতিদিনই পত্রিকায় একটা না একটা লেখায় ইঙ্গিত থাকতো- দুর্নীতিবাজ আমাকে বানিয়েই ছাড়বেন। আমি মাহফুজ আনামকে একটা কথা বলবো যে, আপনিতো আপনিই পিতৃতুল্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও তা পারেনি।’
‘পদ্মা সেতু নিয়ে যখন কথা উঠেছিল (দুর্নীতির) তখন কত বড় বড় কথা,ভাবখানা এমন যে এতদিন পারিনি এবার ধরে ফেলেছি’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী দায়ের হওয়া দেওয়ানী মামলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন জায়গায় মামলা হয়েছে, ফলে খুব নাকি হা, হুতাস, দুঃখ। আমার প্রশ্ন- আমাদের বিরুদ্ধে শুধু লেখা না, আমি প্রতিবাদ করেছি ডিজিএফআই দেশ চালাবে না, চালাবে সরকার-প্রধান। আমি এ কথাও বলেছিলাম এখানে কি গাইয়ের বাছুর, না বাছুরের গাই। মনে হচ্ছে, যেন বাছুরের গাই হয়ে গেছে সব।
তিনি সে সময় কারা অন্তরীণ থাকার কথা স্মরণ করে বলেন, আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার বিরুদ্ধে কোন ওয়ারেন্টও ছিল না। আমার বাসা সার্চ করা হয় দুই দুই বার,আমার অসুস্থ স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। আমরা এসব বলি না। টেনে-হিঁচড়ে যেভাবে আমাকে একটা কারাগারে নিয়ে একটা ড্যাম-পড়া ঘর, ইঁদুরের কাটা চাদর, ভাঙ্গা খাটের মধ্যে রেখে দেয়া হয়েছিল। খাবার আসতো জেলখানা থেকে। কোন কোনদিন ৩টা থেকে ৪টা বেজে যেত যতদিন পর্যন্ত খালেদা জিয়া গ্রেফতার না হয়েছে ততদিন পর্যন্ত খাবার বা কোনকিছুই বাইরে থেকে আসতো না, এটাই বাস্তবতা।
যারা এই মামলা দেয়ার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন আমাকে ঐ ঘরে একা যেটাকে বলে সলিটারি কনফাইনমেন্ট,কারাগারে কোন শাস্তিপ্রাপ্ত আসামীকেও এক সপ্তাহের বেশী রাখতে পারে না। সেখানে ১১টা মাস আমাকে সেখানে রাখা হয়েছে। এমনকি ঈদের দিন পর্যন্ত আমার আত্মীয়-স্বজন কাউকে দেখা করতে দেবে না। আমার তখন ঐ ড্যামের কারণে না কিসের কারণে জানি না সমস্ত শরীর অ্যালার্জি উঠে ভরে যায়। চোখে ইনফেকশান হয়ে গেল। আমাকে ডাক্তার দেখাতে দেয় নাই।
তিনি পবিত্র ঈদের দিনের সেই দুরাবস্থার কথা স্মরণ করে আরো বলেন, ঈদের দিনে কাউকেই আসতে দিবে না। আমার স্বামী আর ফুফুকে অনেক কষ্টে দেখা করতে দিল, ফুফুকে বলে দিল প্রেসকে কিছুই বলা যাবে না। আমার ফুফুও বঙ্গবন্ধুর বোন তিনি বাড়িতে প্রেসকে যখন আমার অসুস্থতার কথা জানালেন তখন তারা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। কিন্তু ডাক্তাররা যখন বললেন আমার রক্ত পরীক্ষা করতে হবে,তারা রক্ত নিতে গেলে তারা আমার চিকিৎসা বন্ধ করে পুনরায় জেলখানায় ঢুকিয়ে দিল। আবার যখন আমি চোখ দেখাতে গেলাম আমার প্রেসার লো হয়ে গেল, আমাকে হাসপাতালে রাখা হলো। কিন্ত কাপড় পাল্টাবার সুযোগও তারা দিল না। এ অবস্থাতেই আমাকে কোর্টে হাজির করা হলো মামলার জন্য। ১৬টি মামলা দেয়া হলো আমার বিরুদ্ধে, ডজনখানেক বিএনপি আমলের, বাকীগুলো তত্ত্বাধায়কের সময়কার।
তিনি মাহফুজ আনামের পক্ষে বিবৃতি দানকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা মামলা দেয়ার জন্য এত দুঃখ করে বেড়াচ্ছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- ১১ মাস যদি আপনাদের সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয় এবং মিথ্যা মামলা দেয়া হয়, অপবাদ দেয়া হয় এবং আমার ছেলে-মেয়ে, বোন তাদের ওপর যে অতাচার, মানসিক চাপ দেয়া হয়েছিলো তাদের বেলায় দেয়া হলেও কি তারা বিবৃতি দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিপদ শুধু আমার একার বিপদ না, বাংলাদেশের জনগণেরও এই বিপদ। তাদের ক্ষমতা লিপ্সাই একটা দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছিল।
তিনি বলেন, এসময় দি ডেইলি স্টার পত্রিকায় ডিজিএফআই ব্রিগেডিয়ারদের কথা মত সংবাদ ছাপানোতে মাহফুজ আনামকে সুবোধ বালক এবং ঐ সেনা কর্মকর্তার অধিক ইংরেজী জ্ঞান সম্পন্ন কিনা প্রশ্ন তোলেন।
ওয়ান ইলেভেনের আলোচিত কিংস পার্টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাধায়ক সরকার কিংস পার্টি গঠন করতে গেল, সেখানেও তারা ব্যর্থ। এরপর একজন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি- তারও পার্টি করার সখ হলো। সে দায়িত্বও এই সম্পাদকই নিয়েছিলেন। ৭০ জনের তালিকা হয়েছিল। ফোন করলে কেউ সাড়া দেয় না, আর দলও হয় না। তবে, ওনার মোবাইল ফোনের ব্যবসাটা ভালই হয়েছিলো। যদিও ব্যবসাটা ক্ষমতায় থাকতে আমিই দিয়েছিলাম।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ডেইলি স্টারের ভূমিকা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর পরবর্তী যদি আসি ২০১৪ সালের নির্বাচন যেন না হয় সেজন্য ঐ পত্রিকার কি ভূমিকা ছিল সেটাও আপনারা বিচার করে দেখবেন। তারপর যখন নির্বাচন করে ফেললাম, তাদের মধ্যে হতাশা। একটা পতাকা পাবার কথা ছিল, তা আর হলো না।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব দিয়ে বাংলার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। এই স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের বিজয় নস্যাৎ করার অনেক রকম চেষ্টা দেশে চলেছে এবং চলছে।
তিনি মাহফুজ আনামের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ছিলাম। আমাদের পড়াশোনা নষ্ট হলেও ঐ সম্পাদক পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি চলে যান লেখাপড়ার জন্য। পরে যে কোন কারণে তিনি কলকাতায় চলে যান। একটু ইংরেজী জানতো বলে তার ওপর দায়িত্ব ইংরেজী লেখার। এই হলো মুক্তিযুদ্ধ। আর সেই মুক্তিযোদ্ধা তিনি। কাজেই তার কাছ থেকে এর বেশি আর আমরা কি আশা করবো। যিনি উচ্চশিক্ষার্থে পাকিস্তান ফেরত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাঠে গিয়ে ইংরেজী বলা এবং লেখার কাজটা করেছিলেন।
কাজেই ডিজিএফআই’র ব্রিগেডিয়ার আমিন-বারীর দালালি করা যাদের চরিত্র তারা দেশ ও দেশের মানুষকে আর কি বা দিতে পারে।
তিনি অরো বলেন, ঐ ডিজিএফআই’র কাগজ যদি লিখে থাকে তাহলে এতদিন যা লিখেছে সবই ভেজাল, সবই অসত্য, সবই দেশকে ধ্বংসের জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, দুঃখ হয়, আমার পার্টির এ ব্যাপারে দু’একজনকে মুখ খুলতে দেখলেও অনেককে দেখি মুখ খুলতে অনেক দ্বিধা। সত্য কথা বলতে তাদের কেন এত ভয়। ২০ বছরতো আমরা একসঙ্গেই চড়াই-উৎরাই, বন্ধুর পথ পার হয়ে এখানে এসেছি। বিগত ৭ বছর দেশে পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী সাফল্য হিসেবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দারিদ্র্য হ্রাস, সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশে উন্নীতকরণ, ৫ কোটি লোককে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে উত্তোরণসহ স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি এদেশের সকল উন্নয়নের সারথী হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, ঐ পত্রিকা দুটি কখনই ভালো কিছু লেখেনা। ভালো করলেও লেখার শেষ দিকে একটা খোঁচা দিয়ে দেয় বলে মন্তব্য করে এ ধরনের সাংবাদিকতা দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রায়নে প্রতিবন্ধকতার কারণ হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বক্তৃতার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন-স্বাধীকার তথা বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেন। ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপ এবং কানাডা প্রবাসী রফিক ও সালামের কৃতিত্বপূর্ণ অবদান এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সৃষ্টির আদ্যপান্ত তুলে ধরেন।