নড়াইলে ১৩ বছরের ধর্ষিত শিশুর মৃত্যুতে পুলিশের মামলা
নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের ফলে নিহত ৮ম শ্রেনীর ১৩ বছরের শিশু মায়েশা আকতার রাকা’র মৃত্যু ঘটনায় অবশেষে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। এঘটনায় মুল অভিযুক্ত রাকার খালুকে খুলনা শহর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (৬সেপ্টেম্বর) বিকাল চারটার দিকে খুলনা শহর থেকে মুল অভিযুক্ত রাকার খালু “ইমতিয়াজ শেখ” কে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে নিহত রাকা’র মা স্বপ্না বেগম,খালা রত্না বেগম ও চাচাতো ভাই আশরাফুল ইসলাম কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নড়াইল সদর থানায় আনে পুলিশ।
রবিবার (৬সেপ্টেম্বর) সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০এর সংশোধনী ২০০৩ এর ৯(১)/ ৩০ তৎসহ ৩১৪ পেনাল কোড এ মামলা হয়েছে। মামলা নং ০৭।
মুল অভিযুক্ত“ইমতিয়াজ শেখ” কে গ্রেপ্তারের বিষয় নিশ্চিত করে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মতিয়র রহমান জানান, পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে শিশুটিকে ধর্ষন, গর্ভবতী, ও অপরিকল্পিত গর্ভপাত (এমআর) করার আলামত পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জন কে আটক করা হয়েছে। তিনি আরও জানান পারিবারিকভাবে কোন মামলা না হওয়ায়, পুলিশ স্ব উদ্যোগে মামলা করেছে। সুষ্টু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত তথ্য বের হয়ে আসবে।
নিহতের চাচা শরিফুল ইসলাম-ফুফু রেবেকা বেগম জানান , নড়াইল সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী মায়েশা আকতার রাকা (১৩) নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামের মৃত ডাঃ রবিউল ইসলামের কন্যা। তার বাবা ৪ মাস আগে কথিত সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। মৃত্যু পূর্বে তার বাবা ২ বোন এর নামে শহরের ৪ তলা বিশিষ্ট একটি বাড়িসহ প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি রেখে যান। বাবা মারা যাওয়ার পর সুন্দরী মা স্বপ্না বেগম শশুর বাড়ির সকলের সাথে সম্পর্ক বন্ধ করে দিয়ে নিজের বোন ও বোনের স্বামীকে নিজের বাড়িতে থাকতে দেয়। মা স্বপ্না বেগম বেশির ভাগ সময়ে কারনে অকারনে বাইরে থাকতেন। আর সেই সুযোগে লম্পট খালু “ইমতিয়াজ শেখ” বিভিন্ন সময়ে রাকাকে লালশার শিকার বানিয়েছে। এক পর্যায়ে রাকা গর্ভবর্তী হলে বাড়ির লোকেরা জানতে পেরে গোপনে পাষন্ড খালু, খালা এবং মাসহ নিজেরাই বাড়িতে গর্ভপাত (এমআর) করে। ৬-৭ দিন পার হয়ে গেলেও রক্ত ক্ষরন থামাতে না পেরে সোমবার (৩১ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুমুর্ষ অবস্থায় নড়াইল সদর হাসপাতলে নেওয়ার পর ২ ঘন্টা পরে অকাল মৃত্য হয়।
মৃত্যুর পর নিহতের চাচা, ফুফ ও চাচাতো ভায়েরা লাশের ময়না তদন্তের দাবী করলে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহ কয়েক জন পুলিশ অফিসারের সহযোগিতায় ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে । পরদিন মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি ফেসবুক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুয়ের তোপের মুখে জানাজা শেষে আবার ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতলে পাঠায়। নড়াইল সিভিল সার্জন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ ৭ জন ডাক্তার লাশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধায় লাশ দাফন করা হয়। নড়াইল সদর হাসপাতলের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মুিন্স আসাদুজ্জামান দিপু জানান, অল্প বয়সে গর্ভবর্তী হওয়া ও অপরিকল্পিত ভাবে অপরেশন করাই মৃত্যুর কারন। তিনি আরও জানান, ঘটনাটি কে ঘটিয়েছে আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছিনা, তবে আলামত রেখে দিয়েছি ডিএনএ পরিক্ষা করলে হয়তো জানা যাবে। নিহতের না স্বপ্না বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি । রিপোর্টটি প্রকাশ যাতে না হয় সে ব্যাপারে অনুরোধ করেন স্বপ্না বেগম । ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে রাকার স্কুলের সহপাঠিসহ নড়াইল জেলার সর্বস্তরের মানুষ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন।
বাংলাদেশেরপত্র/ এডি/আর