রংপুরে পানিবন্দী ৯০ হাজারেরও বেশী মানুষ
দুই দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে রংপুরে তিস্তার তীরবর্তী গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১১৫টি গ্রামের ৯০ হাজার ১ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় অনেক এলাকার মানুষ তাদের সহায় সম্বল নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন।রংপুরে ৯০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
রংপুর পাউবোর পানি বিজ্ঞান শাখার (হাইড্রোলজি বিভাগ) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রশিদ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অবিরাম বর্ষণের পাশাপাশি উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার পানি শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৫২ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
প্রকৌশলী আমিনুর রশিদ জানান, দুদিনের অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো বেশি প্লাবিত হয়েছে।
বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় রাতে তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানান তিনি।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে তিস্তা তীরবর্তী নোহালী, লক্ষ্মীটারী, কোলকোন্দ, আলমবিদিতর, গজঘণ্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪০ হাজার মানুষ। পানিবন্দি পরিবারগুলোতে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। তবে জ্বালানি সহায়তা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পানিবন্দি অনেক পরিবার সহায় সম্বল নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান ইউএনও তৌহিদুল ইসলাম।
গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়সাল হাসান জানান, জ্বালানি সরবরাহের পাশাপাশি পানিবন্দি অতি দরিদ্র পরিবারগুলোকে চিড়া ও গুড় প্রদান করা হচ্ছে।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের আলতাফ হোসেন বলেন, “ঘরোত পানি ঢুকি যাওয়ায় বিষুৎবার (বৃহস্পতিবার) রাইতোত চকির (চৌকির) ওপর আচনো। বৃষ্টির জন্যে বাড়ির বাইরোতে বেড়া যায় না। সকালে ফয়সাল চেয়ারম্যান আসি চিড়া, গুড় আর দুইশ টাকা দিয়া গেইচে। আইজ (শুক্রবার) বাড়ির সউগ কিছু নিয়া বুড়িরহাটোত জামাইর বাড়িত যাইতুচি।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফরহাদ হোসেন জানান, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে তিস্তা তীরবর্তী শহীদবাগ, টেপামধুপুর, হারাগাছ ও বালাপাড়া ইউনিয়নের ২৫ গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
flood gon“পানির তোড়ে শুক্রবার বেলা ৪টায় কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের বকুলতলা-একতাবাজার সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে”।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌস জাহান জানান, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে তিস্তার তীরবর্তী পীরগাছা, তাম্বুলপুর, ছাওলা, কান্দি ও কৈকুড়ি ইউনয়নের ৪০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে বেশকিছু কাঁচা রাস্তা।”
রংপুরের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার জানান, “তিস্তা নদী সংলগ্ন তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের কাছ থেকে শুনেছি।”
প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পানিবন্দি মানুষদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।