সততা ও নিষ্ঠার সাথে শতভাগ এডিবি বাস্তবায়ন করা হবে
চট্টগ্রাম ব্যুরো: এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী বলেছেন, এলজিইডি’র কাজের ক্ষেত্রে অতীতের চিত্র ছিল ঠিকাদারেরা কাজ করে দিনের পর দিন বসে থাকলেও সঠিক সময়ে অর্থায়ন বা তাদের বিল প্রদান করা সম্ভব হতো না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চিত্রটি ভিন্ন। এটা দেখে বোঝা যায়, দেশ উন্নয়নের দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উপর সরকারের অর্পিত দায়িত্ব যদি আমরা সঠিকভাবে পালন ও এডিবি’র শতভাগ সফল বাস্তবায়ন করতে না পারি তাহলে প্রবৃদ্ধি কম হয়। এজন্য এলজিইডি’র বিভিন্নস্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতার মাধ্যমে গুণগত মান বজায় রেখে সততা ও নিষ্ঠার সাথে শতভাগ এডিবি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এতে কারো কোন অনীহা থাকবে না এবং ব্যত্যয়ও ঘটবে না।
আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরস্থ এলজিইডি ভবনে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এলজিইডি’র আওতাধীন বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প/কর্মসূচি সমূহের অগ্রগতি বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মকর্তাদের উন্নয়নের জন্য সকল ধরনের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। জ্ঞানের ঘাটতি থাকার সত্বেও যারা সঠিকভাবে কাজ করতে চান তাদের ঘাটতি পূরণে এ ট্রেনিং মুখ্য ভূমিকা রাখবে। আর যারা ভাল কাজ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মুখে পড়েন তাদেরকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি নীতি ও বিধি বিধান উপেক্ষা করে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হলে বিন্দুমাত্র ক্ষমার চোখে দেখা হবে না। যেহেতু এলজিইডি উন্নয়নমুলক বিশাল অংকের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে সেহেতু এলজিইডি’র কাছে সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা বেশি। তাই উন্নয়নের দিকে দেশকে আরো এগিয়ে নিতে হলে চলতি অর্থবছরে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সবাইকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। ফলে দেশের উন্নয়নে আরো অতিরিক্ত এডিবি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
প্রধান প্রকৌশলী আরো বলেন, বর্তমান সরকারের অর্থের কোন অভাব নেই। উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান এই দেশ। আমরা যদি চলমান মহাসড়ক থেকে পিছিয়ে পড়ি তাহলে এলজিইডি’র অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এটা আমরা কেউ চায় না। এলজিইডি’র বিশ্বাসযোগ্যতা ও জনগণের আস্থার কারণে উন্নয়নের মহাসড়কের যাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে আরো বেশি বেশি প্রকল্প জমা দিতে প্রস্তাব এসেছে। এসব প্রকল্প সততার সাথে বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের দেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে শতভাগ কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। তাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সরকারের যে উন্নয়ন কাজ এবং জনগণের প্রতি যে দায়বদ্ধতা, সে দায়বদ্ধতা মনে রেখে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে। কেননা, জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়। এটা ভুলে না গিয়ে মনে রেখে জনগণের দৌঁড়গোড়ায় কাংখিত সেবা পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। যদি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজকর্মে ত্র“টি বিচ্যুতি পাওয়া যায় সেগুলো শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি ভুল-ত্র“টি সংশোধন পূর্বক এলজিইডি’র উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড জনগণের কাছে তুলে ধরতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী আরো বলেন, সকল ধরনের সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর আভাসভূমি গড়ে তুলতে এলজিইডি’র বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরো বেশি আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। এতে করে ভবিষ্যত বংশধররা একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী উন্নত দেশ উপহার পাবে। তিনি চলতি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির শতভাগ কাজ বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণ, কাজের গুনগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকল প্রকল্পের কাজ সম্পন্নকরণ, জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সকল সড়ক রক্ষনাবেক্ষণা কাজ শুষ্ক মৌসুমে দ্রুতত সম্পন্নকরণ এবং জলবায়ু সহিষ্ণু পরিবেশবান্ধব প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। একই সাথে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণে কোনো অবস্থাতেই পাহাড় না কাটার উপর লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন।
দিনব্যাপী কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী আশীষ কুমার পাল। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মীর ইলিয়াস মোরশেদ, ঢাকা অঞ্চলের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল হক, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (নগর ব্যবস্থাপনা) আনোয়ার হোসেন, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী (মনিটরিং ও মূল্যায়ন) নুর মোহাম্মদ ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (রক্ষণাবেক্ষণ) মো. মোশারফ হোসেন।
কর্মশালায় এলজিইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের ৪০০ জন কর্মকর্তা অংশ নেন।
উলেখ্য যে, বর্তমান অর্থবছরে এলজিইডি’র প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে যার উলেখযোগ্য অংশের কাজ হচ্ছে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাসমূহে। সরকারি অর্থায়ন ছাড়াও ওয়াল্ড ব্যাংক, এডিবি, জাইকা, সৌদি ফান্ড, ড্যাচ অর্থায়নে নগর, গ্রামীণ ও পানি সম্পদ উন্নয়নে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪০টি প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।