Connect with us

বিবিধ

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে বিতর্ক কেন?

Published

on

nocredit

বিডিপি ডেস্ক: বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে সিম যাচাই করতে মোবাইল কোম্পানির কাছে আঙ্গুলের ছাপ দেয়াকে ঝুকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে এ পদ্ধতির নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এর বিরোধিতা করছেন অনেকে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ১৩ কোটির বেশি সিম নিবন্ধন যাচাই শুরু হয়েছে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দেড়কোটির বেশি মানুষ বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে সিম যাচাই করে নিয়েছেন।
এপ্রিলের মধ্যেই এভাবে আরো ১১ কোটির বেশি সিম নিবন্ধন করতে হবে। সাধারণ ব্যবহারকারীরা সরকারি এ নির্দেশনার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাবই দেখাচ্ছেন।সিম নিবন্ধন শেষে একটি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে বেরিয়ে অনন্যা মুন্নী বলছিলেন, “ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে সিমটা নেয়া খুবই ভাল একটা জিনিস। যারা আগে জানতো না তারা নিতোনা, এখন উদ্যোগটা নিয়েছে এটা ভাল কাজ”।
মিজানুর রহমান নামে আরেকজন বলছিলেন “ক্রিমিনালকে ধরতে খুব সহজ হবে। আমি মনে করি এটা ভাল জিনিস। এটা অন্য দেশে নেই, অন্য দেশে ক্রিমিনালের ধরন আর আমাদের দেশের ক্রিমিনালের ধরন এক না”। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে সিম নিবন্ধনের বিরোধিতা দেখা যাচ্ছে।
কেউ কেউ ব্লগে এমনকি অনলাইন সংবাদপত্রে মতামত লিখে উদ্বেগ জানাচ্ছেন। বহুজাতিক কোম্পানির কাছে আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার ঘোর বিরোধী একজন আরিফুজ্জামান। তিনি বলেন, “আমাদের এখানে হাতের আঙ্গুলের ছাপ বাইরে চলে যেতে পারে এবং আমি আমার আঙ্গুলের ছাপ বাইরে দিবনা এরকম পরিমাণ বোধ বা অ্যাওয়ারনেস কিন্তু আমাদের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে নাই। কিন্তু আমি কোনোভাবেই চাইবনা যে আমার হাতের আঙ্গুলের ছাপ আমি একটি বেসরকারি কোম্পানির কোনো কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বা তার ডিভাইসে আঙ্গুলের ছাপ দিব। কারণ এই আঙ্গুলের ছাপ নানান ভাবেই ব্যবহার হতে পারে”।
খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে মোবাইল সিম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে প্রথমে পাকিস্তান। বাংলাদেশে এটি শুরু হয়েছে এবং সর্বশেষ সৌদি আরবেও এ নিয়ম চালুর খবর পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগত গোপানীয়তা এবং স্পর্ষকাতর এসব তথ্যের নিরাপত্তার কারণে উন্নত রাষ্ট্র এনং সেখানকার নাগরিক অধিকার কর্মীরা সোচ্চার থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে নাগরিক অধিকারের স্পর্ষকাতর এসব দিক অনেকটা উপেক্ষিত আছে বলে মনে করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
“সংবিধানে যেটা বলা আছে আমার এই ব্যক্তিগত সবকিছুর গোপনীয়তা আছে। তবে সরকার দেশের স্বার্থে আইন করে এর ব্যতিক্রম করতে পারে। তো এইখানে তো কোনো আইন নাই। আর আমরাও আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না বলে আমরাও দিয়ে যাচ্ছি। তো আমি বলবো যে চিন্তা করেন পরে হকার বা বাসে উঠতে বা দুধ কিনতে গেলে যদি ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হয়, তখন কিন্তু আমরা ব্যপারটা বুঝতে পারবো যে এটা কত উদ্ভট কাজ হচ্ছে।
বাংলাদেশে এখন থেকে নতুন সিম কেনা কিংবা সংযোগ বন্ধ করতেও আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে যাচাই করতে হবে। উদ্বেগ এবং বিতর্কের সূত্র ধরে জানতে চাই বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া কিভাবে হচ্ছে।দেশটির অন্যতম একটি বড় অপারেটর বাংলালিংকের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শিহাব আহমাদ বলেন, “যে তথ্যগুলো আসে সব তথ্যই এখানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত এটা ভেরিফাই করা না হচ্ছে।
ভেরিফাই হওয়ার পরে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী এগুলো হয় সংরক্ষণ করা হবে অথবা আমরা এটা পরবর্তীতে অন্য কোনো পদ্ধতিতে ডিলিট করে দিব”। গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংরক্ষণ না করে ভেরিফাই করা সম্ভব না।“গ্রাহকদের সম্পূর্ণ তথ্য পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং ওইটা প্রটেকশন দেয়া হয়। এবং আমাদের সার্ভার থেক এটা বাইরে যাবার কোনো সম্ভাবনা নাই”
মানুষের আঙ্গুলের ছাপ, চোখের রেটিনা এবং ডিএনএ তথ্য একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ। প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, এ তথ্য রাষ্ট্র ছাড়া কারো কাছে থাকাই নিরাপদ নয়। “রাষ্ট্র শুধু এটা প্রটেক্ট করতে পারে বা স্টোর করতে পারে। ওই ডেটাবেজ থেকে যদি কেউ পেয়ে যায় তাহলেতো ডেফিনেটলি ক্রাইম।
এনশিওর করতে হবে যে গর্ভমেন্ট ছাড়া আর কেউ কোনো পাবলিক ইনফরমেশন স্টোর করছে না কোনো অপারেটর বা যারা এরমধ্যে কাজ করছে, ইভেন মিডলে যারা আছে। কারণ এই ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রসেসটা কিন্তু থার্ড পার্টিরা ইমপ্লিমেন্ট করে দিয়েছে”। স্বপন বলেন, আঙ্গুলের ছাপ তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে গেলে নানারকম অপব্যবহার হতে পারে-
“রিস্কটা হলো অন্য একটা পার্সন আমাকে ইমপার্সনেট করতে পারে সে প্রিটেন্ড করতে পারে যে আমি জাকারিয়া স্বপন।
আমার অনুমতি ছাড়াই করতে পারে।
বেসিকালি আমার যত যায়গায় ডিজিটাল ইনফরমেশন আছে স্টোর করা আছে সব অ্যাকাউন্ট চাইলে সে নিয়ে নিতে পারে। এ রিস্ক কিন্তু শুধু আমার আপনার না সবার ক্ষেত্রে হতে পারে। ইভেন একজন কৃষকেরও হতে পারে। দেখা যাবে উনি লোন নিয়ে বসে আছেন উনি যানেনই না”।
এদিকে বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমদাদ উল বারী বলেন, রিটেইলার লেভেলে সংরক্ষণ করার কোনো সুযোগই রাখা হয়নি। “টেকনিক্যালি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংরক্ষণ করা সম্ভব না। কারণ এটা রিয়েল টাইম মিলিয়ে দেখা হয়। তবে অপারেটর লেভেলে এটা সম্ভব হতে পারে যদি আলাদা করে কেউ করে। বাট আমরা অপারেটরদেরকে নির্দেশ দিয়েছি যেন এটা তারা না করে”।
এদিকে আঙ্গুলের ছাপ বিতর্ক নিয়ে ১৯শে ফেব্রুয়ারি প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার ফেইসবুক পাতায় লিখেছেন মোবাইল কোম্পানির কাছে আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণের কোনো প্রযুক্তিও নেই। এদিকে মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে জানা গেছে কোনো পর্যায়ে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে না বিটিআরসি এই নির্দেশনা দিয়েছে ২৩ ফেব্রুয়ারি। বিবিসি বাংলা।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *