জাতীয়
আতঙ্কের নাম সোয়াইন ফ্লু: উত্তরাঞ্চলে সীমান্তজুড়ে কড়া সতর্কতা
ভারতে সোয়াইন ফ্লু রোগের ব্যাপক বিস্তার এবং প্রাণহানির ঘটনায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সীমান্তে কড়া নজরদারি শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যদিও বুধবার বিকেল পর্যন্ত এই অঞ্চলে একজনও এই ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়নি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে থেকে দেশে প্রবেশের পথ বিভিন্ন স্থলবন্দরে বসানো হয়েছে চেক পোস্ট। সন্দেহ হলেই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরেও স্ক্যানার বসানোর চিন্তাভাবনা চলছে। গঠন করা হয়েছে মেডিক্যাল টিম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে এই অঞ্চলের সব হাসপাতাল। তবে স্থলবন্দর বাদে সীমান্তে চোরাইপথে প্রবেশকারীদের নিয়েই উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভারতে বিশেষ করে কলকাতায় সোয়াইন ফ্লু’র হানায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তজুড়ে নেয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। কুড়িগ্রামের সোনাহাট, লালমনিরহাটের বুড়িমারি, মোগলঘাট, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা, দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগ সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। এসব স্থানের জিরো পয়েন্টে চেক পোস্ট বসিয়ে মেডিক্যাল টিম রাখা হয়েছে। তারা ভারত থেকে আসা ট্রাক ড্রাইভার ও অন্যান্য যাতায়াতকারীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। সীমান্তের ইউনিয়নগুলোতে স্থানীয় মেডিক্যাল অফিসারের নেতৃত্বে ৫ থেকে ১২ সদস্যের মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে বুধবার পর্যন্ত এই অঞ্চলের কোথাও কোনো সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। স্থলবন্দর এলাকাগুলোতে মেডিক্যাল টিম প্রকাশ্যে দুদেশের মধ্যে যাতায়তকারীদের মধ্যে কাজ করলেও উত্তরাঞ্চলের বিশাল সীমান্ত পথে ভারত থেকে প্রতিদিন বিভিন্নভাবে প্রচুর লোক চোরাইপথে আসা-যাওয়া করে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। আর এ চোরাই পথে যাতায়াতকারীদের বিষয়েই সবচেয়ে আতঙ্কিত স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। তারপরও সীমান্ত লাগোয়া প্রত্যেকটি ইউনিয়নের মেডিক্যাল অফিসারের নেতৃত্বে একটি করে টিম গঠন করে রাখা হয়েছে। উপসর্গ দেখা মাত্রই তাদেরকে জ্বর পরীক্ষা ছাড়াও আইসোলেশন ওয়ার্ডে নিয়ে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. সুকুমার সরকার নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও কড়া সকর্তকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘‘আমি বিভাগের প্রত্যেকটি জেলায় মাসিক মিটিংয়ে সোয়াইন ফ্লু’র বিষয়ে সকল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলা ও উপজেলাগুলোর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছি। স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থলবন্দরে ননটাচ থার্মোমিটার বসানো হয়েছে। মঙ্গলবারও ই-মেইলের মাধ্যমে আমি আবার বিষয়টি প্রত্যেক সিভিল সার্জনকে জানিয়ে দিয়েছি এবং তাদের কার্যক্রম মনিটরিং করছি।’’ বিভাগের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য বিভাগীয় এই কর্মকর্তা জানান, সোয়াইন ফ্লু মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ওষুধ, প্রয়োজনীয় জনবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে হাসপাতালগুলোর আইসোলেশন ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ডে অন্য রোগী থাকলেও যাতে প্রয়োজনে সেগুলোকে অন্যত্র স্থানান্তর করা যায় সেসব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, রংপুর বিভাগে সৈয়দপুর বিমানবন্দর রয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর না হলেও এখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াতকারীরা আসা-যাওয়া করেন। যদিও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে চেক করা হয়। তারপরও সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য এখানে থার্মাল স্ক্যানার বসানোর বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে।
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জয়নাল আবেদীন জানান, চার সদস্যের টিম সোনাহাট স্থলবন্দরে মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু করেছে। মালামাল পরিবহনের ড্রাইভারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি জানান, গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি ট্রাক এই স্থলবন্দরে ঢোকে। তাদের জিরো পয়েন্টে পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্তদের না পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম মোস্তফা জানান, জেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের জিরো পয়েন্টে ভারত থেকে আসা সব যাত্রীর পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে স্থলবন্দর এলাকার বাইরে যারা চোরাইপথে আসা-যাওয়া করছে তাদের আমরা পরীক্ষার আওতায় আনতে পারছি না।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিজে উপস্থিত থেকে দেখভাল করছেন। আমরা প্রস্তুত আছি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায়।
নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলার সীমান্ত লাগোয়া সব ইউনিয়নে মেডিক্যাল কর্মকর্তাদের নিয়ে টিম গঠন করা হয়েছে। এ ধরনের কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহ হলেই তারা পরীক্ষা করছে। আশঙ্কা সীমান্তের চোরাইপথে যাতায়াতকারীরা।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও সীমান্তের বিভিন্ন সূত্র বলছে, সোয়াইন ফ্লু রোগের ভাইরাস আক্রমণে বড় সঙ্কট সৃষ্টি করেছে উত্তরাঞ্চলের সীমান্তের চোরাইপথ। উত্তরাঞ্চলের কয়েক হাজার মাইলের বিশাল সীমান্ত পথ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার গবাদিপশু ও মানুষ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। এ কারণে এই অঞ্চলে চোরাইপথে আসা মানুষের মাধ্যমে ভারত থেকে সোয়াইন ফ্লু’র ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেখানে এই রোগ বা রোগের ভাইরাস বহন করে নিয়ে আসা ব্যক্তিকে সনাক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। চোরাইপথে লোকজন আসা বন্ধ করতে না পারলে সোয়াইন ফ্লু আতঙ্ক থেকে উত্তরাঞ্চলকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না বলেও অভিমত সংশ্লিষ্টদের।