Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

“আমি অত্যন্ত আশাবাদী – এ জাতি সত্য গ্রহণ করবে” -এমাম, হেযবুত তওহীদ

Published

on

স্টাফ রিপোর্টার : পবিত্র রমজান শেষে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম হেযবুত তওহীদের সদস্য এবং দেশব্যাপী হেযবুত তওহীদের সত্য প্রচারে যারা সহযোগিতা করছেন তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। বক্তব্যটি নিম্নে তুলে ধরা হলো :

হেযবুত তওহীদের সকল ভাই-বোনদের প্রতি আমার সালাম, সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতাল্লাহ। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা পথহারা ছিলাম, গোমরাহ ছিলাম, মহান আল্লাহ অতীব দয়া করে আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন, মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। আপনারা যেভাবে এই পর্বত সমান অসত্যের বিরুদ্ধে আল্লাহর রাস্তায়, মানবতার কল্যাণে নিজেদের জীবন এবং অর্জিত সম্পদ কোরবানি করে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, দোয়া করি আল্লাহ আপনাদের এই সংগ্রামকে সহজ করে দিন। ইসলামের বিধান মোতাবেক রমাদানের একমাস সিয়াম সাধনার পর আজ মুসলিমদের ঈদ-আনন্দের দিন। সেই হিসাবে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে মহা সমারোহে ঈদুল ফেতর পালিত হচ্ছে। কিন্তু সমগ্র মানবজাতি বর্তমানে যে নিদারুণ অন্যায়-অশান্তির মধ্যে দুর্বিষহ জীবনযাপন জন্য প্রকৃত আনন্দ হয় না। যেদিন সমগ্র পৃথিবীতে নিপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফুটবে তখনই ঈদ অর্থবহ হবে। সেই দিন আনার জন্যই আমরা সংগ্রাম করে যাচ্ছি।

আল্লাহ তাঁর শেষ রসুলকে (সা.) একটা পূর্ণাঙ্গ ও ত্র“টিহীন জীবনব্যবস্থা দিয়ে পাঠিয়েছেন এই জন্য যে, তিনি যেন দুনিয়া থেকে সকল অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। রসুলাল্লাহ সীমাহীন অত্যাচার সহ্য করে, অতুলনীয় সংগ্রাম করে একটা জাতি গঠন করেন, যার নাম উম্মতে মোহাম্মাদী। ইতিহাস সাক্ষী দেয় সেই জাতিটি জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে, স্ত্রী-পুত্র-পরিজন, ঘর-বাড়ি, ব্যাবসা-বাণিজ্য, ক্ষেত-খামার সমস্ত কিছু কোরবান করে দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য থেকে বহির্গত হয়ে পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে পড়েছিলেন, ঠিক যে উদ্দেশ্যে প্রত্যেক মো’মেনের নিজেদের বাস্তুভিটা থেকে বহির্গত হওয়া অবধারিত। উম্মতে মোহাম্মদীর সেই অক্লান্ত সংগ্রামের পরিণতিতে অর্ধ দুনিয়াতে অকল্পনীয় সুখ-শান্তি নেমে এসেছিল। মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এমন হয়েছিল যে, একা একজন সুন্দরী যুবতী সারা গায়ে অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় রাতের অন্ধকারে মাইলের পর মাইল রাস্তা অতিক্রম করলেও তার মনে সম্ভ্রম বা সম্পত্তির কোনো ক্ষতির আশঙ্কা জাগ্রত হতো না। আর দিনের পর দিন, মাসের পর মাস যাকাত বিতরণের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরেও যাকাত গ্রহণের মতো লোক না পেয়ে অবশেষে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বাধ্য হতেন। বছরের পর বছর আদলতে কোনো অপরাধ সংক্রান্ত মামলা আসত না। কিন্তু দুর্ভাগ্য! রসুলাল্লাহর এন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরেই সে দায়িত্ব এই উম্মাহ ছেড়ে দিয়ে দুনিয়ার তাবত রাজা বাদশাহর মতো শান-শওকতের সাথে জীবনযাপন শুরু করে দিয়েছিল। এ সময় জাতির মধ্যে সৃষ্টি হয় একটি আলেম পণ্ডিত শ্রেণি যারা ইসলামের প্রতিটি বিষয়ের অতি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে লক্ষ লক্ষ মাসলা মাসায়েল আর ফতোয়া বের করলেন এবং তাদের এই কাজের ফলে সিরাতুল মুস্তাকিম অর্থাৎ সহজ-সরল দীনটি মাকড়সার জালের মতো জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে গেল। ইসলাম সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার বাইরে চলে গেল। মুসলিম উম্মাহ শত শত ফেরকা, মাজহাব প্রভৃতিতে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ, মতবিরোধ এমনকি যুদ্ধ-বিগ্রহ করে উম্মাহর ঐক্যচেতনাকে ধূলিসাৎ করে দিল।

ইসলামের মধ্যে আরেকটি বড় বিকৃতি প্রবেশ করল সুফিবাদের বেশে। উম্মাহর একটি বড় অংশ সমাজের বাস্তব অঙ্গনের সমস্যার থেকে চোখ ফিরিয়ে ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক উন্নতি করে আল্লাহর কুরবিয়াত লাভের জন্য নিভৃতচারী, খানকাবাসী, ধ্যানমগ্ন দরবেশ হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ল, যাদেরকে আমরা সচরাচর ওলি, আউলিয়া, গাউস-কুতুব, পীর সাহেব, হুজুর কেবলা ইত্যাদি বলে জানি। এইভাবে একদিকে শাসকদের কদর্য ভোগবিলাস, আলেম ওলামাদের সৃষ্ট ফেরকাবাজি, অন্যদিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামহীন অন্তর্মুখী বিকৃত সুফিবাদের প্রভাবে গোটা জাতি হয়ে গেল স্থবির, মৃতপ্রায়। যখন এ জাতি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার সংগ্রাম ত্যাগ করে ঘরে বসে সুফি-সন্যাসী, সাধু-দরবেশ হওয়া শুরু করল তখনও দুনিয়ার অন্যত্র অত্যাচারীদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্দশা আর অশ্র“তে ভরপুর, তাই আল্লাহ উম্মাহর উপর থেকে তাঁর রহমত উঠিয়ে নিলেন। বাইরের দুনিয়ায় তাদের প্রভাব হ্রাস পেতে থাকল। এক সময় অর্ধ-দুনিয়াময় বি¯তৃত এ জাতি সামরিক যুদ্ধে রোমহর্ষক পরাজয়ের মাধ্যমে ইউরোপের খ্রিষ্টান জাতিগুলোর পদানত হলো। তারা ভাগ ভাগ করে এ জাতিকে শাসন ও শোষণ করতে লাগল। ব্রিটিশরা এ জাতিকে পদানত করার পর তাদের তৈরি শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এ জাতিকে মানসিকভাবে তাদের গোলাম বানিয়ে দিল। এ ইতিহাস আপনারা ভালো করেই জানেন। ব্রিটিশ শাসকরা এ জাতিকে একটি বিকৃত ইসলাম শিক্ষা দিল, সেই ইসলাম শিখে লক্ষ লক্ষ আলেম তৈরি হলো। তারা সেই ইসলামটাকে বিক্রি করে খাওয়া শুরু করল।

জাতির এই দুর্ভাগ্যজনক ইতিহাস থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা নেওয়ার আছে, বিশেষ করে দায়িত্ব ত্যাগের পরিণাম কী ভয়ঙ্কর হতে পারে তা আমরা জানতে পরি। এই ঘটনা পরিক্রমা অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহর পচন ও পতন আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য তো বটেই সমগ্র মানবজাতির জন্যই এক মহা দুর্ভাগ্য। কারণ এই উম্মাহ যদি তার সংগ্রাম অব্যাহত রাখত তবে সম্পূর্ণ মানবজাতির উপর এই শেষ দীন প্রতিষ্ঠা হতো যার ফলে মানবজাতি শান্তিতে (ইসলাম) বাস করত। রসুলাল্লাহর ‘রহমাতাল্লিল আলামিন’ উপাধি সার্থক হতো। তা না হওয়ায় বাকি দুনিয়ার মানুষ নিজেরা তাদের জাতীয় জীবনের জন্য ধর্মহীন বস্তুতান্ত্রিক রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা তৈরি করে নিয়েছে এবং তা একসময় সমগ্র পৃথিবীর উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। আজ পৃথিবীতে যত অবিচার, অনাচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত তা এরই পরিণামমাত্র। শুধু তাই নয়, আত্মাহীন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির দ্বারা প্রচণ্ড শক্তিশালী মারণাস্ত্রের উদ্ভাবনের ফলে মানবজাতি দৈহিকভাবে সমূলে ধ্বংসের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোন মুহূর্তে, সামান্য একটু যান্ত্রিক ভুলের জন্যও আজ পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যেতে পারে, যার ফলে সমগ্র মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এবং যদি হয় তবে সেই ধ্বংসের সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যাবে সেই উম্মতে মোহাম্মদী নামে পরিচিত জাতিটিও, যার উপর দায়িত্ব ছিল এই ধ্বংস রোধ করা। কিন্তু তারা নিজেরাই আল্লাহর দেয়া জীবন-বিধান জাতীয় জীবন থেকে বাদ দিয়ে মানুষের তৈরি, গায়রুল্লাহর তৈরি জীবন-বিধান তাদের জাতীয় জীবনে চালু করেছে। সুতরাং আজ পৃথিবীতে যত অশান্তি, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, দুঃখ, অশ্র“, রক্তপাত হচ্ছে তার জন্য দায়ী প্রথমতঃ বিশ্বনবীর (সা.) ৬০/৭০ বছর পর যারা বিশ্বনবীর (সা.) অর্পিত দায়িত্ব ভুলে যেয়ে সংগ্রাম, জেহাদ ত্যাগ করেছিলেন। দ্বিতীয়তঃ ঐ সংগ্রাম ত্যাগ করার পর যারা পৃথিবীর অন্য দশটা রাজা-বাদশাহর মতো শান-শওকতের সাথে রাজত্ব করতে শুরু করেছিলেন। মহানবী (সা.) রাজত্ব করার জন্য একটি অপরাজেয় দুর্ধর্ষ জাতি সৃষ্টি করেন নি।

এখন কথা হচ্ছে আমাদের এই দেশের জন্য, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির জন্য আমাদের করণীয় কী। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম নামক এই জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্য দুনিয়াব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা প্রথমে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটায় আফগানিস্তানে এবং পরবর্তীতে তা পরিকল্পিতভাবে দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিম জাতির আলেমরা আল্লাহর লা’নতের ফলে সাধারণ বুদ্ধির (ঈড়সসড়হ ংবহংব) বিলোপ ঘটার কারণে পশ্চিমাদের এই কূটকৌশল বুঝতে সক্ষম হন নি। ফলে মুসলিম জাতির লক্ষ লক্ষ মানুষ পশ্চিমাদের ফাঁদে পড়ে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। এটা তাদের দুর্ভাগ্য কারণ তারা আসলে আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে যথার্থ ভালোবাসলেও, ইসলামের জন্য জীবন-সম্পদ উজাড় করে দিলেও তারা প্রকৃতপক্ষে পথভ্রষ্ট যার প্রমাণ আমরা দিয়েছি। তারা শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম স্থানে যাওয়ার প্রত্যাশা রাখেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য, আল্লাহর জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণগুলো ইসলাম বা মানবতার কল্যাণে কাজে লাগার পরিবর্তে কেবলই পশ্চিমাদের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। জঙ্গিবাদ নামক একটা ফ্রাঙ্কেনস্টাইন সৃষ্টি করেছে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো আর আরব ধনকুবের ধর্মব্যসায়ীদের মাধ্যমে এই তরুণদেরকে তাদের নিয়োগকৃত আলেম-ওয়াজকারীরা ইসলামের দলিল ও ইতিহাসের অপব্যাখ্যা করে জঙ্গি হতে প্রলুব্ধ করেছে। অথচ এই পথে গিয়ে তারা দুনিয়াও হারাচ্ছে আখেরাতও হারাচ্ছে। অতীতে ধর্মের নামে যারা রাজনীতি করে তারা শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী-স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে আমাদের এই দেশের মধ্যে বারবার নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। তাদের পুঁজি মানুষের সরল ধর্মপ্রাণতা যাকে তারা নিজেদের কুক্ষিগত করে তথা হাইজ্যাক করে বারবার ভুল খাতে প্রবাহিত করেছে।

আর যারা পশ্চিমা প্রভুদের আদর্শিক উত্তরাধিকার সেজে, তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ নকল করে পাশ্চাত্য বস্তুবাদী, স্রষ্টাহীন, ধর্মহীন ‘সভ্যতা’ তথা দাজ্জালের কাছ থেকে স্বার্থবাদী, ধ্বংসাত্মক, অনৈক্য সৃষ্টিকারী রাজনীতির চর্চা করে যাচ্ছে। সে রাজনীতিতে না আছে কোনো পরকালমুখিতা, না আছে স্রষ্টার কাছে কোনো জবাবদিহিতার চিন্তা, না আছে কোনো দেশপ্রেম। এখানে স্বার্থসিদ্ধিই একমাত্র চেতনা। এখানে স্বার্থহাসিলের লক্ষ্যে চলে অবিশ্রাম হানাহানি, ক্ষমতা দখলের জন্য বা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জাতির সম্পদ ধ্বংস করে চলে নানা অশুভ চক্রান্ত এবং পেশিশক্তির প্রতিযোগিতা। এই হানাহানিতে এই জাতিটি থেকে অভ্যন্তরীণভাবে সামাজিক বন্ধন, রাষ্ট্রীয় আনুগত্য, শৃঙ্খলা, ঐক্য, জাত্যবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ, দেশপ্রেম সব বিলীন হয়ে গেছে। আর ধর্মকে ব্যবহার করে যারা স্বার্থ উদ্ধারের রাজনীতি করে, তারা এই অনৈক্যের সুযোগটি কাজে লাগাবার চেষ্টা করছে। জনগণের মূল্য তাদের কাছে একটি ভোটের চেয়ে এক পয়সাও বেশি নয়। স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই জনগণকে পুড়িয়ে মারতে এরা এক মুহূর্ত চিন্তা করে না। ওদিকে সাম্রাজ্যবাদীরা তো বসেই আছে শকুনের মতো জাতির পতাকা খামচে ধরার জন্য।

অর্থাৎ একদিকে সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র আরেকদিকে ধর্মব্যবসায়ীদের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল খাতে প্রবাহিত করার অভ্যাস, আরেকদিকে চলছে রাজনীতির নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড। এসবের পরিণামে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি যদি ইরাক, সিরিয়া ইত্যাদি দেশের মতো ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে হেযবুত তওহীদ নামক এই ছোট আন্দোলনও তার ২০ বছরের সকল অর্জন হারিয়ে ফেলবে। তাই প্রিয় জন্মভূমির প্রতি, জনসাধারণের প্রতি, তাদের জীবনকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ করার জন্য আমাদের করণীয় আছে। কারণ এ জাতিকে রক্ষা করার উপাদান আল্লাহ কেবলমাত্র আমাদেরকে দান করেছেন। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ জাতিকে রক্ষা করাই আমাদের জীবনের একমাত্র ব্রত হওয়া উচিত, সেটা নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে, আল্লাহর সত্যদীনের স্বার্থে, হেযবুত তওহীদের অস্তিত্বের স্বার্থে। আমার এ কথার গুরুত্ব আপনারা যদি অনুধাবন করতে সক্ষম হন তবে অবশ্যই আপনাদের জীবনকে, আপনাদের অর্জিত সম্পদকে মানবতার কল্যাণে কোরবানি করুন। আপনারা সকল মানুষের সামনে, দেশের পরিচালকবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, দীনমজুরসহ সকল স্তরের মানুষের সামনে তুলে ধরুন যে, এখনই যদি আমরা নিজেদের জাতীয় সংকট সম্পর্কে সচেতন না হই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হই তবে আমাদেরও অনিবার্য গন্তব্য ধ্বংস। যারা ধর্মের নামে মসজিদ-মাদ্রাসা আর খানকার চার দেয়ালের মধ্যে মাথাগুঁজে বসে আছেন আর ধর্মবিক্রি করে খাচ্ছেন তাদেরকেও বোঝান, তারা যেন বেরিয়ে আসেন এবং নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেন। সকলকে বলুন যে, আসুন জাতিটাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাতিটাকে ঐক্যবদ্ধ করি। জাতি ঠিক থাকলে, দেশ ঠিক থাকলে আপনাদের পরিচয় থাকবে, মসজিদ থাকবে, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা থাকবে, মন্দির থাকবে আর যদি জাতি ধ্বংস হয়ে যায় কিছুই থাকবে না। অতীতে এভাবেই অনেক জাতি নিজেরা নিজেরা হানাহানি করতে করতে ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা ছাড়া রক্ষা করার উপায় নেই, আর ঐক্যবদ্ধ করার উপাদান হেযবুত তওহীদের কাছেই আছে। তাই এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রয়াস চালানো হেযবুত তওহীদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত মহান দায়িত্ব। আপনারা দেশের আপামর জনগণকে সাধ্যমতো বোঝান। তারা যত গালি দিক, অপমান-অপদস্থ করুক কিছু গায়ে মাখবেন না। মনে রাখবেন হুজুর পাক (সা.) কেও সত্য প্রচারে এরকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু হুজুর পাক (সা.) কোনো কিছুর দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তার কাজ তিনি চালিয়ে গেছেন। যার ফলে একটা সময় পরে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের আরবরাও সত্য বুঝেছিল।

ইনশাল্লাহ আমি আশাবাদী যে, আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের মানুষ একদিন সত্য বুঝবে। এ জাতিই একদিন সমস্ত দুনিয়াকে সত্য দিয়ে নেতৃত্ব দেবে ইনশা’ল্লাহ। এ আশা আমি রাখি কারণ আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই রকম আভাস ও নিশ্চয়তা ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। আপনারা হতাশ হবেন না, নিরাশ হবেন না। হেযবুত তওহীদের ভাই-বোনদেরকে আমি বলতে চাই, আপনারা কোনো অপপ্রচারকারীর অপপ্রচারে কান দিবেন না, মিথ্যাচারীর মিথ্যাচারে প্রভাবিত হবেন না। আপনারা পূর্ণোদ্দমে নিরলসভাবে কাজ করে যান। এ জাতিকে আমরা ইস্পাত-কঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসাবে গড়ে তুলবই ইনশা’আল্লাহ।

এক বিভীষিকাময় পরিবেশ বর্তমানে বিরাজ করছে; মানুষ নামের পশুরা অবুঝ শিশুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করছে, পিতা-মাতা সন্তানকে, সন্তান পিতা মাতাকে, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে গলা কেটে, বিষ খাইয়ে, আগুনে পুড়িয়ে, গুলি করে, শ্বাসরোধ করে, কুপিয়ে হত্যা করছে। হত্যার পর টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে লাশ গুম করছে, পেট কেটে ভেতরে ইট ভরে নদীতে ফেলে দিচ্ছে। দিন দিন এই নির্মমতা বেড়েই চলেছে, কেউ থামাতে পারছে না। প্রকাশে শত শত লোকের সামনে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, কেউ থামাতে পারছে না। অনেকে এই নিষ্ঠুরতার মধ্যে বিনোদনের উপাদান খুঁজে পাচ্ছেন, ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন। মনুষ্যত্বের এই অধঃপতন দেখে বিবেকসম্পন্ন মানুষ শিউরে উঠছেন। তাদের মনে একটাই প্রশ্ন, মানুষ আর কত নিচে নামবে? কবে সে আবার দু পেয়ে জানোয়ার থেকে মানুষে রূপান্তরিত হবে। যারা সমাজের দায়িত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে আছেন তাদের প্রবৃত্তি হচ্ছে নিজের কাঁধ থেকে কীভাবে দোষটা অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া যায় সর্বদা সে উপায় তালাশ করা। তারা বছরের পর বছর একে অপরের উপর দোষারোপ করেই জীবন পার করে দিচ্ছেন। বাক্যবাগীশ বুদ্ধিজীবীরা টাকার বিনিময়ে টকশোতে জ্ঞানের খৈ ফোটাচ্ছেন। কিন্তু আসলে সমাধান কারো কাছে নেই। সমগ্র মানবজাতির সামনে সগৌরবে এই চ্যালেঞ্জ বা নিশ্চয়তার ঘোষণা আমরা দিতে পারি যে এই উদ্ভূত সংকটের সমাধান আল্লাহর রহমে আছে একমাত্র হেযবুত তওহীদের কাছে। এই সমাধান যারা গ্রহণ করবে তারা বাঁচবে, যারা অবজ্ঞা, অজ্ঞানতা বা অহঙ্কারবশত প্রত্যাখ্যান করবে তারা ধ্বংস হবেই হবে। একে নিয়তি বা পরিণতি যা-ই বলা হোক, এর ব্যত্যয় হবে না।

এখানে একটি আশার কথা হচ্ছে, আরবের তৎকালীন আইয়্যামে জাহেলিয়াতের মানুষগুলোর নিষ্ঠুরতা নির্মমতার কথা ইতিহাসে জেনেছেন। সেই মানুষগুলোও একদিন সোনার মানুষের পরিণত হয়েছিল। তাদের এই পরিবর্তন হয়েছিল রসুলাল্লাহর আনীত সত্যের প্রভাবে। এ সমাজের মানুষগুলোও বস্তুবাদী, মিথ্যাভিত্তিক, আত্মাহীন জীবনব্যবস্থার প্রভাবে বহু পাশবিক কর্মকাণ্ড করলেও আমি আশাবাদী যে, তারাও সোনার মানুষে পরিণত হবেন। কারণ এই জাতির মধ্যেই সত্যের আবির্ভাব হয়েছে এবং এ পবিত্র ভূমি থেকেই সত্য সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত করবে ইনশাল্লাহ।

কাজেই হেযবুত তওহীদের ভাই ও বোনেরা, আপনারা এদেশের মানুষকে বোঝান তাদের ধর্ম কী, তাদের এবাদত কী, সমাজ ও দেশের প্রতি তাদের কী দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। চলমান অরাজকতা, মানুষের নির্মম পাশবিকতা শুধু আইন দিয়ে, শক্তি প্রয়োগ ও শাস্তিবিধান করে সমাধান করা সম্ভব? কখনোই নয়। এগুলোর চেয়ে অনেকগুণ বেশি প্রয়োজন একটি আদর্শ যা মানুষের আত্মিক পরিবর্তন ঘটাবে। আপনারা সমাজের মানুষকে এ বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন, ধর্মব্যবসায়ীদের অর্থ দেওয়া ধর্মবিরুদ্ধ কাজ। বরং এই অর্থ দরিদ্র অসহায় মানুষের প্রাপ্য। যে সমাজে অন্যায় অবিচার চলে সেখানে ব্যক্তিগত এবাদত বন্দেগি অর্থহীন, ঈমান ও সময়ের করুণ অপচয়। সেই সমাজের প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরদে আইন হচ্ছে সম্মিলিতভাবে সেই অন্যায় দূর করে শান্তি আনা। আপনারা আলেমদেরকে বলুন, আপনারা জীবনের বিরাট সময় জুড়ে অতি কষ্ট ও সাধনা করে কোর’আন হাদিসের এলেম হাসিল করেছেন, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও অগণিত জটিল মাসলা আয়ত্ত করেছেন, কিন্তু যে এলেম সমাজের বা জাতির কল্যাণে লাগে না সেই এলেম অর্থহীন। হাশরের দিন সেই এলেম আবর্জনায় পরিণত হবে, তার এক পয়সা মূল্যও থাকবে না। কারণ সেই এলেম তারা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছেন। যে জ্ঞানের মধ্যে অর্থের সংযোগ হয় সেই জ্ঞান বিষাক্ত, সেই জ্ঞানী অভিশপ্ত জ্ঞানপাপী। তার প্রদত্ত জ্ঞান বিষমাত্র, যা মানুষের শুধুই ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। সে কারণেই আজকের সমাজের শিক্ষিত শ্রেণির দ্বারা দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। যা সত্য তা নির্ভীকচিত্তে সোচ্চারকণ্ঠে বলুন। আলেম ও শিক্ষিত মানুষদেরকে বলুন, ঘৃণ্য অপরাধীর যাবতীয় অপরাধের চেয়ে জ্ঞানীর মৌনতা বড় অপরাধ। এই নির্বিবাদী জ্ঞানীরাই আল্লাহর চোখে বড় অপরাধী বা মুজরিমুন। আজ আমাদের সমাজের এক শ্রেণির মানুষগুলো বিশ্বের মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, মনুষ্যত্বের অপমান-লাঞ্ছনা দেখেও না দেখার ভান করে নীরবে ঘর-সংসার করে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন। তাদের এই নীরবতাই তাদের ধ্বংসের কারণ হবে, এই ধ্বংস কেবল এই জগতে নয়, পরজগতেও।

মনে রাখবেন, আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ মানেই মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করা। আপনারা এই কাজে নিজেদের জীবন ও সম্পদ বিনিয়োগ করুন, তাহলে মো’মেন হতে পারবেন। সুরা হুজুরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, মো’মেন শুধু তারাই যারা আল্লাহ-রসুলের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর রাস্তায় জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করে সংগ্রাম করে। পার্থিব সম্মান, কর্তৃত ও পরকালীন জান্নাত এই মো’মেনের জন্য নির্দিষ্ট, গোনাহ ক্ষমা এই মো’মেনের জন্য, সালাহ-সওম এই মো’মেনের জন্য। যারা সংগ্রাম করে না তাদের সালাহ-সওমের কোনো মানে হয় না। কারণ এগুলো দেওয়াই হয়েছে সংগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় চরিত্র গঠনের প্রশিক্ষণস্বরূপ। আর যে কেবল সারা বছর মানুষের থেকে নিয়েছে, মানুষকে কিছুই দেয় নি, সে তো মো’মেনই নয়, হতে পারে সে বিরাট লেবাসধারী আল্লামা, কিন্তু সে অভিশপ্ত মালাউন। কাজেই এই সূত্র আপনারা মনে রাখবেন, যত দেবেন তত বড় হবেন, আর যত নেবেন তত ছোট হবেন।

কাজেই আসুন আমরা এ দেশের জন্য, সমাজের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করি। এটা একদিকে আমাদের ঈমানী দায়িত্ব, ধর্মীয় কর্তব্য আর অন্যদিকে সামাজিক দায়িত্ব। ধর্মীয় কর্তব্য এজন্য যে, অন্যের দুঃখ দুর্দশা দূর করাই প্রকৃত এবাদত। আর এই এবাদত না করে কেউ জান্নাতে যাবে না। এটি আমাদের সামাজিক কর্তব্য এই জন্য যে, আমার সমাজ যদি ধ্বংস হয়ে যায় আমিও ধ্বংস হয়ে যাব। কাজেই সমাজের একজন সদস্য হিসাবে সমাজকে নিরাপদ করা আমার সামাজিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালন না করলে আমিও নিরাপদ থাকব না। সুতরাং আমি সবাইকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি যারা এই মহান দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেদের ব্রতী করেছেন। আল্লাহ আপনাদের সর্বোত্তম দৃঢ়তা দান করুন। আল্লাহ হাফেজ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *