Connect with us

জাতীয়

আসছে আমের মুকুল, স্বপ্ন বুনছে বাংলার চাষী

Published

on

amer mukulরাজশাহী প্রতিনিধি:
বইছে ফাল্গুনী হাওয়া। সঙ্গে যোগ হয়েছে আমের মুকুল। গাছের শাখে শাখে আগুনরঙা ফুল। চারিদিকে স্বর্ণালী শোভা। যেমন তার সৌন্দর্য, তেমনি তার ঘ্রাণ। মুকুল ভরা ডালে পাতাদের হাতছানি। মৌ মৌ ঘ্রাণে মাতোয়ারা মৌমাছির দল। গুন গুন সুরে মুকুলের ওপর বসে চলছে ছন্দের নাচন।
ভাষায় ফোটানো না গেলেও আমের গাছে এমন মুকুল ফোটা দৃশ্য এখন রাজশাহীর শহর ও গ্রামে-গঞ্জে। সারি সারি আমগাছে যেনো হলুদ আর সবুজের মিলনমেলা। গাছে গাছে দেখা দিয়েছে মুকুলের সমারোহ। তাই বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন রাজশাহীর আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। তবে দু’চোখে স্বপ্ন থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত তারা।
উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় শহর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী জেলার প্রায় সব এলাকাতেই এখন রয়েছে বড় বড় আমবাগান। প্রতিবছরই আমবাগানের সংখ্যা বাড়ছে। তবে গড়ে ওঠা নতুন আমবাগানগুলোর প্রায়ই বনেদি জাতের। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতেরই গাছ বেশি হচ্ছে।
আমের রাজধানী বলা হয় রাজশাহীকে। ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ গাছে মুকুল এসেছে গেছে। প্রায় আড়ইশ’ জাতের আম উৎপন্ন হয় এখানে। তবে এবার ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপলি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ জাতের আম বেশি চাষ হয়েছে। গাছে গাছে বাহারী জাতের আম এখন দেশের কোটি কোটি মানুষের রসনা মেটাতে প্রস্তুত হচ্ছে। সব ভেবে চাষিদের মনে উঁকি দিচ্ছে মুনাফার আগাম বার্তা। গাছের মুকুল কীটপতঙ্গের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর আম চাষিরা।
রাজশাহীর পবা উপজেলার পিল্লাপাড়ার আমচাষি নূরুল আমিন জানান, আম গাছে কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক প্রয়োগ, সার ও সেচ প্রদানসহ গাছের পরিচর্যা ছাড়া আমচাষিদের এখন অন্য কিছু করার ফুরসত নেই। মুকুল পুরো ফোটার আগে গাছে ডায়াথেন এম ও কনফিডর পরিমাণমতো পানিতে মিশিয়ে ¯েপ্র করা হচ্ছে, যেন মুকুলে কোনো ধরনের পোকার আক্রমণ না হয়। আবার গুটি ধরার পর আরেক দফা ¯েপ্র করা হবে। যারা বাগান ইজারা নিয়েছেন, তারা গাছের পরিচর্যায় আরও বেশি মনোযোগী।
তবে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আলিম উদ্দিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। কিন্তু পাউডারি মিলডিউ নামে এক প্রকার ছত্রাকজনিত রোগেও আমের মুকুল-ফুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে। কখনও গাছে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিলে ম্যানকোজেট গ্র“পের ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম অথবা ইমাডোক্লোরিড গ্র“পের দানাদার প্রতিলিটার পানিতে দশমিক দুই গ্রাম, তরল দশমিক ২৫ মিলিলিটার ও সাইপারম্যাক্সিন গ্র“পের কীটনাশক প্রতিলিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে। আবার মুকুল গুটিতে রূপান্তর হলে একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার ¯েপ্র করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেন এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
এদিকে, রাজশাহীর বড়বনগ্রাম এলাকার আমচাষি ফরিদ শেখ জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছে পর্যাপ্ত মুকুল এসেছে। তবে গত দুই দিনে রাজশাহীর আশপাশের এলাকায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। আকাশ এখনও মেঘলা। এই মুহূর্তে শিলাবৃষ্টি হলে আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এর উপর সামনে ঝড়-ঝঞ্জার সময়ও আসছে। তাই আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে বর্তমানে শঙ্কিত রয়েছেন। তবে পরিস্থিতি অনূকূলে থাকলে এবার বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হজরত আলী জানান, ধান-চাল বা অন্য কয়েকটি ফসলের মত আম উৎপাদনের কোনো লক্ষ্যমাত্রা কৃষি অধিদফতরের কাছে থাকেনা। তবে এ বছর রাজশাহীর ১৬ হাজার ৫১৯ হেক্টর জমিতে আমগাছ রয়েছে। আগামী দিনগুলোয় কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে এখান থেকে প্রায় আড়াই লাখ টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা করা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহীর বাজারে আগামী মে মাসের শেষ দিক থেকে আম উঠতে শুরু করবে। প্রথমে উঠবে গোপালভোগ ও রানীপছন্দ জাতের আম। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই লকনা, ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, দুধসর, মোহনভোগসহ বিভিন্ন জাতের আমে ভরে উঠবে। এরপর চলতি মৌসুমের আকর্ষণীয় ফল ফজলি এবং সর্বশেষ বাজারে টুকরিতে উঠবে আশ্বিনা আম।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *