Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা

Published

on

Fireহোসাইন মোহাম্মদ সেলিম: অগ্নিদাহে জ্বলছে আমাদের বাড়িটি। এই ঘরে বেশিদিন থাকতে পারি নি। পুরাতন বাড়িটি থেকে যখন এই বাড়িটিতে এসে উঠলাম সেটা ১৭ বছর আগের ঘটনা। আজ পর্যন্ত প্রায় ৮/১০ বার আমাদের বাড়িতে আক্রমণ চালানো হয়েছে। আমি হেযবুত তওহীদে যোগ দেওয়ার পর প্রথম আক্রমণটি হয় ২০০০ সালে।
চাষীর হাট জামে মসজিদে মাগরেবের নামাজ শেষে উপস্থিত মুসল্লীদের সামনে মসজিদের ইমাম শফিক মোল্লা, জামায়াত নেতা হানিফ মোল্লা এবং ইউনুস মাস্টার গং আমাকে খ্রিষ্টান ফতোয়া দিয়ে ‘ঈমান রক্ষার জন্য’ উত্তেজনাপূর্ণ জ্বালাময়ী ও জেহাদী বক্তব্য দেয়। পরে পাশের রেল লাইন থেকে হাজার হাজার পাথর এনে, বিশ্বরোডের পিচঢালা পথ খুড়ে রাতের অন্ধকার ভেদ করে গগনবিদারী রণহুঙ্কার দিয়ে জনৈক বিপ্লবের নেতৃত্বে কয়েক শ’ সন্ত্রাসী মাস্তান মোল্লা একত্রিত হয়ে হামলা চালায়। অন্তত এক ঘণ্টা পাথর নিক্ষেপের ফলে টিনের চাল, বেড়া দুমড়ে মুচড়ে যায়। আমরা বাড়ির ভিতরেই বসেছিলাম। পরে শুনলাম স্থানীয় একজন গণমান্য ব্যক্তির হস্তক্ষেপে সে যাত্রায় তারা বাড়িতে আগুন না দিয়ে বা আমাদেরকে শারীরিক নির্যাতন না করে ফিরে যায়।
২০০৯ সনে যখন আমাদের বাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছিল তখন উত্তরপাশে আরেকটি ঘর ছিল। সে ঘরটিকে ভস্মীভূত করে দেওয়া হয়েছিল। আর এই ঘরটির সবকিছু লুটপাট করা হয়েছিল। প্রায় ১০০ মণ ধানের বস্তা মাথায় করে নিয়ে গিয়েছিল। লুটপাটকারীরা ফ্যান, লাইট, বৈদ্যুতিক তার এমন কি জানালার শিকগুলোও খুলে নিয়ে গিয়েছিল।
এই ঘরটির পূর্ব পাশে আরেকটি দোচালা টিনের ঘর ছিল। সেই দোচালা ঘরটিতে মাঠে যারা কাজ করেন সেই শ্রমিকরা থাকতেন। সেই ঘরটিকে ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে একটি জমি বিক্রি করে, প্রজেক্টের মাছ বিক্রি করে, কিছু গাছ বিক্রি করে, বন্ধু-বান্ধব থেকে ঋণ নিয়ে ঐ স্থানে চার কামরার একটি পাকা ঘর নির্মাণ করি। সেই ঘরে এখন পর্যন্ত উঠিও নাই। এরই মধ্যে ১৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে আবারো আমাদের বাড়িতে আক্রমণ করা হয় এবং ছবিতে দৃশ্যমান বড় ঘরটি পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়। আমাদের সবগুলো ঘর লুটপাট করা হয়। হেযবুত তওহীদের দুইজন সদস্যকে প্রকাশ্যে জবাই করে দেয়, তাদের হাত-পায়ের রগ কেটে চোখ তুলে নেয়, তারপর তাদের শরীর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। যারা জানেন না তারা অনেকে হয়তো বলবেন যে গ্রামের মানুষ কি শুধু শুধু বার বার আপনার বাড়িতে হামলা করে? নিশ্চয়ই কোনো কারণ থাকবে। তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, আমি আমার জানা মতে এমন কোনো অন্যায় করি নাই বা কারো কোনো অধিকার নষ্ট করি নাই যাতে তারা আমার বাড়িতে হামলা চালাবে। তবে আমি মহামান্য এমামুয্যামানের পক্ষ থেকে একটি মহাসত্য মানুষের সামনে প্রকাশ করেছি। সেটা হচ্ছে, ধর্মের কাজ করে টাকা নেওয়া আল্লাহ হারাম করেছেন (সুরা বাকারা ১৭৪)। এটা আমার ব্যক্তিগত ফতোয়া নয়, কোর’আনের বহু আয়াতে এ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলা আছে। আমি আরো বলেছি যে, ধর্মের নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা ইসলামে বৈধ না। আমার এসব কথায় যাদের কায়েমি স্বার্থে আঘাত লাগল তারা আমার বিরদ্ধে ফতোয়া প্রদান করল যে আমি নাকি খ্রিষ্টান হয়ে গেছি।
আমার জন্মের পূর্ব থেকেই আমার বাবার সাথে গ্রামে যে পরিবারগুলোর আধিপত্যের লড়াই চলে আসছিল তারা এবার ধর্মব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাট্টা হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারাই ব্যাপক অপপ্রচার চালিয়ে জনগণের মধ্যে কিছু মিথ্যা কথা প্রতিষ্ঠা করে দিল যে, আমরা খ্রিষ্টান, খ্রিষ্টানদের থেকে টাকা পাই, উরুতে সিল দিয়ে হেযবুত তওহীদে অন্তর্ভুক্ত হতে হয়, আমরা পূর্ব দিকে ঘুরে নামাজ পড়ি, কালো কাপড় দিয়ে মৃতকে দাফন করি ইত্যাদি। গ্রামের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ তাদের এই সব গুজবকে সত্যি বলেই বিশ্বাস করে নিল। কারণ যারা এগুলো বলছে তারা ধর্মের ধ্বজাধারী, তাদের মুখে দাড়ি, গায়ে জোব্বা। নতুন বাজারে যে মসজিদটি আছে সেই মসজিদটি নির্মাণের পেছনে আমার ও আমার বাবার ঐকান্তিক অবদানের কথা গ্রামের মানুষ সবাই জানেন।
মসজিদটির যিনি ইমাম তিনি একজন দুশ্চরিত্র, অর্থলোভী মানুষ। সেটাও সর্বজনবিদিত। আমি কেবল একটি কথা বলেছি, এই চরিত্রহীন স্বার্থপর লোকটির পরিবর্তে এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হোক যে, ধর্মকে স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার করবে না, ধর্মের কোনো কাজ করে বিনিময় নেবে না এবং সর্বাবস্থায় সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার থাকবে, তার পেছনে নামাজ পড়তে আমার কোনো আপত্তি নেই। ব্যাস- এটুকুই আমার দোষ।
কথা হলো, বেনামী মিথ্যা বানোয়াট লিফলেট তৈরি করে সেটা জুমার খোতবায় মুসল্লিদের সামনে উস্কানিমূলক ওয়াজ করে, মসজিদকে গীর্জা বলে প্রচার করে মানুষদের ক্ষিপ্ত করে তুলে জনতার আড়াল নিয়ে গুটিকয় মানুষের উপর নৃশংসতা ও সহিংসতা চালানো কোন ধরনের ধর্মচেতনা? যেদিন মানুষ সব সত্য জানতে পারবে সেদিন কী পরিণতি হবে এই সব মিথ্যাবাদীদের? মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে কীভাবে ধ্বংসাত্মক কাজ করা হয় তা সোনাইমুড়ির ঘটনা সচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। অথচ আল্লাহ বলেছেন, কোনো ফাসেক তোমাদের কাছে সংবাদ নিয়ে এলে তোমরা তা যাচাই করে দেখবে, নতুবা অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো গোষ্ঠীর ক্ষতিসাধন করে ফেলতে পারো (সুরা হুজরাত ৬)। লেখক: ইমাম, হেযবুত তওহীদ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *