Connect with us

জাতীয়

করতোয়ার কান্না শোনার কেউ নেই

Published

on

korotoa deadএম.এ.রহিম, বগুড়া:
সরকারিভাবে ঘোষণা না হলেও বগুড়ায় করতোয়া পারের প্রভাবশালীরা ধরেই নিয়েছে এ নদী মরে গেছে। তাই মিল ফ্যাক্টরির বিষাক্ত বর্জ নিস্কাশন, হাসপাতাল, ক্লিনিক, হাট বাজারের বাতিল জিনিস ও আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এ নদী। নদীর তলদেশের মাটির জন্য ক্ষতিকর পলেথিন দিয়ে নদীর বুক ভরে গেছে। দূষিত পানিতে জন্ম নিচ্ছে নানা ধরনের রোগ জীবাণু। নদীর বদ্ধ দূষিত পানিতে গোসল করে চর্মরোগ, পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে নদী পারের মানুষ। পানির দুর্গন্ধে পারের বাড়ি ঘরের জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

স্বয়ং জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের ডাকবাংলোর পিছনে নদীতে বর্জবাহিত আটকে পড়া দূষিত পানির দুর্গন্ধে বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। চেলোপাড়া ব্রিজের নিচে পানি শূন্য করতোয়া এখন শুকরের চারণভূমি। এমন বৈরী পরিবেশে বন্ধ হয়ে গেছে নদীর পারে মানুষের প্রাতঃভ্রমণ। স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে লাখো মানুষ। এদিকে একটি গবেষণা সংস্থার জরিপ তথ্যে জানা গেছে, গত ৪০ বছর ধরে বগুড়া জেলা সীমানার প্রায় ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ নদী পথের দুই পারের শত শত হেক্টর জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। বগুড়া শহরের রাস্তাঘাট, হাটবাজারের প্রতিদিনের অর্ধশতাধিক টন বর্জ ফেলা হচ্ছে নদীর দুইপারে। মিল ফ্যাক্টরির বিষাক্ত কেমিকেল মিশ্রিত পানি ড্যাম্পিংÑএর ব্যবস্থা না করে তা সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে। নদীর বিষাক্ত পানিতে মরে যাচ্ছে মাছ। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও কোনো শক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বর্জ্য ফেলে বিভিন্ন স্থানে চলছে নদীর জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা।

এলাকার ভুক্তভোগী মো. মতিউর রহমান (৩০) জানান, অনেক জায়গায় অবৈধ বালু উত্তলনের ফলে নদীর ক্ষতি হচ্ছে। সেই সাথে সর্বনাশ হচ্ছে নদী পারের জমিগুলোর। সাধারণ মানুষের আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় অসহায় ওই কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। আলহাজ্ব মো. আফছার আলী (৭৪) জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের আমলে নদীতে খনন কাজ করা হয়েছিল, ফলে নদীটি অল্প হলেও তার হারানো রূপ ফিরে পেয়েছিল। কিন্তু অব্যবস্থাপনা ও অবহেলাজনিত কারণে আবারও নদীটি ভরাট হয়ে এসেছে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে নদী ভরা পানি থাকলেও ফাল্গুন চৈত্র মাসে তলায় দেখা যায় শুষ্ক বালুচর। এখন নদীটি দেখতে মনে হয় মরা খাল।
মুক্তিযুদ্ধা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন (৬৮) বলেন, নদীতে সারা বছর থাকত থৈ থৈ করা পানি। জেলেরা মাছ ধরত মনের আনন্দে, বাজারে বিক্রি করে চালাত সংসার, ভাল ভালই যেত দিনগুলি। নদীর পার্শ¦বর্তী এলাকার সাধারণ মানুষগুলো মাছ ধরত পেলি জাল, তৌরা, জাকুই, ডারকীসহ নানা রকম পদ্ধতিতে। নদীতে নৌকা চলত পাল তুলে। তাছাড়া নদী পারের মানুষেরা এপার ওপার যাওয়ার জন্য তৈরি করত ছোট ছোট ডিংগী নৌকা। নদীর দু-ধারে ছিল আবাদি জমি। নদী থেকে পানি তুলে ফলানো হত নানা রকম ফসল। ক্রমে ক্রমে দু-ধার ভরাট হয়ে নদীটি এখন মৃতপ্রায় হয়ে গেছে।
এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে নদীকে দখলমুক্ত করা ও নদীকে ফিরে পেতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে বলে মনে করছেন সকলে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *