কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি : অটোরিক্সা চালক আজিদুল নিরীহ বাবা-মা’র ৩সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে। ২০১৬সালে কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করে। বয়সে তরুণ শান্ত নম্র বিনয়ী স্বভাবের আজিদুল। বাবা অটোরিক্সা চালায় তাই অভাবী সংসারে যোগান দিতে নিজেও অটোরিক্সা চালাতো। কিন্তু পারেনি বেশীদিন, তাকে নৃশংস ভাবে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সেই হত্যার ন্যায় বিচারের প্রতিক্ষায় আছে সন্তান হারা গরীব বাবা-মা।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের সাহাবাজ গ্রামের শহিদুল ইসলাম এর পুত্র আজিদুল ইসলাম(২০) কে বিগত ২০১৬সালের ২৭সেপ্টেম্বর রাত অনুমান ১০টার সময় যাত্রীবেশে কৌশলে অটোরিক্সাসহ কাউনিয়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ডেকে নিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। লাশ মাঠ সংলগ্ন পুকুরে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রেখে অটোরিক্সাটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে অটোরিক্সাটি স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে শহীদবাগ ইউনিয়নের স্বাব্দী এলাকা থেকে উদ্ধার করে নিহতের বাবা। সেই সুত্র ধরে ছেলের খোজ করতে করতে উক্ত স্থানে আজিদুলের লাশ দেখতে পায়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। নিহতের বাবা বাদী হয়ে কাউনিয়া থানায় হলদীবাড়ী গ্রামের জিল্লুর রহমানের পুত্র ফারুক হোসেন(২০) সহ অজ্ঞাতনামা মামলা দায়ের করে।
এ হত্যাকান্ডটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় এর দায়িত্ব পায় রংপুর পুলিশ বুর্যো অব ইনভেষ্টিগেশন(পিবিআই)। দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র ১০দিনে রংপুর পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওসারের নির্দেশক্রমে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক লুৎফর রহমান সঙ্গী ফোর্সসহ হত্যার মুল অভিযুক্ত ফারুককে কক্সবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। আটক ফারুকের তথ্যমতে খোপাতী গ্রামের সুরুজ্জামানের পুত্র মাজেদ(১৯), হলদীবাড়ী গ্রামের ওমর আলীর পুত্র বাবু(১৯), স্বাব্দী গ্রামের কাজিমুদ্দিনের পুত্র আসাদুল(২০) কে কাউনিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে রংপুর পিবিআই। পরে জড়িত থাকার অভিযোগে খোপাতি গ্রামের সুরুজ্জামানের পুত্র মোজাম্মেল(২২) ও বকুলতলা গ্রামের খয়ের উদ্দিনের পুত্র জাহাঙ্গীর(২৮) কে গ্রেফতার করে।
মামলার রহস্য উদঘাটনে নামে রংপুর পিবিআই। ঘটনাস্থলের ক্রাইমসিন পরিদর্শন পুর্বক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহারিত চাকু, মোবাইল ও অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করে। মামলার সাক্ষীর জবানবন্দিসহ আটককৃত আসামীরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বলে জানা যায়। ১বছর অতিবাহিত হলো, আশা নিয়ে ন্যায় বিচারের প্রতিক্ষায় সন্তান হারা অসহায় বাবা-মা। এরই মধ্যে সহযোগীতায় অভিযুক্ত মোজাম্মেল ও জাহাঙ্গীর জামিনে মুক্তি পেয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িত বাকী আসামীরা রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে। সে সময় প্রেস ব্রিফিং করে আজিদুল হত্যা’র আসল রহস্য উদঘাটনের দাবী জানায় রংপুর পিবিআই।
নিহত আজিদুলের বাবা শহিদুল ইসলাম আইনের প্রতি আস্থা রেখে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, ছেলেকে তো আর পাবো না। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের দৃর্ষ্টান্ত মুলক শাস্তি ফাসি চাই।
আজিদুল হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রংপুর পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক লুৎফর রহমান জানান, অটোচালক আজিদুল হত্যা একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড। মামলাটি তদন্ত শেষে রহস্য উদঘাটন করে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেছি। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।