কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে বোরো ধান ক্ষেতে ব্যাপকহারে ‘নেক ব্লাষ্ট’ রোগের আক্রমন দিশেহারা কৃষকরা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রাম জেলার সর্বত্রই ২৮জাতের বিড়ি বোরো ধান ক্ষেত ‘নেক ব্লাষ্ট’ রোগে আক্রান্ত হয়ে শীষের গোড়া পচে সাদা ও তামাটে বর্ন হয়ে পরেছে। শেষ সময়ে ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা ও পাকার মত হওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় পরেছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ শওকত আলী জানান, ‘নেক ব্লাষ্টার’ একটি ছত্রাক জাতীয় রোগ। ‘জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে আগাম বৃষ্টিপাতের ফলে নাগেশ্বরী, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলায় ২৮ জাতের বোরো ধান ক্ষেত ‘নেক ব্লাষ্টার’ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকা থেকে ধান গবেষনা বিভাগের বিশেষজ্ঞ দল সরেজমিন এসে আক্রান্ত ধানের স্যাম্পল নিয়ে গেছে। আমরা কৃষকদের ছত্রাকনাশক নাটিভো, ট্যুপার, অমিষ্টারটপ স্প্রে করতে পরামর্শ দিচ্ছি। জেলায় কত হেক্টর জমির ধান ক্ষেত নেক ব্লাষ্টার রোগে আক্রান্ত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে সঠিক তথ্য দিতে পারবো না। তবে সব উপজেলা থেকেই রির্পোট পাচ্ছি’ ২-৩‘শ হেক্টর হতে পারে’।
নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ, হাসনাবাদ, কালীগঞ্জ, সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নগুলোতে নেক ব্লাষ্টার ছত্রাক রোগ ব্যাপকহারে আক্রমন করেছে। সরেজমিন নাগেশ্বরী পৌরসভার কাছারী পয়রাডাঙ্গা, বোয়ালের ডারা, পয়রাডাঙ্গা ও বালাসীপাড়া গ্রামে ঘুরে দেখা যায় বোরো ধান ক্ষেতগুলোর শীষের গোড়া পচে শুকিয়ে সাদা ও পাকার মত হয়ে গেছে। শীষে কোন দানা নেই।
পয়রাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন, শাহাজালাল, আহমদ আলীসহ গ্রামবাসী জানান, তারা পাশ্ববর্তি ব্র্যাক অফিসের বীজ থেকে চারা করে যে সব কৃষক বোরো ধান আবাদ করেছে তাদের সবার ক্ষেতের একই অবস্থা। কৃষি বিভাগের লোকজনের পরামর্শে আক্রান্ত ধান ক্ষেতে নাটভো ও ছিলিয়া জিল দু‘বার করে স্প্রে করেও কোন লাভ হচ্ছে না। কৃষক শাহাজালাল তার ৩বিঘা জমির ২৮ জাতের বোরোধান ক্ষেত ঘুরে দেখান। তার পুরো জমির ধানের শীষের গোড়া পচে শুকিয়ে পাকার মত হয়ে গেছে।
কাছারী পয়রাডাঙ্গাসহ আশ পাশের পুরো এলাকার প্রায় ৫০একর জমির বোরো ধানের শীষের গোড়া পচে শুকিয়ে সাদা ও পাকার মত হয়ে গেছে।
বালাসি গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক আজিজার রহমান বলেন, ‘মুই গ্রামীন ব্যাংক থাকি ১০হাজার টাকা লোন নিয়া ব্র্যাকের বিচন (বীজ) কিনি মানষের দুই বিঘা জমি আদি(বর্গা) আবাদ করছং। মোর সেই ভুইয়ের ধানের শীষ সাদা হয়া গেইছে। এক কেজি ধানও পাবার নোয়াং। মোর এ্যালা কি হবে? সরকারের কাছে মুই ক্ষতিপুরন চান’।
নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘প্রকৃতির বিরুপ আবহাওয়া জনিত কারনে এবার আগাম বৃষ্টি পাত হয়েছে। এর ফলে ধানের শীষের গোড়া পচে শীষ খাদ্য ও পানি না পেয়ে শুকিয়ে ‘নেক ব্লাষ্টার’ ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয়েছে। ওই রোগের শুরুতে ছত্রাক নাশক নাটভো, ট্যুপার, অমিষ্টার টপ, ছিলিয়া জিল ঔষুধ ¯েপ্র করলে প্রতিরোধ করা যায়। নাগেশ্বরীর প্রায় এলাকা থেকে একই খবর পাচ্ছি। কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীদের সার্বক্ষনিক কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছত্রাক নাশক ¯েপ্র করার পরামর্শ দিতে নির্দ্দেশ দেয়া হয়েছে’।