দিনাজপুর
কয়লা উত্তোলন বাড়াতে চায় সরকার
পার্বতীপুর প্রতিনিধি, দিনাজপুর : সরকার দেশের খনি থেকে কয়লার উত্তোলন প্রক্রিয়া বাড়াতে চায়। সরকার প্রথমে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উত্তোলন বাড়ানোর জন্য এবং ফুলবাড়ী খনি এলাকায় সরকারীভাবে সমীক্ষা চালিয়ে একটি তথ্যভান্ডার তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সুত্র বলেছেন, বড়পুকুরিয়ায় বিদ্যমান খনি এলাকায় সমীক্ষা চালানোর জন্য একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করার জন্য বলা হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানি (বিসিএমসিএল) শিগগিরই এব্যাপারে প্রযোজনীয় কার্যক্রম গ্রহন করবে। আর ফুলবাড়ীতেএশিয়া এনার্জির চিহ্নত খনি এলাকায় সমীক্ষা চালাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ভূতাত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। এব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে জিএসবিকে প্রয়োজনিয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সুত্র জানায়, ফুলবাড়ী খনি এলাকায় এশিয়া এনার্জির পরিচালিত সমীক্ষার প্রতিবেদন সরকারের কাছে রয়েছে। কিন্তু সরকার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমীক্ষা চালিয়ে ক্ষেত্রটি সম্পর্কে সামগ্রিক একটি ধারনা লাভ করতে চায়। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বড়পুকুরিয়ায় বিদ্যমান খনিটিতে বর্তমানে যে উত্তোলন ব্যবস্থা (স্যাফট) রয়েছে, সে রকম আরও একটি নতুন স্যফট করা যায় কিনা, সে বিষয়ে সম্ভব্যতা যাছইায়ের জন্য সমীক্ষার উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা করা হলে খনিটি থেকে কয়লা উত্তোলন বাড়ানো সমম্ভব হবে। সচিব আরও বলেন, ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্র সম্পর্কে সরকারের নিজেস্ব কোন তথ্য নেই। একটি বিদেশি কোম্পানির সমীক্ষা প্রতিবেদন সরকারের কাছে আছে। কিন্তু সরকার চায় নিজেদের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে খনিটি সম্পর্কে পরবর্র্তী সিদ্ধান্ত নিতে জিএসবিকে বলা হয়েছে সেই লক্ষে ফুলবাড়ীতে একটি সমীক্ষা চালানোর জন্য, যাতে সেখানকার সার্বিক তথ্য পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিএসবির মহাপরিচালক মোঃ নিহাল উদ্দিন বলেন, তারা ফুলবাড়ীর খনি এলাকায় ভূপৃষ্টের একটি মানচিত্র (সারফেস ম্যাপিং) তৈরি করবেন। কয়লা খনি এলাকার কোথায় কতটা জনবসতি আছে, কোথায় কতটা বনভুমি, খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পরিমান, আবাদি ও অনাবাদি জমির পরিমান প্রভৃতি নির্ধারনের জন্য এ জরিপ চালানো হবে। জিএসবির মহাপরিচালক বলেন, এছাড়া কয়েকটি কুপ খনন (বোরহোল) করে খনির অবস্থান, ভূগর্ভে কয়লার আবস্থান, সম্ভাব্য মজুদ প্রভুতি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজটি শুরু করবেন। সরকার বিদ্যুৎ খাতের নতুন মহাপরিকল্পনা (পিএসএমপি) প্রণয়নের যে কাজ শুরু করেছে তাতে ২০৪০ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মোগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঐ ৬০ হাজার মেগাওয়াটের ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৭ হাজার মোগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে কয়লা ভিত্তিক কেন্দ্র থেকে। এর মধ্যে আমদানি করা কয়লা যেমন থাকছে, তেমনি দেশীয় কয়লার ব্যবহার বাড়ানোরও পরিকল্পনা থাকছে। ঐ পরিকল্পনা অনুযায়ীই জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্র্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্ঠিক অর্থনৈতিক বিবৃতি ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৭-১৮ শীর্ষক প্রতিবেদনে কয়লাক্ষেত্র উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকরের কথা ঘোষনা করেছেন। সেখানে তিনি বলেন জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পর অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লা ক্ষেত্রের উন্নয়ন। সরকার এই নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই দেশের কয়লাখনি থেকে উত্তোলন বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে মন্ত্রনালয়ের সুত্রগুলো জানিয়েছেন ।
বাংলাদেশেরপত্র/এডি/এ