Connect with us

গাইবান্ধা

গাইবান্ধায় গৃহবধুকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন, স্বামীসহ দুইজন আটক

Published

on

gaibandhaগাইবান্ধা প্রতিনিধি: যৌতুকের দাবী মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় গাছের সাথে বেঁধে নির্মম ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে গৃহবধু আতিয়াকে। নির্মম ও বর্বর ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার মধ্য ফলিয়া গ্রামে। এ ঘটনায় পুলিশ আতিয়ার স্বামী ফারুক ও ফারুকের ভাই জাহিদুল ইসলামকে আটক করে।
নির্যাতনের নায়ক হলেন পাষন্ড স্বামী ফারুক তার ভাই রশিদ ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। দিনের বেলা প্রকাশ্যে গাছের সাথে বেধে নির্যাতনের খবর পেয়ে স্থানীয় এক মেম্বর বাচ্চু মিয়া তাকে শনিবার রাতে উদ্ধার করেন। কিন্তু পরদিন রোববার বিকেলে গ্রাম্য শালিশের আশ্বাস দিয়ে ওই নারীকে থানা পুলিশ করতে দেয়া হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামবাসী জানায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার মধ্য ফলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল¬্যাহ সরকারের মেয়ে আতিয়া বেগম (২৮) এর ১০ বছর আগে তার বিয়ে হয় একই গ্রামের মোজা মিস্ত্রির ছেলে ফারুক হোসেনের সাথে। বিয়ের সময় আতিয়ার বাবা তার মেয়ের সুখের কথা ভেবে যৌতুক হিসাবে জামাই ফারুককে ৮০ হাজার টাকা দেন। বাকি রাখেন ২০ হাজার। এই ২০ হাজার টাকা আর দেয়া হয়নি। ফারুক মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছিল। সুখেই কাটছিলো তাদের সংসার। ১০ বছর সংসার জীবনে তাদের ২ সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্ম গ্রহণের পর থেকেই ফারুকের সাথে আতিয়ার যৌতুকের বাকি ২০ হাজার টাকা পাওনা নিয়ে প্রায়ই দু’বছর ধরে কথা কাটাকাটি হতো। একপর্যায়ে ২০১৩ সালে ফারুক স্ত্রী আতিয়া ও তার দুই সন্তানকে রেখে কাজের কথা বলে ঢাকায় চলে যায়। এরপর ফারুক আর কোন খোজ খবর নিতেন না স্ত্রী সন্তানের। শ্বশুর বাড়িতে বোঝা হয়ে খেয়ে না খেয়ে ছিল আতিয়া। একপর্যায়ে পেটের তাগিদে অন্যের বাড়িতে কাজ করে পেটের খাবার যোগার করে। কিন্তু স্বামী ফারুক তার ভরন পোষনের জন্য কোন টাকা না দিয়ে বাড়িতেও আসতেন না। সে তার কর্মস্থল থেকে তার পিতামাতা ও ভাইবোনের নামে টাকা পাঠাতো। স্বামীর প্রতিক্ষায় দীর্ঘদিন পেটে কষ্ট দিয়ে সন্তানসহ মাটি কামড়ে থাকার পর বাধ্য হয়ে ২০১৫ সালে আতিয়া তার বাবার সংসারে চলে যায়। বাবার সংসারে নিজের দুই সন্তানকে নিয়ে বোঝা হয়ে থাকে। এতো কষ্টের কথা শুনেও স্বামী ফারুক ও তার ভাই বোন ও মা বাপের মন গলেনি। তারা শুধু বলতো যৌতুকের বাকি ২০ হাজার টাকা না দিলে ফারুক আর বাড়িতে আসবে না। সে বিয়ে করে অন্যত্র থাকবে। ঈদের আগে আতিয়া শুনতে পায় যে, তার স্বামী ফারুক বাড়িতে এসেছে। তারপর তার স্বামীর দাবী নিয়ে আতিয়া তার দুই সন্তানকে নিয়ে পিতার বাড়ি থেকে শনিবার বিকেলে স্বামী ফারুকের বাড়িতে যায়। তাকে দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে স্বামী ফারুকসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তারা যৌতুকের টাকা নিয়ে এসেছে কিনা আতিয়ার কাছে জানতে চায়। কিন্তু আতিয়া টাকা নিয়ে আসে নাই বলার সাথে সাথে তারা ক্ষেপে যায়। তারপর দেবর সঞ্জু, সুমন, আব্দুর রশিদসহ বাড়ির লোকজন তাকে ধরে রশি দিয়ে বেধে ফেলে। তারপর টেনে হেচড়ে প্রকাশ্যে বাড়ির পাশে নিয়ে গাছের সাথে বেধে বেধড়ক মারপিট করে। মারপিটে তার অবস্থার অবনতি হলে শনিবার রাতে নব নির্বাচিত ইউপি মেম্বর বাচ্চু মিয়া লোকজন নিয়ে তাকে উদ্ধার করে। হাত পায়ের বাধন খুলে দেয়। তারপর গ্রাম্য শালিশের বিচারের আশ্বাস দেয়। রোববার বিকেলে বোয়ালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এএম মাজেদ আব্দুল্যাহ, মেম্বর বাচ্চু মিয়া ও স্থানীয় গ্রামবাসিদের নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষের সমঝোতায় সংসার করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পুলিশ গোপন সুত্রে খবর পেয়ে বৈঠক থেকে দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং আতিয়াকে উদ্ধার করে গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *