Connect with us

আন্তর্জাতিক

গান্ধী, নেহরুদের প্রেম-যৌনতা নিয়ে ভারতে চর্চা মানা

Published

on

neharuজাওয়াহারলাল নেহ্‌রু এবং এমকে গান্ধী

অনলাইন ডেস্ক: ভারতে গান্ধী-নেহরু বা বাজপেয়ীর মতো জাতীয় রাজনীতিকদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রেম বা যৌনতা নিয়ে লিখে তোপের মুখে পড়েছেন আম আদমি পার্টির নেতা ও প্রধান মুখপাত্র আশুতোষ।
দিল্লির যে মন্ত্রী যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে বরখাস্ত হয়েছেন, তার সমর্থনে নিজস্ব ব্লগে আশুতোষ লিখেছিলেন, ভারতের সমাজ যদি গান্ধী-নেহরুর মতো জাতীয় নায়কদের সব সম্পর্ক মেনে নিতে পারে, তাহলে দুজন প্রাপ্তবয়স্কর মধ্যে নিজেদের সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক হলে অসুবিধা কোথায়?
এরপরই কংগ্রেস ও বিজেপি একযোগে আশুতোষকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছে, জাতীয় মহিলা কমিশনও তাকে তলব করেছে। গোটা ঘটনায় নতুন করে এই প্রশ্নটাই উঠে আসছে যে জাতীয় নায়কদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ভারত কি মাথা ঘামাতেও রাজি নয়?
গত সপ্তাহে আম আদমি পার্টির সিনিয়র নেতা আশুতোষ লেখেন, “গান্ধীজি-র সঙ্গে সরলা চৌধুরী নামে এক মহিলার সম্পর্ক নিয়ে কংগ্রেস নেতারা ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।”
“রবীন্দ্রনাথের দূর সম্পর্কের আত্মীয় সরলা-কে গান্ধী বলেছিলেন তার আধ্যাত্মিক স্ত্রী। এতে গান্ধীর স্ত্রী কস্তুরবাও ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়েন, পরে কংগ্রেস নেতাদের চাপে গান্ধী সরলাকে ছাড়তে বাধ্য হন। আর তা ছাড়া দুই ভাইঝির পাশে নগ্ন হয়ে শুয়ে তার ব্রহ্মচর্য পরীক্ষার কথা তো সবারই জানা।”
প্রত্যাশিতভাবেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে কংগ্রেস। দলের টম ভারাক্কান বা অজয় মাকেনের মতো নেতারা আশুতোষকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছেন।
গান্ধীর সমাধিস্থল রাজঘাটে গিয়ে তাঁকে সম্মান জানিয়ে এসে যে দল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, সেই আম আদমি পার্টি কীভাবে তাঁকেই অপমান করার সাহস পায়, সে প্রশ্নও তুলেছেন তারা – এবং প্রতিবাদ করেছেন বিজেপি নেতা তথা সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর চরিত্র হননেরও।

নেহরুর সঙ্গে এডুইনা মাউন্টব্যাটেনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক এখন রূপকথা।

ওই একই ব্লগে নেহরুর সঙ্গে তাঁর অসংখ্য মহিলা সহকর্মী ও এডুইনা মাউন্টব্যাটেনের প্রেমের কথাও উল্লেখ করেছেন আশুতোষ।
বাজপেয়ী সম্পর্কে লিখেছেন, “পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন অবিবাহিত হলেও তিনি ব্রহ্মচারী নন – এবং কলেজ জীবনের বান্ধবীর সঙ্গে বাজপেয়ীর একসঙ্গে থাকা নিয়ে সমাজ কখনও আপত্তি তোলেনি।”
যথারীতি এতে ক্ষুব্ধ বিজেপিও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নাকভি বলছেন, “এগুলো মানসিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার প্রমাণ। যাদের দেশের ইতিহাস, ভূগোল, পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে কোনও ধারণা নেই তারাই এগুলো বলতে পারেন।”
বিজেপি এমপি মহেশ গিরি আরও একধাপ এগিয়ে জাতির পিতা গান্ধীর অপমানের জন্য আশুতোষের গ্রেফতার দাবি করেছেন।
বিজেপি ও কংগ্রেসের রাগের আরও একটা কারণ, আশুতোষ এই সব মন্তব্য করেছেন যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত এক মন্ত্রীর হয়ে সাফাই গাইতে গিয়ে – পরে যাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হতে হয়েছে।
ভারতে জাতির পিতা গান্ধী-র সঙ্গে একজন ধর্ষণকারীর তুলনায় অত্যন্ত ক্ষিপ্ত গান্ধীর নাতি তুষার গান্ধীও।
তুষার গান্ধী বলছেন, “গোটা পরিস্থিতি না-জেনে, শুধু কোনও বই থেকে দুচারটে লাইন টুকে গান্ধীর চরিত্রকে ব্যাখ্যা করা যায় না। ব্রহ্মচর্য নিয়ে বাপুর পরীক্ষা বা তার বিভিন্ন সম্পর্কর সঙ্গে বরখাস্ত হওয়া একজন মন্ত্রীর যৌন সম্পর্কের তুলনা টানা কতটা সঙ্গত দেশই তার বিচার করবে।”
তাহলে কি ভারত তার জাতীয় রাজনীতিকদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনও সমালোচনাতেই আগ্রহী নয়? দিল্লি ইউনিভার্সিটির প্রবীণ অধ্যাপক নির্মলাংশু মুখার্জির মতে উত্তরটা হ্যাঁ, আর তার কারণও আছে।
অধ্যাপক মুখার্জি বলছেন, “ভারতে রাজনীতি যত না ব্যক্তিকেন্দ্রিক, তার চেয়ে বেশি ইস্যুকেন্দ্রিক এবং মানুষঘেঁষা। তা ছাড়া একটা সামাজিক রক্ষণশীলতা তো আছেই। সাধারণভাবে রাজনীতিকদের ব্যক্তিগত জীবনে ভূমিকা নিয়ে মানুষের আগ্রহটা ততটা নয়, যতটা তাদের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে!”
পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে বুঝে আম আদমি পার্টিও ওই ব্লগকে এখন আশুতোষের ব্যক্তিগত মত বলে দূরত্ব বাড়াচ্ছে। আর স্পর্শকাতর ওই সব মন্তব্যের জেরে আশুতোষের রাজনৈতিক কেরিয়ারই এখন প্রশ্নের মুখে!

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *