দেশজুড়ে
গুলশান হামলায় জড়িত দুজনের বাড়ি বগুড়ায়
বগুড়া প্রতিনিধি: গুলশানে জঙ্গি হামলায় জড়িত দুইজন বগুড়ার বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। পুলিশের তালিকায় বাঁধন নামের ওই জঙ্গি স্থানীয়দের কাছে খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল অপরজন শফিকুল ইসলাম উজ্জল নামে পরিচিত।
খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েলের বাবা আবু হোসেন, মা পেয়ারা বেগম এবং বোন ও ভগ্নিপতি ছবি দেখে পুলিশের কাছে তার পরিচয় নিশ্চিত করে। অপরজন বগুড়ার ধুনট উপজেলার কৈয়াগাড়ী-বানিয়াজান গ্রামের মো. বদিউজ্জামানের ছোট ছেলে শফিকুল ইসলাম উজ্জল। বগুড়ার পুলিশ এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।
নিহত জঙ্গি সদস্য বাঁধনের বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর ইউনিয়নের বৃকুষ্টিয়া গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায়। স্থানীয় বিহিগ্রাম সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা থেকে আলিম পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন দুই বছর আগে। গত ৬মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ ছিল না। পরিবারের দাবি অভিমান করে সে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিল। একারণে তার বিষয়টি নিয়ে থানায় কোন অভিযোগ করেননি তারা।
পুলিশ সদর দফতর থেকে জঙ্গি বাঁধনকে বগুড়ার বাসিন্দা হিসেবে জানানোর পর রোববার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ তার বাবা-মা এবং বড় বোন হোসনে আরা এবং ভগ্নিপতি রঞ্জু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তারা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ এবং নিহতের ছবি দেখে তা খায়রুল ইসলাম পায়েল বলে নিশ্চিত করে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে হোসনে আরা ও রঞ্জুকে পুলিশ ছেড়ে দিলেও তার বাবা-মা তখনও পুলিশ হেফাজতেই ছিলো।
পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে হোসনে আরা ও রঞ্জু মিয়া জানান, তাদের নিয়ে গিয়ে ছবি দেখিয়ে পুলিশ জানতে চায় তাকে চিনতে পারছে কি-না। ছবি দেখে তারা নিশ্চিত করেছেন সেই খায়রুল ইসলাম পায়েল। সোমবার সকালে তাদের ছেড়ে দেয়া হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে খায়রুলের বাবা-মাকে বিকেল পর্যন্ত ছাড়া হয়নি।
শফিকুল ইসলাম উজ্জলের বাবা বদিউজ্জামান জানান, উজ্জ্বল এইচএসসি পাসের পর বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হয়। পরে সেখানে পড়ালেখা বাদ দিয়ে ঢাকার আশুলিয়া থানার শাজাহান মার্কেট এলাকায় মাদারী মাতব্বর কেজি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেয়। দুই বছর যাবত সে সেখানে শিক্ষকতা করছিল। ৬ মাস আগে সে একবার বাড়িতে আসে। সবাইকে বলে, আমি বেশ কিছুদিনের জন্য চিল্লায় যাচ্ছি। তার পর সে আর ফিরে আসেনি। তিনি আরো জানান, ঢাকায় ৬ জন গুলিতে মারা যাওয়ার ছবির মধ্যে একজন তার ছেলে উজ্জ্বল বলে সনাক্ত করেন।
নিহত জঙ্গি উজ্বলের বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের বানিয়াজান গ্রামে। ওই গ্রামের দরিদ্র কৃষক বদিউজ্জামানের তিন ছেলের মধ্যে উজ্বল সবার ছোট। বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে মাস্টার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে গত দুই বছর আগে সে ঢাকার আশুলিয়া থানার শাহজাহান মার্কেট এলাকার মাদারী মাদবর কেজি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেয়। পাশাপাশি সে লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছিল। সেই সুবোদে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় তার বড় ভাই গার্মেন্টস শ্রমিক আসাদুলের বাড়িতেই থাকতো উজ্বল। কিন্তু ৪মাস আগে তার ভাই আসাদুল গার্মেন্টের চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসলে উজ্বল আরেকটি বাসা ভাড়া নিয়ে চাকরি করছিলেন।
উজ্বলের বড় ভাই আসাদুল ইসলাম বলেন, গত ৬ মাস আগে উজ্বল ধুনটের বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকায় চিল্লার উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে তার সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সে কখন সবার অজান্তে এ কাজে জড়িয়ে পড়েছে তা আমাদের পরিবারের অজানা।
তবে এলাকার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক দিন আগে উজ্বল কালো পোশাক ও মাথায় পাগড়ি বেঁধে এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছে এবং ইসলামের কথা বলেছেন। কিন্তু তাদের কখনও ধারণা হয়নি ওইটাই ছিল আইএস এর পোশাক। ধুনট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পঞ্চানন দাস জানান, ঢাকায় যে ছয়জন সন্ত্রাসী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মারা গেছে, তাদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলও রয়েছে।
অপরদিকে বগুড়ার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গুলশানে জঙ্গি হামলায় জড়িত বাঁধনের বাড়ি বগুড়ায়। তার বাবা-মা ছবি দেখে তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।