Connect with us

জাতীয়

ফারাজকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল জঙ্গিরা

Published

on

Gulshan_Faraazগুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিহত ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আয়াজ হোসেনকে (২০) প্রথমে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল বন্দুকধারীরা। তাকে চলে যেতে বললে সে তার সঙ্গে থাকা দুজন মেয়ে বন্ধুকেও ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু তাদের একজন ভারতীয় ও আরেকজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় এবং তাদের পরনে পশ্চিমা পোশাক থাকায় বন্দুকধারীরা ওই দুজনকে ছাড়তে রাজি হয়নি। দুই বন্ধুকে না ছাড়িয়ে নিজেও চলে আসতে অস্বীকার করে ফারাজ। পরের দিন সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান শেষে ওই বেকারি থেকে যাদের লাশ বের করা হয়, সেখানে ফারাজের লাশও ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী একজনের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস-কে এ কথা জানিয়েছেন ফারাজের আত্মীয় হিশাম হোসেন। শনিবার সকালে বন্দুকধারীরা হিজাব পরিহিত কয়েকজন নারীকে মুক্তি দিয়েছিল।
নিউইয়র্ক টাইমস-কে জিম্মি দশার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন ওই বেকারিটির একজন শেফ সুমীর বরাই। যিনি নিজেও জিম্মিদশায় ছিলেন, পরে কোনোরকমে পালিয়ে বের হতে পেরেছিলেন।
শেফ সুমীর বরাই বলেছেন, বন্দুকধারীদের ভয়ে প্রথমে তিনিসহ সাত আটজন ওয়াশরুমে পালালেও পরে বন্দুকধারীরা তাদের অভয় দিয়ে বলে, বাঙালিদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমরা এখানে শুধু বিদেশিদের হত্যা করব।
সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখতে বন্দুকধারীদের দারুণ আগ্রহ ছিল বলে দাবি সুমীরের। এক পর্যায়ে স্টাফদের বেকারির ওয়াইফাই সংযোগও চালু করতে বলে তারা। এমনকি জিম্মিদের মোবাইল ফোনের সাহায্যে নিহতদের রক্তাক্ত লাশের ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট করে বন্দুকধারীরা।
শুক্রবার রাতে ঢাকার অন্যতম নিরাপদ এলাকা হিসেবে বিবেচিত গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ার ভেতরেই একটি স্প্যানিশ বেকারিতে কয়েকজন বন্দুকধারীর গুলিতে ২০ জন নিহত হয়। সেনাবাহিনী প্রথমে নিহতদের সবাইকেই বিদেশি নাগরিক হিসেবে দাবি করলেও পরে জানা যায় নিহতদের মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশিও আছেন। ফারাজ ছাড়া অন্য দুজন বাংলাদেশি হলেন- ঢাকার একটি আর্ট গ্যালারির সাবেক প্রধান ইশরাত আখন্দ ও ল্যাভেন্ডারের মালিকের নাতনী অবিন্তা কবীর।
বন্দুকধারীরা জিম্মিদের প্রথমে গুলি করে এবং পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বলে জানিয়েছেন সুমীর। বিদেশিদের একের পর এক হত্যা করলেও বন্দুকধারীরা বেকারির স্টাফ ও সেখানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি বলে দাবি করেন সুমীর।
একজন বন্দুকধারী পশ্চিমাদের পোশাক ও অ্যালকোহল পানের অভ্যাসকে ‘ইসলামের প্রচারে বাধা’ হিসেবে উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, তাদের কারণে স্থানীয়রাও এমন জীবনধারণে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
গভীর রাতের দিকে বন্দুকধারীরা অন্যান্য জিম্মিদের চা এবং কফি পরিবেশন করতে বলে। আর রাত সাড়ে তিনটার দিকে মুসলমান জিম্মিদের জন্য সেহেরিতে মাছ এবং চিংড়ি পরিবেশনের আদেশ দেয়।
বন্দুকধারীদের একেবারে কাছ থেকে দেখা ও তাদের সাথে কথোপকথনের অভিজ্ঞতা থেকে সুমীর বরাই বলেন, তারা খুবই শিক্ষিত এবং স্মার্ট। তাদেরকে দেখে কেউ মনে করবে না যে, তারা এমন একটা কাজ করতে পারে। সূর্যাস্তের আগে বন্দুকধারীরা বন্দীদের নিয়মিত নামাজ আদায় ও কোরআন পাঠ করতে বলে।
ভয়ঙ্কর সেই রাতের এক পর্যায়ে সুমীর বরাইসহ সাত আটজনকে বন্দুকধারীরা ওই ওয়াশরুমেই তালাবদ্ধ করে রাখে। সেসময়ই প্রথমবারের মতো সুমীর বাইরে থাকা তার আত্মীয়ের কাছে বাইরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে মেসেজ পাঠান। উত্তরে তার ওই আত্মীয় জানান, ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও কোনো অভিযান পরিচালনা করছে না।
সুমীর তখন ওই আত্মীয়কে তার অন্যান্য সহকর্মীদের নাম ও তার নিজের অবস্থান জানায়, যাতে তার সহকর্মীদের অবস্থান নিরাপত্তা বাহিনীকে জানায় এবং ওয়াশরুমের দেয়াল ভেঙে তাদের উদ্ধার করতে পারে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *