Connect with us

মতামত

জঙ্গিবাদের চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ আদর্শিক লড়াই অপরিহার্য–সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ:

Published

on

Primeministerমোহাম্মদ আসাদ আলী।।

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য: জঙ্গিবাদের চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ:
এসএসএফ- এর ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন যে, ‘বিশ্বে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কৌশল পরিবর্তন হচ্ছে দিন দিন। নানা ধরনের সংঘাত বাড়ছে। বাংলাদেশকে আমরা এই সংঘাত থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি। বিষয়টি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।’ তারপর ঠিক পরের সপ্তাহেই সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির যুগ্মকমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে প্রকারান্তরে সমর্থন করেই বললেন, গত দুই বছরে ইরাক, সিরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জঙ্গি তৎপরতার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনদের নানা কার্যক্রমে এ দেশেও জঙ্গি তৎপরতায় অনেকে উৎসাহিত হচ্ছে। আর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি তিনি বলেছেন তা হলো, জঙ্গিবাদ এ দেশ থেকে একেবারে নির্মল করা সম্ভব নয়। তবে আমাদের (আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর) অভিযানের কারণে তা নিয়ন্ত্রণে আছে। (প্রথম আলো অনলাইন, ২৮.০৭.২০১৫)। আমরা মনে করি- বর্তমানের বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিধানের স্বার্থে উপরোক্ত মন্তব্যগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়- আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ ইস্যুতে বাংলাদেশ পরিস্থিতি বিভিন্ন কারণে সম্পর্কিত এবং বিষয়টি বাংলাদেশের মৌলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই আশঙ্কা প্রকাশ পেয়েছে গোয়েন্দা কর্মকর্তার মন্তব্য থেকেও। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন তার মোকাবেলা তিনি কীভাবে করবেন তার অস্বচ্ছতা যেমন ভাবনার বিষয়, তেমনই আশঙ্কার বিষয় গোয়েন্দা কর্মকর্তার মন্তব্যটি যেখানে তিনি বক্রতার আশ্রয় না নিয়ে খুব সোজাভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও নির্মূল করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় প্রশ্ন হলো- নিরাপত্তা বিধানে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ যদি থেকেই থাকে, এবং প্রচলিত পন্থায় সেটা এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত করা গেলেও নির্মূল যদি সম্ভব না-ই হয়, তাহলে সেই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার নতুন কী পদ্ধতি অবলম্বন করবে?
আজ পৃথিবীর বিশাল ভূ-খণ্ড জঙ্গিবাদ নামক ভয়াবহ মহামারিতে আক্রান্ত। এ মহামারি যেন থামার নয়। পৃথিবীর বড় বড় রাষ্ট্রপ্রধানদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে জঙ্গিবাদ। মুসলিম নামধারী জাতিটির প্রত্যেকটি রাষ্ট্রনায়ক চিন্তিত ও শঙ্কিত। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে, নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, জঙ্গিদেরকে জেলে দেয়া হচ্ছে, সাজা বৃদ্ধি করা হচ্ছে, ফাঁসিতে ঝুলানো হচ্ছে; অর্থবল, অস্ত্রবল ও মিডিয়া- তিন শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আপাতদৃষ্টে এক অসম লড়াই চলছে পৃথিবীব্যাপী, কিন্তু ফলাফল- শুন্য। একজন জঙ্গি মরলে দশজন তৈরি হচ্ছে। ১৮ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে বিবিসিতে প্রকাশিত ‘বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ সূচক- ২০১৪’ রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ২০১২ ও ২০১৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের হার শতকরা ৬১ ভাগ বেড়ে গেছে। সেখানে আরও বলা হয়, বিশ্বে কেবল সন্ত্রাসের (জঙ্গিবাদের) তিব্রতাই বাড়ে নি, এর প্রসারও বেড়েছে। এদিকে চলতি বছরে জঙ্গিবাদের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- আগের বছরের তুলনায় ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে। আর চলতি বছরের ঘটনাপ্রবাহ থেকে এখনই নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের ঊর্ধ্বমুখী সূচকে এ বছরটিও নতুন মাত্রা লাভ করবে।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ: বাংলাদেশ পরিস্থিতি কীভাবে সম্পর্কিত?
ষোল কোটি মানুষের মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। তারা আল্লাহ, আল্লাহর রসুল ও ইসলামকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। এ অঞ্চলের মানুষের ধর্মের প্রতি টান হাজার বছর পুরানো। এটা তাদের রক্ত-মাংসের সাথে মিশে আছে। একে জীবন থেকে কোনোভাবেই আলাদা করা সম্ভব নয়। এই শুভ চেতনাই আজ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের দেশের জন্য। আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে এ দেশের বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠনের আদর্শ ও কর্মপদ্ধতিগত সমন্বয় রয়েছে- এ অভিযোগ বহু পুরনো। মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখলকারী আইএস যোদ্ধারা এখন কার্যত সারা বিশ্বের জঙ্গি ও জঙ্গিসমর্থকদের আদর্শিক ‘হিরো’তে পরিণত হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ কথিত জেহাদের নেশায় ছুটে যাচ্ছে ইরাক-সিরিয়ায়। ‘জেহাদী তামান্না’ বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও আছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে আইএসে যোগদানের উদ্দেশ্যে ইরাক যাবার পথে বিমানবন্দর থেকে কয়েকজনকে আটক করার ঘটনা ঘটেছে। আবার সম্প্রতি ব্রিটেনে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশদ্ভূত ১৩ সদস্যের একটি পরিবার আইএসে পাড়ি জমিয়েছে। চিন্তা বিষয় হলো- সরাসরি ব্রিটেন থেকে না গিয়ে তারা আইএস’এ গেছে বাংলাদেশ থেকে, এবং কিছুদিন পরে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে পরিবারটি দাবি করে যে, সেখানে তারা খুব শান্তিতে বসবাস করছে, নিরাপদে আছে। এতটা শান্তি ও নিরাপত্তা নাকি তারা কোথাও পায় নি।

আমরা জানি গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নিষ্পেষণ থেকে মানুষের মুক্তির জন্য যখন সমাজতন্ত্রের আবিষ্কার হলো, তখন সমাজতন্ত্রের মধ্যে মুক্তি আছে মনে করে পঙ্গপালের মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ সমাজতন্ত্রের শিখায় ঝাঁপ দিল। কিন্তু কিছুদিন পরেই তাদের স্বপ্নভঙ্গ হলো, তারা বুঝতে পারল যে তারা কড়াই থেকে লাফিয়ে চুলায় পড়েছে। এখন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের গণতান্ত্রিক হানাহানির বীভৎসতা থেকে মানুষ মুক্তি চাচ্ছে। এটাও চাচ্ছে কয়েক যুগ থেকে। সম্প্রতি আইএস মহানবীর ভবিষ্যদ্বাণীকৃত হাদিস (যদিও অনেক হাদিসের বিশুদ্ধতা নিয়ে খোদ হাদিসবেত্তাদেরই প্রচুর মতভেদ রয়েছে, হাদীসের নামে বহু দয়ীফ, জাল বা ভুয়া হাদীস প্রচলিত আছে) মিলিয়ে মিলিয়ে ইসলামী খেলাফতের নামে এমন একটি কৃত্রিম কাঠামো দাঁড় করিয়ে ফেলছে যে, ধর্মবিশ্বাসী মানুষদের মধ্যে একটি বড় অংশ মনে করছে আইএস এর মাধ্যমেই বিশ্বে শান্তি আসবে, ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে এবং পাশ্চাত্যের দুঃশাসন থেকে মানুষ চূড়ান্তভাবে মুক্তিলাভ করবে। সুতরাং এর দ্বারা এতে তারা একদিকে যেমন শান্তি পাবে, অন্যদিকে তারা উম্মতে মোহাম্মদী হতে পারবে, অর্থাৎ এটি তাদের ধর্মীয় কর্তব্য। ইতোমধ্যেই হাজার হাজার যুবক এই ধ্যানধারণা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে কথিত জেহাদ করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটছে ইরাক-সিরিয়ার পথে। আধুনিক পৃথিবীতে ধনে-সম্পদে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিল্প-সাহিত্যে, সামরিক শক্তিতে অর্থাৎ পার্থিব উন্নতির আইডল হিসেবে বিবেচিত হয় ইউরোপ। সেই ইউরোপ থেকে যখন দলে দলে ধর্মপ্রাণ মানুষ সমস্ত বাধার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে, প্রাণের মায়া ত্যাগ করে সিরিয়া-ইরাকে ছুটছে তখন আমাদের দেশের দারিদ্র-কষ্টে জর্জরিত সরলপ্রাণ ধর্মবিশ্বাসী মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা যেতেই পারে। এ কথা ভুললে চলবে না যে, এমনই এক ধরনের প্রেক্ষাপট অর্থাৎ আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে কথিত জেহাদ থেকেই এক সময় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল। জঙ্গিদের এই পথ যে ভুল, এই কোরবানি ও প্রচেষ্টার বিনিময়ে তারা যে আল্লাহর কাছ থেকে কিছুই লাভ করবে না, বরং তাদের দ্বারা ইসলামের শত্র“রাই লাভবান হচ্ছে এ কথা তাদেরকে কে বোঝাবে, সাধারণ মানুষকেই বা কে বোঝাবে?

এমনিতেই বিভিন্ন সময়ে উন্মাদনা সৃষ্টি করে কথিত জেহাদী তামান্না সৃষ্টি করা হয় বাংলাদেশে যা বার বার আমরা দেখেছি। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার ঘটনা এ দেশে অহরহ ঘটে। এছাড়াও রয়েছে মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত অর্থোপার্জনের দৃষ্টান্ত। এক কথায় আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করে থাকে এক শ্রেণির স্বার্থবাদী। তার উপর এই জঙ্গিবাদের অশুভ ছায়া। সরকার শক্তি প্রয়োগ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে তাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। অতি শক্তি সম্পন্ন গ্যাস বোতলের ঢুকিয়ে দিয়ে যেমন ছিপি দিয়ে আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়, ঠিক সেরকম করা হয়েছে। ফলে যতটুকু উপশম হওয়ার হয়েছে, কিন্তু নির্মূল হয়ে যায় নি। ঝুঁকি থেকেই গেছে। ধর্মের বিবিধ অপব্যবহারের এই সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এ কথা বলায় দোষের কিছু থাকে না যে, বাংলাদেশ ভয়াবহ বিপদের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। সাবধান! মাথার উপর কিন্তু চক্কর দিচ্ছে চিল!

শক্তি প্রয়োগের প্রচলিত পন্থায় জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব নয় কেন?
জঙ্গি বা জঙ্গি মনোভাবাপন্ন গোষ্ঠী আন্তরিকভাবে চায় যে তাদের জীবনে আল্লাহর আইন-বিধান প্রতিষ্ঠিত হোক। কোর’আনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তারা এমনভাবে অনুপ্রাণিত ও সংকল্পবদ্ধ যে তারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদেরকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে দিয়েছে। তারা কোনো পার্থিব স্বার্থে এ পথ বেছে নেয় নি। তারা আল্লাহকে, আল্লাহর রসুলকে ভালোবাসে ও পরকালে বিশ্বাস করেন। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পারলেই তারা চূড়ান্ত সফল, এর বিনিময়ে আখেরাতে জান্নাতে যেতে পারবে। এজন্য শরীরে বাঁধা বোমা ফাটিয়ে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে প্রাণ বিসর্জন দিতেও তারা কুণ্ঠিত হচ্ছে না, এবং এমন লোকের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে তাদের ধারণা (আকিদা) ভুল ও বিকৃত হওয়ার কারণে এরা বুঝতে পারছে না যে, তারা যে সন্ত্রাসের পথ গ্রহণ করেছে সেই পথে চললে তারা দুনিয়াও পাবে না, আখেরাতও পাবে না অর্থাৎ দুই কূলই হারাবে। যতদিন তারা তাদের এই ভুল না বুঝতে পারবে ততদিন শক্তি প্রয়োগ করে বড়জোর তাদের কার্যক্রমকে কিছু সময়ের জন্য স্তিমিত করা যেতে পারে, বন্ধ করা যাবে না। এ কথা যিনি বুঝবেন জঙ্গিবাদের সমাধান তার দৃষ্টিতে খুব কঠিন মনে হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তি তালেবান-আল কায়েদার মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে আফগানিস্তান থেকে ফিরে গেছে এবং নিজেদের অসফলতার কথা পুনঃ পুনঃ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন তাদের কর্তাব্যক্তিরা। বারাক ওবামা নিজে বলেছেন, “বুলেট-বোমা দিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা যাবে না, বিকল্প পন্থা খুঁজতে হবে।” তালেবান ও আল কায়েদার বিরুদ্ধে প্রায় এক যুগ লড়াই করার পর ঈঙ্গ-মার্কিন শক্তি অসহায়ের মতো এসব স্বীকারোক্তি করেছে। এর মাঝে তারা কী পরিমাণ শক্তি প্রয়োগ করেছে, কী অঢেল অর্থব্যয় করেছে তা বিজ্ঞ মানুষমাত্রই জানেন। বছর কয়েক আগের ইউরোপ-আমেরিকায় সংঘটিত বিরাট অর্থনীতিক মন্দার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল এই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অকল্পনীয় অর্থব্যয়। অথচ এত এত অর্থব্যয়ের পর, সামরিক শক্তিতে অপ্রতিরোধ্য বলে কথিত পরাশক্তিগুলো ব্যর্থতার গ্লানি বরণ করছে। সামরিক শক্তি, অর্থবল ও মিডিয়ায় সমৃদ্ধ বিশ্বের পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোই যদি শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগ করে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশের সরকার যে ব্যর্থ হবে তা বোঝাই যায়। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিকল্প পন্থা খোঁজার ঘোষণা দিয়েছেন ২০০৯ সালে (BBC, The STAR, 3 April, 2009), কিন্তু বিকল্প কোনো পন্থা না পাওয়ায় তারা আজও প্রচলিত শক্তি প্রয়োগের পন্থার উপরই নির্ভর করছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও পূর্বোল্লিখিত ভাষণে স্বীকার করেছেন যে, জঙ্গিরা নতুন নতুন কৌশল ধারণ করছে, সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগের পন্থাতেই কি সরকার সীমাবদ্ধ থাকবে? নাকি শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি নতুন কোনো সমাধানের খোঁজ করবে? শুধু শক্তি ও অর্থব্যয়ের ব্যর্থতার আরেক প্রমাণ হলো- খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান সরকার ও আফগান সরকার এখন তালেবানদের সাথে আলোচনা-পরামর্শের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করছে, যা আগে খুব কমই ঘটেছে।

সুতরাং বোঝা গেল, শক্তি প্রয়োগের প্রচলিত পন্থায় সম্পূর্ণভাবে জঙ্গিবাদ নির্মূল সম্ভব নয়। অথচ জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকার বরাবরই কেবল শক্তি প্রয়োগের নীতি অবলম্বন করে এসেছে। শক্তি প্রয়োগেরও দরকার আছে, একেবারে শক্তি ছাড়াও হবে না। শক্তি প্রয়োগ কখন ও কীভাবে করতে হবে এই বিষয়ে প্রবন্ধের শেষে আলোকপাত করা হবে। কিন্তু জঙ্গিবাদ মোকাবেলার মূল পন্থা ওটা নয়, সন্ত্রাসীদেরকে যদি কোর’আন হাদিস ও ইতিহাস থেকে যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে তাদের ভুল কোথায় এবং কেন তারা জীবন উৎসর্গ করলেও আল্লাহ-রসুলের সন্তুষ্টি লাভ করবে না, জান্নাত লাভ করবে না, কেবল তাহলেই তারা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড ত্যাগ করতে পারে। সেই সাথে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যেও ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে ব্যাপক গণজাগরণ তৈরি করতে হবে। সাধারণ মানুষের ঈমান বা ধর্মবিশ্বাস যতদিন না কল্যাণের পথে ব্যবহার করা যাচ্ছে, ধর্মব্যবসায়ী ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী ততদিন তাকে অকল্যাণের পথে ব্যবহার করতেই থাকবে। ঈমান আছে মানেই, ধর্মবিশ্বাস আছে মানেই তা ব্যবহৃত হবেই। তাই চেষ্টা চালাতে হবে অকল্যাণের পথে ব্যবহৃত না হয়ে মানুষের ঈমানী শক্তিকে জাতির কল্যাণের পথে ব্যয় করার। জঙ্গিরা যে ভুল পথে আছে তা তাদেরকে বোঝানোর জন্য ও সাধারণ মানুষকে ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সচেতন করার জন্য কোর’আন ও হাদিসভিত্তিক যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য, প্রমাণ ও যুক্তি আমাদের অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের হাতে আছে। এটা যে নিছক আশ্বাসবাণী নয়, প্রকৃতপক্ষেই জঙ্গিদেরকে ভুল প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট যুক্তি, প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে আছে, সেটা অতি স্বল্প পরিসরে আগামীকালের সংখ্যায় প্রকাশিত হবে ইনশা’আল্লাহ। (চলবে)

বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *