Connect with us

জাতীয়

জাগো হে নারী, জাগাও এ জাতি, কাটাও দুর্গতি

Published

on

সুলতানা রাজিয়া:

Untitled-141

নারী দিবেসে আশা করা হয় যে নারীরা তার মর্যাদা, সম্মানের কথা মনে করবে। নানারকম সভা, সেমিনার, আলোচনা ও বক্তৃতার মধ্যে দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। তারপর যা হবার তাই হয়। নারী তার চিরাচরিত অবস্থানেই ফিরে যায়। সেই চরম অবহেলিত, উপেক্ষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত একটি প্রাণীর জীবনচক্রে ফিরে যায়। তারা কি জানে তাদের প্রকৃত ইতিহাস কী? তাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী? নারীর সম্মান, মর্যাদা আর অধিকার তো স্বয়ং স্রষ্টাই সৃষ্টির সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেই নারী তার প্রকৃত ইতিহাস না জানার কারণে ভাগ্যচক্রে পড়ে দুয়ারে দুয়ারে অধিকার খুঁজে বেড়ায়।
সৃষ্টির প্রথম মানব আদম (আ.) কে সৃষ্টি করার পর স্রষ্টা তাঁকে স্বর্গে বা জান্নাতে থাকতে দিলেন। যেখানে খুশি যাবার, যা খুশি খাবার, যা খুশি করার অনুমতি দিলেন। অথচ স্বর্গ সুখের মাঝেও তিনি কীসের যেন অভাব বোধ করছিলেন। তারপর তাঁর প্রশান্তির জন্য, তাঁর নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য স্রষ্টা মা হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন। জান্নাতের সুখও যার অভাবে ব্যর্থ হয় গিয়েছিল সে-ই হলো নারী।
সুতরাং নারীই হলো পৃথিবীতে শান্তির নিয়ামক। নারীকে অশান্তিতে রেখে পৃথিবী কখনোই শান্তিময় হতে পারে না। অথচ সেই নারীই আজ বহু অন্যায় অশান্তির মূল। কেনো এমন হলো? প্রকৃত সত্য হলো- পুরুষশাষিত সমাজ এবং নারীও যখন ভুলে গেল কেন তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তখন থেকেই সে তার সমস্ত গুণ বৈশিষ্ট্য হারালো। তাকে ঠেলে দেওয়া হলো প্রতিকূল পরিবেশে, যে কাজ তার শরীর কাঠামোর সঙ্গে অনুকূল নয়, সেটাই নিষ্ঠুর সমাজ তার উপরে চাপিয়ে দিল। পরিণতিতে স্নিগ্ধ সৌরভে যে ফুল পরিবেশকে আমোদিত করতো, সেটাই হয়ে গেল বিশুষ্ক কণ্টকাকীর্ণ ক্যাকটাস। তার দৈহিক সৌন্দর্য, তার মিষ্টি কন্ঠস্বর, নারীসুলভ আচরণ, পোশাক-আশাক, বেশ ভুষা সব, সবকিছু হারালো। আর সেই সাথে হারিয়ে গেল স্রষ্টা প্রদত্ত সেই সম্মান ও মর্যাদা।
নারীর উৎসাহ, উদ্দীপনা, প্রেরণা, নারীর স্নেহ, মায়া, মমতা আর ভালোবাসার শক্তিতে পৃথিবীর অনেক অসম্ভাব্য কাজ সম্ভব হয়েছে। সেই নারী আজ প্রগতিবাদীদের দ্বারা পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে, আর ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা গৃহপালিত জীবে পরিণত হয়েছে। একদল পশ্চিমা সং®কৃতির অনুকরণে দৃষ্টিকটু পোশাক পরিয়ে উচ্ছৃঙ্খলতা ও নগ্নতার চরম সীমায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। আরেকদল চাইছে নারীদের কালো কাপড়ে ঢেকে শরীয়তের বেড়াজালে বন্দি করে রাখতে। আর কিছু নারী কূপমণ্ডূক ধর্মব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে অন্ধকার জগতে তাদের জীবনকে বিসর্জন দিয়েছে। নারীরা খুব কোমলমতি হয়, তাই সহজেই তাদেরকে প্ররোচিত করা যায়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আজ জঙ্গিবাদীরা নারীদের জান্নাতের লোভ দেখিয়ে জেহাদের কথা বলে প্ররোচিত করে সন্ত্রাসের পথে পা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। এতে অনেক নারী অন্ধকার জগতের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। এই দোটানা থেকে মুক্ত হয়ে কিছু নারী ঘর থেকে বের হয়ে চাকরি বাকরি করে, রাজনীতি করে সমাজের কিছু উচ্চ আসনে বসে ভাবছেন যে নারী তার মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। সত্যিই কি তাই? আপনার ঘর, আপনার সমাজ, আপনার দেশ কি আপনাকে মর্যাদার চোখে দেখে?
গণমাধ্যমের ভাষ্যমতে, নারীশিক্ষার জন্য জঙ্গিবাদীদের গুলিতে আহত হওয়ায় মালালা ইউসুফ জাইকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। পুরো বিশ্ব আজ তাকে চেনে। অথচ ১৪০০ বছর আগে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার যুগে, যখন কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো, সেই বর্বরতা থেকে মুক্তি দেবার জন্য, মানবজাতিকে শান্তি ও নিরাপত্তা দেবার জন্য যে সুমাইয়া (রা.) নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন, তাঁকে কয়জন চেনে? আহত লোকদের সেবা শুশ্র“ষার জন্য ফ্লোরেন্স নাইটেংগেল – মাদার তেরেসার নাম সবাই জানে, অথচ রুফায়দাহ (রা.) যিনি আহত লোকজনের সেবার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিলেন তাঁকে কতজন জানে? মক্কার ধনাঢ্য মহিলা ব্যবসায়ী ছিলেন আম্মা খাদিজা (রা.)। মানবতার কল্যাণের জন্য নিজের সমস্ত সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত খাদ্যের অভাবে পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন সেই ইতিহাস আমরা কয়জন জানি? সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের স্বামী, সন্তান, সংসার ছেড়ে উম্মতে মোহাম্মদী হয়ে আজীবন দুর্ধর্ষ সংগ্রাম করে গেছেন খাওলা (রা.), উম্মে আম্মারা (রা.), সুফিয়া (রা.) তাদের ইতিহাস আমাদের কয়জনের জানা? যে মা তার বুকের সন্তানকে নিজ হাতে সাজিয়ে সংগ্রামে ঠেলে দিয়েছেন, সেসব মায়ের কথা আমাদের ক’জনের জানা? এই সত্য ইতিহাস, নারীর এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস না জানার কারণে আজ দেড় হাজার বছরেও আমরা একজন সুমাইয়া (রা.), একজন উম্মে আম্মারা (রা.), একজন খাদিজা (রা.), একজন সুফিয়া (রা.)-র সাক্ষাৎ পাই নি। পাশ্চাত্য সভ্যতা এই কয়েক বছর আগে নারীদের সেনাবাহিনীতে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে বলছে, তারা নারীকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। অথচ দেড় হাজার বছর আগে ১০,০০০ হাজার সৈন্যের কমান্ডার ছিলেন আম্মা আয়েশা (রা.)। তাহলে আপনারাই বলুন কে নারীকে আগে অধিকার দিয়েছে? আজ সময় এসেছে নারীকে আবার জাগ্রত হতে হবে। জাগিয়ে তুলতে হবে এ জাতিকে। জাতির এ চরম ক্রান্তিলগ্নে নারীরা পারে মানবজাতিকে একসূত্রে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করতে।
হে নারী! জেগে ওঠো, জ্বলে ওঠো আরেকবার। স্নেহের আঁচল থেকে সন্তানকে, বাহুডোর থেকে স্বামীকে মুক্ত করে মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত হবার জন্য অনুপ্রাণিত করো। বিপন্ন মানবজাতিকে, বিপন্ন আমাদেরকে আবার জাগিয়ে তোলো। নিজের অধিকারের জন্য আর অরণ্যে রোদন না করে, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে অগ্রণী হও। নিজের অধিকার এমনিতেই ফিরে পাবে।

লেখক: হেযবুত তওহীদের সদস্য।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *