জাতীয়
সন্ত্রাসী হামলার পর গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের বর্তমান অবস্থা
অনলাইন ডেস্ক: গত চব্বিশ ঘণ্টা ধরে সারা পৃথিবীর নজর ছিল গুলশান-২ নম্বর এলাকার ৭৯ নম্বর সড়কের একটি ভবনের দিকে। সড়কটি পূব দিকে গিয়ে শেষ হয়েছে একটি ফটকে। এই ফটকটিই ‘হলি আর্টিজান বেকারি’ রেস্তোরার প্রবেশদ্বার। রেস্তোরাটির পেছনে একটি লেক।
শনিবার সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রেস্তোরাঁটি থেকে ৫০ মিটারের মত পশ্চিমে ব্যারিকেড দিয়ে সড়কটিতে যান বাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একদল পুলিশ সেখানে পাহারা দিচ্ছে। আর রয়েছে কয়েকজন সাংবাদিক আর বেশ কিছু জাপানী ও ভারতীয় সাংবাদিক।
বিকেল থেকেই ঢাকায় কখনো মুষলধারে, কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। সড়কটির দু’পাশের আবাসিক ভবনগুলো সুনসান। দেখে মনে হবে ভবনগুলো ফাঁকা কিংবা সব মানুষ একসাথে কোথাও বেড়াতে গেছে। অথচ শনিবার দুপুর পর্যন্তও এই সড়কটি ছিল লোকে লোকারণ্য।
সড়কটিতে গিজগিজ করছিল বহু পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, দমকল ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যারা।
ভবনগুলোর জানালায় তখন বহু আতঙ্কিত বাসিন্দার চোখ। আর সড়কে ছিল শত শত সাংবাদিক যাদেরকে ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি বড় অংশকেই হিমশিম খেতে হচ্ছিল।
কিন্তু সকালের কমান্ডো অভিযান শেষে বিকেল তিনটে নাগাদ যখন মৃতদেহগুলো ওখান থেকে সরিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন থেকেই ৭৯ নম্বর সড়কে ভিড় পাতলা হতে থাকে। এমনকি যেসব মানুষ তাদের নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে সেখানে এসেছিলেন, তারাও সরে যান।
শুধু হলি আর্টিজান রেস্তোরার ভেতরে আলামত সংগ্রহ করছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগের কর্মীরা। তবে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক যেন কাটছেই না।
হলি আর্টিজান রেস্তোরা যে সড়কে, সেখানে বেশ কিছু অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে অনেক বিদেশী নাগরিক বসবাস করেন। বিকেলে এদের একজন একটি ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন।
তিনি একজন রাশিয়ান নাগরিক। তার সাথে ছিল একজন দেহরক্ষী। সড়কে অবস্থানরত পুলিশের সঙ্গে তিনি কিছুক্ষণ কথা বলে আবার চলে যেতে উদ্যত হলে তার সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যাই। কিন্তু তিনি আমার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে একরকম ছুটে চলে যান সেখান থেকে। কিছুক্ষণ পর একটি গাড়ি আসে সড়কটির মুখে।
পুলিশ গাড়িটিকে বাধা দেয় এবং জানায়, এই সড়কে কোন গাড়ি ঢুকবে না। পরে এক ব্যক্তি, কোন দেশী ঠিক স্পষ্ট নয়, গাড়ি থেকে নেমে সাংবাদিকদের এড়াতে দ্রুত সেখান থেকে ভেতরে ঢুকে যান।
ওই এলাকার অল্প বাসিন্দাই আজ বিকেলে ঘর থেকে বেরিয়েছেন, কিন্তু যে ক’জন বেরিয়েছেন, তাদের সবার চোখেমুখেই আতঙ্ক ছিলো স্পষ্ট । সকালে জিম্মি ঘটনার অবসানের পরও সন্ধ্যে পর্যন্ত গুলশান এলাকার সড়কগুলো ছিল ফাঁকা।
গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা নয় দিনের ঈদের সরকারি ছুটি শুরু হলেও আজ অনেক বেসরকারি অফিস খোলা ছিল।
কিন্তু গুলশান এলাকায় যাদের অফিস তাদের অনেকের সাথেই টেলিফোনে কথা বলে জানা গেছে, তারা আজ অফিসেই আসেননি। এমনকি ঈদ সমাগত হলেও গুলশান এলাকার শপিং মলগুলোতেও আজ মানুষ খুব একটা কেনাকাটা করতে আসেননি।