ঢাকা
ডাব চুরির অপবাদ দিয়ে সাত বছরের শিশুর পা ভেঙ্গে দিল নির্যাতনকারীরা
খাইরুল সিকদার, আশুলিয়া: বর্তমানে একের পর এক বীভৎস কায়দায় শিশুহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। বিকৃত রুচির মানুষরূপি কিছু পশুর এমন অমানবিক, নিষ্ঠুর এই আচরণে হতবাক দেশবাসী। শিশু নির্যাতন রোধে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সভা, সেমিনার, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন এবং কঠোর থেকে কঠোরতর আইন প্রয়োগ করেও নির্যাতন থেকে মুক্তি পাচ্ছে না শিশুরা। দেশের আইন-প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে বীরদর্পে তারা একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে। সম্প্রতি এমনই এক পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকায়।
গত বৃহস্পতিবার আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকায় ডাব চুরির অপবাদ দিয়ে সাত বছরের পিতৃহীন এক শিশুকে ধরে নিয়ে গিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে পা ভেঙ্গে দেয় ওই এলাকার প্রভাবশালী দাইয়ান খান(৫২) এবং তার ছেলে রাসেল খান (২২)। নির্যাতিত পরিবার এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেনে নির্যাতনকারীরা অসহায় পরিবারটিকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিত শিশুটির নাম আশিকুর রহমান আশিক (৭)। সে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। তার মা সিমা আক্তার একজন গার্মেন্টস কর্মী।
জানা যায়, গত ২১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে বাসার পাশেই খেলার মাঠে খেলতে যায় আশিক। খেলারত অবস্থায় হঠাৎ করে দাইয়ান খান ও তার ছেলে রাসেল খান মাঠে থাকা বাচ্চাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় আশিককে তারা ধরে নিয়ে গিয়ে প্রায় ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। তাদের অমানবিক নির্যাতনে তার ডান পা ভেঙ্গে যায়।
আশিকের নানী সাজেদা বেগম জানান, তাকে টেনে হিচরে বাড়িতে নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে নির্মম নির্জাতন চালায় ওই নরপিশাচরা। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “সংবাদ পেয়ে ছুটে গিয়ে হাতে পায়ে ধরেও নির্যাতন থেকে বাঁচাতে পারলাম না আশিককে। তারা আমার নাতির পা টা ভেঙ্গে দিলো।” পরে শিশুটির মা সন্ধ্যায় গার্মেন্টস থেকে বাড়িতে ফিরে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
শিশু অশিকের মা সিমা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী নেই, আমার ছেলের নির্যাতনকারী দাইয়ান খান এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি ইতোমধ্যেই এলাকা ছাড়ার হুমকি-ধামকি দিতে শুরু করেছেন। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা এবং এর সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।”
সরেজমিনে গিয়ে সাংবাদিকরা অভিযুক্তদের সাথে কথা বললে তারা ঘটনা অস্বীকার করে জানায়, শিশুটি ডাব পারতে গেলে ধাওয়া খেয়ে গাছ থেকে পরে তার পা ভেঙ্গে যায়। সাত বছরের বাচ্চা কি করে বাউন্ডারি করা বাড়ির ভিতরের ডাব গাছে উঠেছে এমন প্রশ্ন করলে তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি তারা।
আশুলিয়া থানার ওসি মহসিনুল কাদির ঘটনা জানতে পেরে পরদিন শুক্রবার তদন্তের জন্যে এসআই শাহাদাত কে ঘটনাস্থলে পাঠান। ঘটনার তদন্তকারী এসআই শাহাদাত জানান, শিশু আশিকের অভিভাবকদের সাক্ষীসমেত থানায় আসতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত দাইয়ান খান ২০১৪ সালের শিমুল তলায় তিতাস গাড়ির ড্রাইভাড় পিটিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি এবং তার ছেলে একই মামলার দুই নম্বার আসামি। তারা দুইজনই এই হত্যা মামলায় জামিনে আছে।