Connect with us

খেলাধুলা

তামিমের ডাবল, ইমরুলের সেঞ্চুরিতে প্রথমবারের মত পাকিস্তানের সাথে টেস্ট ড্র করলো বাংলাদেশ

Published

on

স্পোর্টসডেস্ক:  দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবালের ডাবল সেঞ্চুরি, ইমরুল কায়েসের দেড়শ’ ও সাকিব আল হাসানের দায়িত্বপূর্ণ ব্যাটিং-এ পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্ট ড্র করলো বাংলাদেশে। ফলে ক্রিকেট ইতিহাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নবম মোকাবেলায় প্রথম টেস্ট ড্র’র স্বাদও পেল টাইগাররা। সব মিলিয়ে ৮৯তম টেস্টে এটি বাংলাদেশের ১২তম ড্র। এ ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বাংলাদেশের তামিম ইকবাল।

প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানে পিছিয়ে থেকে চতুর্থ দিনের মধ্যাহ্ন বিরতির কিছুক্ষণ আগে ব্যাটিং-এ নেমে রানের ফুলঝুড়ি ফোটান বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। ব্যাট হাতে রান তোলার ঝলকটা এতটাই বেশি ছিলো যে, দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর কার্ড ঝলমল করছিলো। তামিম ও ইমরুল দু’জনই তুলে নেন সেঞ্চুরি। তাতেই বিনা উইকেটে ২৭৩ রান তুলে স্মরনীয় দিনের ইতি টানেন তামিম-ইমরুল। দু’জনের ব্যাটিং কারিশমা ইঙ্গিত দিচ্ছিলো পঞ্চম দিনের রোমাঞ্চ। হতে পারে ড্র, হয়তো জয়ও। তবে প্রশ্ন ছিলো কোন পথে হাটবে বাংলাদেশ!! জয়টা যতটা কঠিন ছিলো, ড্র’টা বেশ সহজই ছিলো বাংলাদেশের জন্য।

পঞ্চম দিনের শুরুতে বাংলাদেশের লক্ষ্যের কথা বুঝা যায়নি। তবে দিনের শুরু থেকে বেশ সর্তকই ছিলেন তামিম ও ইমরুল। ফলে রান তোলার গতিটা তিন-এর কমই ছিলো। এর মাঝে দেড় শতাধিক রানের কোঠা স্পর্শ করেন দু’জনে। তামিমের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত হলেও, প্রথমবারের মত দেড়শ’ রানে পা রাখেন ইমরুল। আর ঐ রানেই কাটা পড়ে ইমরুলের নান্দনিক ইনিংসটি। পাকিস্তান স্পিনার জুলফিকার বাবরকে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে লং-অফে ক্যাচ দিয়ে ১৫০ রানে থামেন ইমরুল। তার ২৪০ বলের ইনিংসে ১৬টি চার ও ৩টি ছক্কার মার ছিলো। সেই সাথে তামিমের সাথে গড়ে উঠা ৩১২ রানে জুটিটিও ভাঙ্গে ইমরুলের। যা বাংলাদেশের পক্ষে যেকোন উইকেটে নতুন রেকর্ড। আর বিশ্বে দ্বিতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের ক্ষেত্রে এটি চতুর্থ।

ইমরুলের বিদায়ে মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন মোমিনুল। তার ব্যাটিং-এর শুরুটাও ছিলো ধীর গতির। তবে উইকেটে সেট হয়ে রান তোলার গতিটা বাড়ানো চেষ্টা করেছিলেন মোমিনুল। কিন্তু সেটি আর হতে দেননি পাকিস্তানের পেসার জুনাইদ খান। ব্যক্তিগত ২১ রানে জুনাইদের বলে বোল্ড হন মোমিনুল।

মোমিনুল ফিরে গেলেও নিজের ঢঙ্গে ব্যাটিং ঠিকই করে গেছেন তামিম। কখনো কিছুটা সময় দেখেশুনে খেলা, আবার কখনো প্রতিপক্ষ বোলারদের উপর চড়া হওয়া ছিলো তামিমের স্টাইল। তবে ইনিংসের ৯৩ ও ৯৪ ওভারে তামিমের ব্যাটিং ঢঙ্গটা হয়তো ভক্তরা খুব বেশি উপভোগ করেছেন। ৯৩তম ওভারে ইয়াসির শাহ’কে পর পর দু’বলে ছক্কা এবং ৯৪তম ওভারের চতুর্থ বলে জুনাইদকে ছক্কা হাঁকিয়ে বীরের বেশে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ডাবল-সেঞ্চুরির স্বাদ পান তামিম। আর মুশফিকুর রহিমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ডাবল-সেঞ্চুরির করার কীর্তি গড়েন তামিম।

ডাবল-সেঞ্চুরি করে মুশফিকুরকে ছুঁয়েও মন ভরেনি তামিমের। টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে মুশফিকুরের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২০০ রানটিও টপকে গেছেন তামিম। তাতে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে হয়ে গেছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোররা। ২৬৪ বলে ডাবল-সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া তামিম পরবর্তীতে নিজের ২৭৮তম বলে গিয়ে থামেন। ৪৪৮ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৭টি চার ও ৭টি চোখ জুড়ানো ছক্কায় ২০৬ রানে আউট হন তামিম।

দলীয় ৩৯৯ রানে তামিমের বিদায়ের পর বাংলাদেশকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে দায়িত্ব নেন মাহমুদুল্লাহ ও সাকিব। ওভার প্রতি সাড়ে তিনের উপর রান রেখে চতুর্থ উইকেটে ৬৪ রান যোগ করেন তারা। নামের পাশে ৪০ রান রেখে চার-বিরতির পর প্যাভিলিয়নে ফিরেন মাহমুদুল্লাহ। তখন অনেকাংশে নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যাচটি ড্র’র দিকেই এগোচ্ছে।

এমন অবস্থায় বাংলাদেশ হারায় পাঁচ নম্বর উইকেট। উইকেটে গিয়ে ৫ বল খেলে শুন্য হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। দলপতির পারফরমেন্সে খুশী হতে না পারলেও, মুশফিকুরের ব্যাটিং-এ যাওয়াটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মত। কারণ আঙ্গুলে ইনজুরির জন্য পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের বেশিভাগ সময়ই উইকেটের পিছনে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি মুশফিকুর।

মুশফিকুর বিদায় নিলেও, ষষ্ঠ উইকেটে দারুন এক জুটি গড়ে প্রথম টেস্ট ড্র নিশ্চিত করে ফেলেন সাকিব ও সৌম্য। ওভার প্রতি প্রায় সাড়ে চারের কাছাকাছি রান তুলে ৬০ রান যোগ করেন সাকিব ও সৌম্য। ৪৫ বলে ৩৩ রান করে সৌম্য আউট হলেও, আট নম্বরে নামা শুভাগত হোমকে নিয়ে দিনের খেলার শেষদিকে এগিয়ে যান সাকিব। তবে ১৩৬ ওভার শেষে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ড্র মেনে নিলে, ম্যাচটি অমিমাংসিতভাবেই শেষ হয়। ২৫৯ রানের লিডের সাথে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ছিলো ৬ উইকেটে ৫৫৫ রান। টেস্ট ইতিহাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস বাংলাদেশের । পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ।

টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৮তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া সাকিব অপরাজিত থাকেন ৭৬ রানে। ১০৪ বল মোকাবেলা করার পথে ৬টি চার ও ১টি ছক্কাও হাঁকান সাকিব। তার সঙ্গী শুভাগত অপরাজিত ছিলেন ২০ রানে। পাকিস্তানের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন জুনায়েদ ও হাফিজ। আগামী ৬ মে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ।

স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৩৩২/১০, ১২০ ওভার (মোমিনুল ৮০, ইমরুল ৫১, মাহমুদুল্লাহ ৪৯, ওয়াহাব ৩/৫৫)।
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ৬২৮/১০, ১৬৮.৪ ওভার (হাফিজ ২২৪, শফিক ৮৩, আজহার ৮৩, তাইজুল ৬/১৬৩)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস (চতুর্থ দিন শেষে ২৭৩/০, তামিম ১৩৮*, ইমরুল ১৩২)।
তামিম ইকবাল স্টাম্পড সরফরাজ ব হাফিজ ২০৬
ইমরুল কায়েস ক অতি (বাবর) ব জুলফিকার ১৫০
মোমিনুল হক ব জুনাইদ খান ২১
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এলবিডব্লু ব জুনাইদ ৪০
সাকিব আল হাসান অপরাজিত ৭৬
মুশফিকুর রহিম এলবিডব্লু ব হাফিজ ০
সৌম্য সরকার ক হাফিজ ব শফিক ৩৩
শুভাগত হোম অপরাজিত ২০
অতিরিক্ত লে বা-৪, ও-২, নো-৩ ৯
মোট ৬ উইকেট, ১৩৬ ওভার ৫৫৫

উইকেট পতন : ১/৩১২ (ইমরুল), ২/৩৪৫ (মোমিনুল), ৩/৩৯৯ (তামিম), ৪/৪৬৩ (মাহমুদুল্লাহ), ৫/৪৬৪ (মুশফিকুর), ৬/৫২৪ (সৌম্য)।
বোলিং :
বোলার ওভার মেডেন রান উইকেট অতিরিক্ত
জুনাইদ খান ২১ ৫ ৮৮ ২ নো-৩, ও-১
জুলফিকার বাবব ৩২ ১ ১২৫ ১ —-
মোহাম্মদ হাফিজ ২০ ০ ৮২ ২ —-
ওয়াহাব রিয়াজ ২০ ৩ ৭৫ ০ ও-১
ইয়াসির শাহ ৩০ ২ ১২৩ ০ —-
আজহার আলী ৬ ১ ২৬ ০ —-
আসাদ শফিক ৭ ০ ৩২ ১ —-
ফল : ড্র।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ০-০।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *