Connect with us

খেলাধুলা

দারুণ নৈপুণ্যে টাইগারদের বিশ্বকাপ শুরু আফগানদের বিপক্ষে ১০৫ রানের জয়

Published

on

glad after wicketস্পোর্টস ডেস্ক:
এগারতম ক্রিকেট বিশ্বকাপের শুরুটা অসাধারণ এক ম্যাচ জয়ের মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখলো বাংলাদেশ। ১০৫ রানের সহজ জয়ের সাথে সাথে এদিন টাইগারদের বেশকিছু চমৎকার পারফর্মেন্সও দেখলো বিশ্ববাসী। তাছাড়া ক্যানবেরায় নিজেদের দখলদারিত্বের ম্যাচে অতীতের ৩২ রানের পরাজয়ের প্রতিশোধও নিল মাশরাফি বাহিনী।
শুরুতে রানের গতি ভালো না থাকলেও সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে তোলে বাংলাদেশ। এরপর মাশরাফি বিন মুর্তজা, রুবেল হোসেনদের মারাত্মক বোলিংয়ে সহজ জয় নিশ্চিত করে তারা।
গত কাল ক্যানবেরার ম্যানুকা ওভালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শেষ বলে ২৬৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ৪২ ওভার ৫ বলে ১৬২ রানেই অলআউট হয়ে যায় প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাশরাফি, রুবেলের আগুন ঝরানো বোলিংয়ে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি আফগানিস্তানের। প্রথম তিন ওভারে মাত্র ৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। প্রথম ওভারে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে জাভেদ আহমাদি ও তৃতীয় ওভারে আসগর স্তানিকজাইকে স্লিপে মাহমুদুল্লাহর ক্যাচে পরিণত করে বিদায় করেন মাশরাফি। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে আফসার জাজাইকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন রুবেল। তিন পেসার মাশরাফি, রুবেল ও তাসকিন আহমেদের নিখুঁত লাইন-লেন্থের বোলিংয়ে রানের জন্য রীতিমত লড়াই করতে হয়েছিল আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের। চতুর্থ উইকেটে নওরোজ মঙ্গলের সঙ্গে ৬২ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টায় অনেকটা এগিয়ে যান সামিউল্লাহ সেনওয়ারি। এই রান করতে তারা খেলেন ১৯.৪ ওভার। মাহমুদুল্লাহর বলে স্কয়ার লেগ সীমানায় রুবেলের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে নওরেজের বিদায়ে ভাঙে আফগান প্রতিরোধ। এরপর সাব্বির রহমানের দারুণ থ্রোয়ে রান আউট হয়ে যান সামিউল্লাহও। ষষ্ঠ উইকেটে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি। নাজিবুল্লাহকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাদের ৫৮ রানের প্রতিরোধ ভাঙেন সাকিব। এরপরও রানের গতি বাড়াতে মরিয়া ছিলেন নবি, তবে খুব একটা সফল হননি তিনি। সর্বোচ্চ ৪৪ রান করা আফগান অধিনায়ককে সৌম্যর ক্যাচে পরিণত করে বাংলাদেশকে জয়ের দিকে নিয়ে যান অধিনায়ক মাশরাফি। নবির বিদায়ের পর বেশিদূর এগোয়নি আফগানিস্তানের ইনিংস। মিরওয়াইস আশরাফকে মাশরাফির ক্যাচে পরিণত করে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নেন সাকিব। হামিদ হাসানকে ফিরিয়ে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম উইকেট নেন তরুণ তাসকিন। এরপর আফতাব আলম রান আউট হয়ে গেলে স্বস্তির জয় পায় বাংলাদেশ। ২০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বাংলাদেশের সেরা বোলার।
এর আগে শুরুতে ভীষণ সতর্ক ছিলেন বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও এনামুল। দেখে-শুনে খেলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন এই দুই ব্যাটসম্যান। এক সময় আশরাফের বলে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষক জাজাইয়ের গ্লাভসবন্দি হয়ে তামিমের বিদায়ে ভাঙে ১৪.৩ ওভার স্থায়ী জুটি। আশরাফের পরের ওভারেই বিদায় নেন এনামুল। এলবিডব্লিউ হয়ে যান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পরে রিভিউ নিলেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলায়নি। ওপেনিং জুটি ভাঙলে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্য। তৃতীয় উইকেটে এই দুইজনে গড়েন ৫০ রানের জুটি। ষোড়শ ওভারে ৫০ রানে পৌঁছানো বাংলাদেশের ১০০ রান হয় ২৫তম ওভারের শেষ বলে। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে সৌম্যকে এলবিডব্লিউ’র ফাদে ফেলে ৯.১ ওভার স্থায়ী তৃতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন শাপুর জাদরান। আগের তিন ব্যাটসম্যানের মতো থিতু হয়ে আউট হন মাহমুদুল্লাহও। শাপুরের বলে জাজাইয়ের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। ৩০তম ওভারের প্রথম বলে মাহমুদুল্লাহ বিদায় নেয়ার সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ১১৯ রান। নেমেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করা সাকিবের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিক। তিনি রানের গতি বাড়াতে থাকলে একটু দেখেশুনে খেলা শুরু করেন সাকিব। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র আগে থিতু হয়ে যান দুই ব্যাটসম্যানই। ৩৫তম ওভার শেষে সাকিবের রান ছিল ২২ বলে ১৮ আর মুশফিকের ২০ বলে ২০। এই দুই জনের দাপুটে ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লে অর্থাৎ ৩৬ থেকে ৪০ এই পাঁচ ওভারে ৪৮ রান যোগ করে বাংলাদেশ। হাসানের স্লোয়ার বলে ব্যাটের কানায় লেগে সাকিব বোল্ড হলে ভাঙে ১১৪ রানের চমৎকার জুটি। ১৫.৩ ওভার বা ৯৩ বলে এই রান করেন সাকিব-মুশফিক। সাকিব, মুশফিকের জুটিই বাংলাদেশের সফলতম; এনিয়ে চার বার শতরানের জুটি গড়লেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই দুই সহযোদ্ধা। ৬৩ রান করা সাকিবের ৫১ বলের ইনিংসটি ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় গড়া। এই ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে চার হাজার রানের পৌঁছানোর কৃতিত্বও অর্জন করেন সাকিব। এক সময়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ২৩৩ রান। এরপর মাত্র ৩৪ রান যোগ করতে শেষ ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল। সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশের রানের গতিতে ভাটা পড়ে। সাব্বিরের দ্রুত বিদায় অস্বস্তি আরো বাড়ায়। নবির ফুলটাস ঠিকভাবে খেলতে না পেরে সামিউল্লাহ সেনওয়ারির হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ম্যাচ সেরা মুশফিকের চমৎকার ইনিংসটি। ৭১ রান করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ৫৬ বলের ইনিংসটি ৬টি চার ও ১টি ছক্কা সমৃদ্ধ। শেষ দিকে দ্রুত উইকেট হারানোয় সংগ্রহ আর বড় হয়নি বাংলাদেশের। আফতাবের করা শেষ ওভারে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন মাশরাফি। শেষ বলে তাসকিন বোল্ড হলে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের শাপুর, আশরাফ, আফতাব ও হাসান দু’টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৬৭ (এনামুল ২৯, তামিম ১৯, সৌম্য ২৮, মাহমুদুল্লাহ ২৩, সাকিব ৬৩ মুশফিক ৭১, সাব্বির ৩, মাশরাফি ১৪, মুমিনুল ৩, রুবেল ০*, তাসকিন ১; শাপুর ২/২০, আশরাফ ২/৩২, আফতাব ২/৫৫, হাসান ২/৬১)।
আফগানিস্তান: ৪২.৫ ওভারে ১৬২ (আহমাদি ১, আফসার ১, নওরোজ ২৭, আসগর ১, সামিউল্লাহ ৪২, নবি ৪৪, নাজিবুল্লাহ ১৭, আশরাফ ১৭, আফতাব ১৪, হাসান ১৪, শাপুর ২*; মাশরাফি ৩/২০, সাকিব ২/৪৩, তাসকিন ১/২৩, রুবেল ১/২৭, মাহমুদুল্লাহ ১/৩১)

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *