বিবিধ
নিউইয়র্কে চালকহীন ট্যাক্সি
রুপকথার গল্পের মতো শোনা গেলেও বাস্তবে রুপ নিতে চলছে চালকবিহীন টেক্সির আবিষ্কার। আগামী বছর নিউইয়র্কের রাস্তায় নামবে পাঁচ হাজার চালকবিহীন ট্যাক্সিক্যাব। চালকবিহীন এসব ট্যাক্সি রাস্তায় নামার ফলে ভবিষ্যতে অনেক বাংলাদেশি ট্যাক্সি চালকের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গত সোমবার নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো গুগল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে একটি চুক্তিতে সই করেছেন।
এর আগে ২০১৪ সালেও গুগলের সাথে এ নিয়ে একটি চুক্তি সই করেছিলেন ব্লাসিয়ো। শুরুতে ম্যানহাটান থেকে শুধু ব্র“কলিন এবং কুইন্সে চলবে ‘জিপি’ নামের গুগলের এই ট্যাক্সিক্যাব। ২০১৬ সালের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটিতে ড্রাইভার ছাড়াই চলতে যোগ্য ৫ হাজার ট্যাক্সি নামানো হচ্ছে। তবে এসব নুতন ট্যাক্সিক্যাবকে ভালো চোখে দেখছে না বাংলাদেশিরা।
কারণ নিউইয়র্কে লক্ষাধিক ট্যাক্সিচালকের প্রায় এক চতুর্থাংশ বাংলাদেশি। জানা গেছে, জিপার বা জিপ্পি নামের এই ইয়েলো ট্যাক্সির গতি নিয়ন্ত্রিত হবে স্মার্টফোনের মাধ্যমে। ট্যাক্সিতে একটি বাটন থাকবে-যেটি গুগলের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এই বাটনের মাধ্যমেই মাঝপথে ট্যাক্সি থামানো যাবে। ট্যাক্সিতে ওঠার পরই যাত্রীকে গাড়িতে থাকা স্মার্টফোনে বার্তা দিয়ে গন্তব্যের ব্যাপারে জানাতে হবে।
এক্ষেত্রে ইংরেজি না জানলেও যাত্রীকে বিপাকে পড়তে হবে না। কারণ স্মার্টফোনে ৮০টি ভাষায় বার্তা দেয়া যাবে। ইলেকট্রিক বায়ো ফুয়েলে চলা প্রতিটি ট্যাক্সিতে এটিএম এবং ‘ফুড ভেন্ডিং’ মেশিন থাকবে। যাত্রী পরিবর্তনের সময় ভাক্যুম মেশিনে গাড়ির ভেতর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্লিন হবে, যাতে কোনো দুর্গন্ধ না থাকে। সেন্সর পদ্ধতির মাধ্যমে রাস্তার রেডলাইট গ্রীনলাইট অনুসরণ করে এবং ডানে-বায়ের অন্যান্য গাড়ির গতি সমন্বয় করে যাত্রীকে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেবে।
নুতন এ ক্যাব চালু হলে যাত্রীরা শুধু একজন চালককে মিস করবে, সেইসঙ্গে টিপস প্রদান থেকেও রেহাই পাবে। আগামী বছরের শুরুতে ম্যানহাটান থেকে শুধু ব্রোকলিন এবং কুইন্সে চলবে ‘জিপ্পি’ নামের গুগলের এই ট্যাক্সিক্যাব। পর্যায়ক্রমে অন্য বরোতেও এর সেবা পাওয়া যাবে। এসব ট্যাক্সি বিক্রি হবে না, চালাতে হবে লিজ নিয়ে। অন্যান্য রেগুলার ক্যাবগুলোর চাইতে গুগলের এই জিপ্পি আরো কম সময়ে ও কম খরচে যাত্রী সেবা দিতে সক্ষম হবে। ৫০% বেশি দ্রত সার্ভিস দেবে এমনটা দাবী করেছে গুগল।
চালকবিহীন ট্যাক্সিক্যাব রাস্তায় নামানোর উদ্যোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্যাবচালকেরা। দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার ক্যাব চালকেরা বলেন, ক্যাব চালকদের পেটে লাথি দেয়ার এটি আরেকটি প্রক্রিয়া। এমনিতেই তারা অর্থকষ্টে রয়েছে। এটি চালুর পর তাদের বিকল্প কোনো পেশায় যাওয়ারও সুযোগ থাকবে না।
কিন্তু নিউইয়র্কের মেয়র ব্লাসিয়ো এসব সর্বাধুনিক ক্যাব সম্পর্কে বেশ উচ্ছসিত। তিনি বলছেন, বিশ্বে নিউইয়র্ক হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম সিটি। তাই এই সিটির পরিবহন ব্যবস্থায়ও এর প্রতিফলন ঘটতে হবে। যদি দ্রততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছা সম্ভব হয়, তাহলে এর জনপ্রিয়তা দ্রত বাড়বে। শহরের চলাচল আরো গতিশীল করে তোলাই আমদের লক্ষ্য।
প্রসঙ্গত, গুগলের চালকবিহীন গাড়ি প্রথম নামানো হয় ২০১০ সালে নাভাদা স্টেটে। এটি রাডারের সহায়তায় চললেও নিউইয়র্কের ক্যাবগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে স্মার্টফোনের মাধ্যমে। প্রথমে ৫ হাজার ট্যাক্সি নামানোর পরিকল্পনা চলছে, ভবিষ্যতে ৯ হাজার পর্যন্ত গাড়ি বাড়ানো হবে।