Connect with us

দেশজুড়ে

পাহাড়ে বর্ষবরণের প্রস্তুতি শুরু

Published

on

Rangamati Pahare Borshoboronরাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:
আদিবাসীদের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব বৈসাবী ও বাংলা বর্ষবরণকে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি। ‘আদিবাসী জুম্ম সংস্কৃতি বিকাশে ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসুন’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে পাহাড়ে এবার পালিত হবে আদিবাসীদের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব বৈসাবী।
বৈসাবীর আগমনকে ঘিরে রাঙ্গামাটির আদিবাসী ও সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মেতেছে বৈসাবী ও বাংলা বর্ষপণের উৎসবে। বৈসাবী ও বাংলা নববর্ষে নতুন সাজে সেজে উঠবে পার্বত্য জনপথ। বৈসাবী ও বাংলা নববর্ষকে ঘিরে ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন বর্ষবরণের ব্যাপক আয়োজন। বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের আয়োজনের চেয়ে পাহাড়ের আয়োজনটা একটু ভিন্ন। এখানে বাংলা নববর্ষ বরণের পাশাপাশি পালিত হয় আদিবাসীদের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব বৈসাবী। বাংলা নববর্ষ বরণ ও বৈসাবীকে বরণ করতে তাই এখন পাহাড়ে রীতিমত সাজ সাজ রব।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উৎসব প্রিয় আদিবাসীরা সারাবছর মেতে থাকেন নানান অনুষ্ঠানে। তবে তার সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। চাকমারা বিজু, ত্রিপুরা বৈসুক এবং মারমারা সংগ্রাই নামে আলাদাভাবে পালন করে এই উৎসব। তবে সমতলের মানুষের কাছে এই উৎসব বৈসাবী নামে পরিচিত।
বৈসাবীকে কেন্দ্র করে তিনদিন ধরে উৎসব করার কথা থাকলেও তা চলবে সপ্তাহ ধরে। উৎসবের তৃতীয় দিনে চাকমা, ত্রিপুরারা গোজ্জাই পোজ্জা পালন করলেও ঐদিন মারমা সম্প্রদায় উদযাপন করে ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা উৎসব। মারমাদের পানি খেলা উৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পাহাড়ের বৈসাবী উৎসব।
রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদে শুক্রবার ঐতিহ্যবাহী পোশাকে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হবে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে সেই ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলে নিজেদের ঘর। এই উৎসবের দিনকে বলা হয় ফুল বিজু। আর উৎসবের পরের দিন ঘরে ঘরে রান্না হয় ঐতিহ্যবাহী খাবার পাচন। তা দিয়ে দিন ভর চলে অতিথি আপ্যায়ন। একে বলে মূল বিজু।
আদিবাসীরা মনে করেন এই উৎসব তাদের একার নয়। এই উৎসব পাহাড়ের আদিবাসীসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের সকলের। বৈসাবী উৎসবে শুধু আদিবাসীরা নয় এখানকার বাঙ্গালীরা ও সম্মিলিতভাবে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে।
এদিকে বৈসাবীকে ঘিরে আগামী ৪ এপ্রিল থেকে তিন দিনব্যাপী বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছে রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট। বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হবে। প্রধান দিন শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ আদিবাসীদের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে মেলা প্রাঙ্গণে ১১টি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির ঐতিহ্য সম্বলিত বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
অন্যদিকে রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ৮এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী ১৪তম পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী সংস্কৃতি মেলার আয়োজন করেছে জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিল (জাক)। তিন দিনব্যাপী মেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সাংস্কৃতিক ও নাট্য দল (বম, তঞ্চঙ্গ্যা, মোনঘর, চাকমা ও ত্রিপুরাসহ অন্যান্যের আদিবাসীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটক পরিবেশন করবেন। এ ছাড়া প্রতিদিন মেলা চলাকালীন সময়ে স্টল প্রদর্শনী, আদিবাসী জীবন ও কর্মভিত্তিক স্থিরচিত্র প্রদর্শনী, আদিবাসী নারীদের বেইন বুনন, আদিবাসী বেতশিল্প ও আদিবাসী খাদ্য প্রদর্শন করা হবে।
বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, সাইক্রান, বিহু উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব ইন্টু মনি তালুকদার জানিয়েছেন, ১২ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্রপূর্ণ ঐতিহ্যের ধারক বাহক আদিবাসী জুম্মদের উৎসব উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে আগামী ১০ এপ্রিল থেকে তিন দিনব্যাপী রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ১০ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ৯টায় রাঙ্গামাটি পৌরসভা চত্বরে বৈসাবি উৎসবের উদ্বোধন ও র‌্যালি। এর উদ্বোধন করবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।
প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, প্রাক্তন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ড. মানিক লাল দেওয়ান।
১০ এপ্রিল বিকেল ৩টায় রাঙ্গামাটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ১১ এপ্রিল শনিবার সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে আদিবাসী জুম্মখেলা, বিকেল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মাননা অনুষ্ঠান, বিকেল ৫টায় রয়েছে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
১২ এপ্রিল রোববার ভোর সাড়ে ৬টায় রাজবন বিহার ঘাটে অনুষ্ঠিত হবে পানিতে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠান, বিকেল ৩টায় রাঙ্গামাটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী বলিখেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে প্রতিবারের ন্যায় এবার ও রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি। এ ছাড়া বৈসাবী ও বাংলা নববর্ষকে বরণ উপলক্ষে রাঙ্গামাটির স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি। বাংলা বর্ষবরণ ও বৈসাবীকে বরণ করতে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত পাহাড়ের মানুষ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *