Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

পুলিশ বিভাগের দুর্নীতি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ: সমাধানের পথ নিকটেই

Published

on

 

মসীহ উর রহমান


সম্প্রতি পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অশোভন আচরণের অভিযোগ তীব্র হওয়ায় এর প্রতিবিধানকল্পে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার তার অধীনস্থ সকল পুলিশ কর্মকর্তাকে লিখিত নির্দেশ প্রদান করেছেন যেন তারা তাদের অধীনস্থ থানা ও ইউনিটের পুলিশ সদস্যদেরকে মানুষের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ করতে ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসনের আলোকে উদ্বুদ্ধ করেন। রাষ্ট্রীয় কল্যাণে ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগানোর এই উদ্যোগকে আমরা অকুণ্ঠচিত্তে সমর্থন করি।
এক্ষেত্রে তাদেরকে কী বক্তব্য দিয়ে প্রণোদিত করলে তা ফলপ্রসূ হবে সে বিষয়ে আমরা হেযবুত তওহীদ পুলিশ বিভাগকে জাতীয় স্বার্থে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। এখানে দুটি প্রসঙ্গ আসে যথা ধর্মীয় অনুশাসন ও সামাজিক দায়িত্ববোধ। প্রথমত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে অবগত করা যে তাদের ধর্মীয় কর্তব্য কী, তারা যে জনগণের জান-মাল-সম্পদ হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন ধর্মীয় দৃষ্টিতে সেটা কত বড় কাজ। ইসলামের সত্যনিষ্ঠ খলিফাগণ রাত জেগে যেভাবে মানুষের নিরাপত্তাবিধান ও দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্য পরিদর্শন করতেন পুলিশ সদস্যরা সেই কাজটিই করছেন। কিন্তু ধর্ম সম্পর্কে আজ সর্বত্র ভুল ধারণা বিরাজিত, ফলে পুলিশ সদস্যরাও কাজের মাহাত্ম্য অনুধাবন করতে সক্ষম নন। তাই সর্বাগ্রে তাদেরকে বুঝাতে হবে ধর্ম কী?
ধর্ম শব্দের অর্থ ধারণ করা। কোনো বস্তু, প্রাণী বা শক্তি যে বৈশিষ্ট্য বা গুণ ধারণ করে সেটাই হচ্ছে তার ধর্ম। আগুনের ধর্ম যেমন পোড়ানো। তেমনি মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা, কিন্তু প্রতিটি ধর্ম থেকে আজ মানবতা হারিয়ে গেছে। আজকে নির্দিষ্ট লেবাস ধারণ করে সুরা কালাম পড়তে পারলে, নামায-রোযা করলে তাকে ধার্মিক বলে। এটা সঠিক ধারণা নয়। বরং মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে যার হৃদয়ে কষ্ট অনুভব হয় এবং দূর করার চেষ্টা করে সে হলো প্রকৃতপক্ষে ধার্মিক। সেই হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যারা কাজ করছেন তারা যে ধর্মের মূল যে কাজ তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ সত্য অনুধাবন করলে তারা পেশাগত কাজ করার ক্ষেত্রেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আত্মিক প্রেরণা পাবেন তাই সুযোগ পেলেও অসদুপায় অবলম্বন করবেন না।
দ্বিতীয়ত তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে এবাদত কী। এবাদত হচ্ছে যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেই কাজটি করা। যেমন আল্লাহ সূর্য সৃষ্টি করেছেন আলো তাপ দেওয়ার জন্য, সেটা দেওয়াই সূর্যের এবাদত। তেমনি আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে (সুরা বাকারা-৩০)। অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টিকে আল্লাহ যেভাবে সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ রেখেছেন ঠিক সেভাবে এ পৃথিবীকে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল রাখাই মানুষের এবাদত। ঐ কাজের জন্য যে আত্মিক, শারীরিক ও মানসিক চরিত্র দরকার তা অর্জনের প্রশিক্ষণ হচ্ছে নামাজ, রোজা, হজ্ব ইত্যাদি। যদি আসল দায়িত্ব পালন না করে কেবল আনুষ্ঠানিকতাই করে যান তাহলে বহু আমল থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তা পরিত্যাগ করবেন। এবাদতের অর্থ ভুল বোঝার কারণে সব আমলই ব্যর্থ হয়ে যাবে এ কথাটি আল্লাহর রসুলই বলে গেছেন। তিনি বলেন, ‘এমন সময় আসবে যখন মানুষ রোজা রাখবে কিন্তু না খেয়ে থাকা হবে, রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়বে কিন্তু ঘুম নষ্ট করা ছাড়া কিছুই হবে না’। সুতরাং আসল যে এবাদত তা করার সুযোগ পুলিশ সদস্যগণ লাভ করেছেন।
তৃতীয়ত তাদের ভিতরে এই চিন্তা জাগ্রত করতে হবে যে, মানুষ দেহ এবং আত্মার সমন্বয়ে একটা সৃষ্টি, সে অন্যান্য প্রাণীর মতো নয়। তার শুধু ইহকাল নয়, পরকালও আছে। তার একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন যিনি মানুষকে একটি নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তিনি তার প্রতিটি কাজ ও চিন্তা পর্যবেক্ষণ করেন। সে যদি অন্যায় আচরণ করে, কারো প্রতি অবিচার করে, নিজ দায়িত্ব অবহেলা করে, দুর্নীতির আশ্রয় নেয় সেগুলোর পুংখানুপুংখ হিসাব একদিন স্রষ্টার কাছে তাকে দিতে হবে। আল্লাহর উপস্থিতির এই অনুভূতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অগোচরেও পুলিশ সদস্যদের অপরাধপ্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
ধর্মীয় অনুশাসনের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ববোধ দ্বারাও উদ্বুদ্ধ করা অপরিহার্য। এই সমাজের প্রতিটি মানুষের সামাজিক কর্তব্য হলো সমাজকে রক্ষা করা, কারণ সমাজ তাকে রক্ষা করে। সমাজের বাইরে তার অস্তিত্বের কোনো মূল্য নেই, ঠিক যেভাবে সমুদ্রের বাইরে তরঙ্গের কোনো মূল্য নেই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ সমাজ থেকে সুবিধা গ্রহণ করে। সে সমাজের শিক্ষালয়ে শিক্ষিত হয়, সমাজের রাস্তায় যাতায়াত করে, সমাজের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু এসবের বিনিময়ে সে সমাজের কল্যাণ সাধনে এক মুহূর্ত সময় দিতেও প্রস্তুত নয় বরং সমাজের ক্ষতি সাধন করেও সে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। এর পরিণামে একটা সময় সমাজ বলতে কিছুই থাকে না, তখন প্রতিটি মানুষ অনিরাপদ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরাও যদি সমাজকে ধ্বংস করে দিয়ে স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত থাকেন তাহলে একদিন তারাও অসহায় হয়ে পড়বেন, তার সন্তান, ভাই বোন, আত্মীয় পরিজনও এই সমাজে হয়রানির শিকার হবে। সমাজ একটি দেহের ন্যায়। দেহের রোগ সারানোর জন্য যেমন চিকিৎসা করাতে হয় তেমনি সমাজ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে নানারূপ জটিল সমস্যায় ভোগে তখন সবাইকে উদ্যোগী হতে হয় সমাজকে সুস্থ করে তোলার জন্য। সেই হিসেবে সমাজে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে যারা আছেন, জনগণের রক্ষায় যাদের ভূমিকা, জনগণ যাদের উপর নির্ভর করে তারা যদি সমাজের শান্তি রক্ষার কাজ করে, সমাজ বিনির্মাণের কাজ করেন তাহলে সমাজ রক্ষা পাবে, সেও রক্ষা পাবে। এটা তার সামাজিক কর্তব্য।
ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে পুলিশ সদস্যদেরকে তাদের দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং এই কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। কারণ আমাদের কাছে সেই আদর্শ আছে যা দ্বারা এই বাহিনীর সদস্যদের মানসিক পরিবর্তন সাধন সম্ভব হবে এবং যা আমাদের সমাজকে শান্তিপূর্ণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

লেখক: প্রকাশক ও সম্পাদক, বাংলাদেশেরপত্র ডটকম; চেয়ারম্যান, জেটিভি অনলাইন ও আমির, হেযবুত তওহীদ

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *