Connect with us

জাতীয়

বজ্রপাতে রাজধানীসহ ১৬ জেলায় ৪৪ জনের মৃত্যু

Published

on

বজ্রপাতবিডিপি ডেস্ক: তীব্র তাপপ্রবাহের পর স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে সারাদেশে। বৈশাখের শেষ ভাগে এক সপ্তাহ গরমের পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ দেশের অনেক জেলায় বৃষ্টি ও ঝড় হয়। এর সঙ্গে হয় বজ পাতও। এতে প্রাণহানি ঘটে অন্তত ৪৪ জনের।
বজ পাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে পাবনায়। উত্তরাঞ্চলের এই জেলায় সাতজন মারা যান। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ফুটবল খেলার সময় বজ পাতে মারা গেছেন দুই শিক্ষার্থী। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহীতে পাঁচজন করে মারা গেছেন। কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে মৃত্যু হয়েছে চারজন করে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়ার কাঠেরপুল এলাকায় বিকেলে ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে মারা গেছেন দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন, রুম্মান হাসান লিঙ্কন (২১) ও সাহেদ ওরফে সোহাগ (২১)। সোহাগ আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন আর লিঙ্কন পলিটেকনিক্যালে পড়তেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জানা গেছে, বিকেল ৫টার দিকে তারা কয়েক বন্ধু কোনাপাড়ার কাঠেরপুল এলাকার কনকর্ড বালুর মাঠে ফুটবল খেলতে যান। সন্ধ্যার আগে বৃষ্টি শুরু হয়। সে সময় প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত হলে লিঙ্কন আর সোহাগ অচেতন হয়ে যায়। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। লিঙ্কন ও সোহাগ দু’জনই পরিবারের সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় থাকতেন। লিঙ্কনের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। তার বাবার নাম বাদল মোল্লা। সোহাগের বাবার নাম নিজাম উদ্দিন।
পাবনার সুজানগর, বেড়া ও চাটমোহর উপজেলায় বজ্রপাতে নানা-নাতনিসহ সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সুজানগর উপজেলার রানীনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম তৌফিকুল আলম পীযূষ বলেন, বাঘুলপুরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঝড়বৃষ্টির সময় নানা ময়েন উদ্দিন প্রাং ও তার নাতনি শিখা খাতুন ঘরের বারান্দায় বসে ছিলেন। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। পাটক্ষেতে নিড়ানির কাজ করার সময় বৃষ্টির মধ্যে মারা যান দক্ষিণচর গ্রামের শহিদুর রহমান। একই সময় মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে বজ্রপাতের শিকার হয়ে মারা গেছে সোনাতলা গ্রামের হীরা।
চাটমাহর উপজেলার বাউদকান্দি গ্রামের ফজলুর রহমান ও ছকির উদ্দিন মারা গেছেন মাঠে গিয়ে বজ্রপাতে।
বেড়া উপজেলাতেও বজ্রপাতে এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি।
রাজশাহীর মোহনপুরে ৩ জন, দুর্গাপুর ও গোদাগাড়ীতে দুই নারী বজ্রপাতে মারা গেছেন। এ ছাড়া আরো ৪ জন আহত হয়েছেন।
তারা হলেন মোহনপুরের গোছা গ্রামের রহমত আলী, হাটরা গ্রামের আবদুল হাকিম, ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সত্যেন কুমার সত্য; গোদাগাড়ীর গুসিরা গ্রামের লাইলী বেগম ও দুর্গাপুর উপজেলার পালশা খামারুপাড়া এলাকার মর্জিনা বেগম। ঝড়-বৃষ্টির সময় মাঠে কাজ করার সময় তারা মারা যান।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় বজ্রপাতে এক শিক্ষকসহ পাঁচজন মারা গেছেন।
নিহতরা হলেন- রায়গঞ্জের চকপুর গ্রামের নূর নবীর মেয়ে নূপুর খাতুন (৮), বৈকণ্ঠপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মোতালেব ও হাসিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন।
উল্লাপাড়া উপজেলার শিমলা গ্রামের আবদুল লতিফ ও বেতুয়া গ্রামের গৃহবধূ শাহিনুর বেগমের মৃত্যুও হয়েছে বজ্রপাতে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় বজ্রপাতে জাহানারা বেগম, শফিকুল ইসলাম, কবির হোসেন ও শামছুল ইসলাম মারা গেছেন।
চরশিবপুর গ্রামে জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে শফিকুল ইসলাম ও কানাইনগর গ্রামে নদীতে গোসল করে বাড়ি ফেরার পথে সুলতান মিয়ার ছেলে কবির হোসেন মারা যান।
বাড়ির উঠোনে কাজ করার সময় সরাইলের জাহানারা ও ইছাপুর গ্রামের জোনাব আলীর ছেলে শামছুল ইসলাম জমিতে ধান কাটার সময় মারা যান।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর ও হোসেনপুর উপজেলায় বজ্রপাতে কলেজছাত্রসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- হোসেনপুর উপজেলার আড়াইবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রহমত আলীর ছেলে ও হোসেনপুর ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র শরীফুল ইসলাম শুভ, তাড়াইল উপজেলার গৃহবধূ মমতা বেগম, বাজিতপুর উপজেলার কৈকুরি গ্রামের গৃহবধূ রেজিয়া খাতুন ও বাহের নগর গ্রামের মঞ্জিল মিয়ার ছেলে স্বপন (১৭)।
গাজীপুরে কাপাসিয়া উপজেলায় মো. সাত্তার আলী (২৬) ও রুবিনা (৪০) বজ্রপাতে মারা যান। সাত্তার আলী কাপাসিয়া উপজেলার উত্তরখামের গ্রামে আব্দুর রশীদের জমিতে ধান কাটছিলেন।
বিকেলে বজ্রপাত হলে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার সাতান্না গ্রামের সাত্তার ঘটনাস্থলেই মারা যান। প্রায় একই সময় খিরাটি গ্রামের কাজল মিয়ার স্ত্রী গৃহবধূ রুবিনা মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফেরার পথে বজ্রাঘাতে মারা গেছেন।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামে গতকাল বিকেলে বজ্রপাতে হাবিব মিয়া (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। হাবিব ওই গ্রামের শেখ তাজুল মিয়ার ছেলে। তিনি সে সময় বাড়ির পাশে হাওরে ধান কাটছিলেন।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে লালবিবি বেগম (৩৪) নামের এক গৃহবধূ মারা গেছেন। তিনি উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের ফুলের ঘাট গ্রামের আলম হোসেনের স্ত্রী।
নাটোরের লালপুর উপজেলায় বজ্রপাতে দু’জন মারা গেছেন। তারা হলেন রঘুনাথপুর গ্রামের মোবারক হোসেন (৩৫) ও উত্তর লালপুর গ্রামের সাহারা বানু (৪৮)। মোহাম্মাদ আলীর ছেলে মোবারক ও পান্টু আলীর স্ত্রী সাহারা বানু।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় মাঠে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দুই ভাই মারা গেছেন। তারা হলেন বেতগাড়ী গ্রামের হাদু সরকারের বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন ও ছোট ছেলে আরিফুল ইসলাম।
নারায়ণগঞ্জে মেঘনা নদীতে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে বলরাম দাস (৫০) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। তিনি নরসিংদীর সদর উপজেলার দোয়ানী গ্রামের বাসিন্দা।
নেত্রকোনার পূর্বধলায় রুবেল মিয়া ও কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নে রইছ উদ্দিন বজ্রপাতে মারা গেছেন।
নরসিংদী সদর ও রায়পুরা উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন রায়পুরার ফকিরেরচর গ্রামের জোছনা বেগম, নরসিংদী সদর উপজেলার মহিসাষুরা গ্রামের কৃষক আবদুল করিম ও নজরপুরের চরাঞ্চলের ফুলি বেগম।
এছাড়াও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ইউনুস সিকদার, নওগাঁর আত্রাইয়ে জয়নাল উদ্দিন, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে মতিয়ার রহমান বজ্রপাতে মারা গেছেন।
এদিকে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার বিশখালী নদীতে ইলিশ মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতের কবলে পড়ে এক জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। নিখোঁজ ইব্রাহীম সরদার সরদার পাড়ার আশ্রাব আলীর ছেলে। বরিশাল থেকে ডুবরি দল এলেও ইব্রাহীমের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *