জাতীয়
বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ বহাল
২০১১ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে জলাধার রক্ষা আইন লঙ্ঘন করে হাতিরঝিলে গড়ে তোলা বহুতল ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। দুই বছর পর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। তাদের আবেদনটি গতকাল খারিজ করা হলো। এর মধ্য দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ই বহাল থাকল। এই মামলায় হাইকোর্টে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে থাকা আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের লিভ টু আপিল আবেদন খারিজ হওয়ায় ভবনটি ভাঙতে আর কোনো আইনগত বাধা নেই।’
বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আপিল বিভাগের এই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করব। আশা করছি, সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ আদালত বিষয়টি বিবেচনা করবেন। যদি আদালত রিভিউ খারিজ করে দেন তাহলে ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে।
বিজিএমইএর আইনজীবী রফিক-উল হক বলছেন, ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট বলেছিলেন বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙে দিতে। আপিল বিভাগ এটি কনফার্ম করেছেন। তার মানে বিল্ডিংটা ভেঙে দিতে হবে।’ ভবনটির ফলকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নাম থাকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালত তার ক্ষমতা কত তা দেখাল’। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাতের ব্যবসায়ীদের সমিতির ভবনটি ভাঙলে তা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ব্যারিস্টার রফিক। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা ভেঙে দিলে অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। কারণ অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে গার্মেন্টসশিল্পের ওপরে।’ আপিল বিভাগের এ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে কি না জানতে চাওয়া হলে বিজিএমইএর অপর আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘রিভিউ করবে কী করবে না, সে বিষয়ে বিজিএমইএর বোর্ডসভায় সিদ্ধান্ত হবে। আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের আলোকে রিভিউর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও রিটের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ উপস্থিত ছিলেন।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, ‘বিজিএমইএ ভবনটি সৌন্দর্যম-িত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো। এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে।’ বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত দিতেও নির্দেশ দেন আদালত। রায়ে বলা হয়, ‘ক্রেতাদের সঙ্গে ওই চুক্তি ছিল বেআইনি। কারণ ওই জায়গায় ভবন নির্মাণ বা কোনো অংশ কারো কাছে বিক্রির কোনো অধিকার বিজিএমইএর ছিল না। তবে ক্রেতারা যেহেতু নিজেরাও জানত বা তাদের জানা উচিত ছিল যে, এ জমির ওপর বিজিএমইএর কোনো মালিকানা নেই এবং ভবনটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। সুতরাং তারা কোনো ইন্টারেস্ট পাওয়ার দাবিদার নয়।’ রায়ে আরও বলা হয়, ‘আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারীবলে শক্তিশালী একটি মহলকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে এমন যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিজিএমইএর আইনের প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। তারা তা না করে আইনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে।’ বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য ১৯৯৮ সালে সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ি খালপাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কেনে। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ভবনটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নকশা অনুযায়ী করা হয়নি বলে রাজউক বলে আসছিল। পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনও ভবনটি ভাঙার দাবি জানিয়ে আসছিল। এ প্রেক্ষাপটে বিজিএমইএ ভবনের বৈধতা নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২০১০ সালের ৩ অক্টোবর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিজিএমইএ ভবন না ভাঙার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ওই রুলের শুনানি নিয়ে ২০১১ সালে হাইকোর্ট রায় দেন।