দেশজুড়ে
বুড়িমারী স্থলবন্দরে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত আরো এক শ্রমিকের মৃত্যু
পাটগ্রাম প্রতিনিধি, লালমনিরহাট:
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের শ্রমিকদের মাঝে সিলোকোসিস রোগ মহামারী আকার ধারণ করেছে। মৃত্যু যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের। গত বৃহস্পতিবার আব্দুর রশিদ (৩২) নামে আক্রান্ত আরো এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে এ রোগে।
জানা যায়, সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মোট ৬৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর গত চার মাসে মৃত্যু হয়েছে ৩ শ্রমিকের। জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরও রোগীরা বাঁচতে পারছে না। রীতিমত রোগীদের মাঝে মৃত্যু আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত বৃহস্পতিবার (৫-মার্চ) ভোর সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা এলাকার ফজলুল হকের ছেলে আব্দুর রশিদ (৩২)। এ রোগে তিনিসহ এ পর্যন্ত মোট ৬৩ জন শ্রমিক প্রাণ হারালেন। গত বছর ২৫ ও ২৬ নভেম্বর নুরুজ্জামান (৩৫) এবং মজিবর রহমান (৪৮) নামের দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর দুলাল মিয়া (৩৯) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
নিহত আব্দুর রশিদের বাবা ফজলুল হক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘একেই তো পিতার ঘাড়ে ছেলের লাশ, অপর দিকে এখন ইরা মনি (৭), মনিরা (৫) নামে দুই নাতনী ও শেফালি বেগম(২৫) ছেলের বউয়ের সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে।’
নিহত আব্দুর রশিদের সহকর্মী মতিউল ইসলাম বলেন, ‘নিহত আব্দুর রশিদের শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যান। আমরা ১৪ জন শ্রমিক সিয়াম এন্টারপ্রাইজের পাথর ক্রাসার মেশিনে কাজ করেছিলাম। এর মধ্যে ১৩ জনই মারা গেল, এখন আমিই শুধু ওই গ্র“পের একমাত্র সদস্য হিেেসবে বেঁচে আছি। আমিও অসুস্থ কবে মারা যাই কোনো ঠিক নেই।’
বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, আব্দুর রশিদ বুড়িমারীতে অবস্থিত সিয়াম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি কারখানায় পাথর ক্রাসিংয়ের কাজ করতেন। প্রায় তিন বছর ধরে এ কাজ করে আসছিলেন তিনি। পাথর ক্রাসিংয়ের সময় উড়ন্ত ধুলা নাক-মুখ দিয়ে শরীরে ঢুকে সিলিকোসিস রোগের জন্ম দেয়। আব্দুর রশিদ ছাড়াও আরো প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক এ রোগে আক্রান্ত হন। ঢাকার বিলস নামের একটি সংগঠন এসব রোগীকে সনাক্ত করে। বাংলাদেশের মধ্যে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রথম এ রোগটি সনাক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত ৬৩ জন সিলিকোসিস রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু আতঙ্কে রয়েছেন আরো প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বছর ২৫ নভেম্বর নুরুজ্জামান, ২৬ নভেম্বর মজিবর রহমান মারা যায়। ওই বছরের ২৯ সেপ্টেস্বর দুলাল মিয়া নামের এক শ্রমিক জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতাল থেকে আসার পর দিন মারা যান।
এদিকে বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথ ডা. মোহাম্মদ জাকারিয়া হাবিব আলোচ্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের আরোগ্যের জন্য হোমিও চিকিৎসকদের স্মরণাপন্ন হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। তিনি আরোও উল্লেখ করেন যে, হোমিও ঔষধ ‘সাইলেসিয়া’ এসব রোগীদের আরোগ্য করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।