Connect with us

বিনোদন

পশ্চিমবঙ্গে গোয়েন্দা কাহিনি নিয়ে সিনেমা তৈরির হিড়িক

Published

on

1কলকাতার বাসিন্দা তিন ‘ছবির পোকা’ অয়ন – দীপান্বিতা-সৌম্যদীপ আড্ডা মারছেন বাংলায় কেন এত বেশি গোয়েন্দা গল্প নিয়ে ছবি হচ্ছে, তা নিয়ে।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
ঈদের দুপুরে কলকাতার বাড়িতে আড্ডায় বসেছিলেন কয়েকজন বন্ধু – দীপান্বিতা ঘোষ মুখার্জী, অয়ন চক্রবর্তী আর সৌম্যদীপ গুহ। এরা সবাই স্কুল বা কলেজে পড়ান, আর তার বাইরে ভাল সিনেমা দেখতে ভালবাসেন।
সেদিন তাদের গল্পে হঠাৎই উঠে এসেছিল পশ্চিমবঙ্গে চলচ্চিত্রের একটা নতুন ট্রেন্ড নিয়ে আলোচনা: গোয়েন্দা গল্প নিয়ে কেন এত বেশি করে সিনেমা তৈরি হচ্ছে!
আড্ডায় শোনা গেল, “এতদিন ফেলুদা ছিল, তারপর শুরু হল একের পর এক ব্যোমকেশ। এখন এসে গেছে কিরিটি রায়, শবর.. আরও কত গোয়েন্দা। এক ব্যোমকেশের গল্পই তো কতজন পরিচালক তৈরি করছেন! ওভারডোজ না হয়ে যায়!”
ওভারডোজ কি? – এই প্রশ্নে দীর্ঘদিন সত্যজিত রায়ের সৃষ্টি ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করা সব্যসাচী চক্রবর্তী হেসে বললেন, “অনেকদিনফাঁকা মাঠে একা খেলছিলাম, ভালো লাগে নাকি! এবারে কম্পিটিশন এসেছে, খুব ভাল হয়েছে এটা। ফেলুর ভাষাতেই বলি, এবার কেসটা জমেছে!”

“ফেলুর ভাষাতেই বলি, এবার কেসটা জমেছে!” বলছেন ফেলুদার চরিত্রে অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী

অনেকদিন ফেলুদা একা গোয়েন্দা ছবির জগতে রাজত্ব করার পর কয়েক বছর আগে বাংলা ছবিতে হাজির হন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্ট চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সী।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়েন্দা ব্যোমকেশ আর নীহাররঞ্জন গুপ্তর গোয়েন্দা কিরিটি রায়কে নিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি প্রযোজনা করেছেন কৌস্তুভ রায়।
তার বক্তব্য, “গোয়েন্দা গল্প বাঙালিদের খুব প্রিয়। তাই এখন দর্শক টানছে, ব্যবসাও দিচ্ছে।”
কিরিটি রায়ের একটি ছবি গত সপ্তাহেই মুক্তি পেয়েছে। আবার আরেকটির কাজ চলছে। সেই ছবিটি পরিচালনা করছেন, অনিকেত চ্যাটার্জী।
তাঁর কথায়, “পরিচালক যে ছবি করতে চাইছেন মন থেকে, সেটাই যে তিনি করতে পারবেন, এমন অবস্থা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের নয়। প্রযোজকদের কথাতেই ছবি তৈরি হয়। হয়তো একটা ভূতের ছবি হিট হয়ে গেল, সব প্রযোজক তখন ভূতের ছবি বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সেরকমই একটা ব্যোমকেশ হিট হয়ে যাওয়ার পরেই সবাই এখন গোয়েন্দা গল্পের দিকে ঝুঁকেছে।”
কয়েকমাস আগে বড় পর্দায় প্রথম ছবি করেছেন পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী। ‘ষড়রিপু’ নামের সেই ছবিতেও গোয়েন্দা হাজির।

কলকাতার চলচ্চিত্র প্রযোজকদের নজর এখন গোয়েন্দা গল্পের দিকে

তিনি বলছেন, “বাঙালির গোয়েন্দা গল্প-প্রীতি নতুন কিছু নয়। কী সাহিত্যে, কী ফিল্মে, বাঙালির কাছে গোয়েন্দা গল্প বা থ্রিলারের জনপ্রিয়তা চিরকালীন। যেহেতু বাঙালি বুদ্ধিমান জাতি, তাই তারা বই পড়তে পড়তে বা সিনেমা দেখতে দেখতে নিজেরাই গল্পের রহস্য সমাধান করতে থাকে। সেকারণেই গোয়েন্দা গল্পের জনপ্রিয়তা এত বাংলায়।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক সঞ্জয় মুখার্জি অবশ্য মনে করেন না যে শুধুই বাণিজ্যিক সাফল্যের কারণেই হঠাৎ করে গোয়েন্দা গল্প নিয়ে ছবি করার হিড়িক পড়েছে।
“পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতার যে নতুন নাগরিক সমাজ, এদের পাপ-পতন বা জীবনযাত্রার বিচিত্র ধরন, সেগুলো তাদের নিজেদের কাছেই অপরিচিত। তাই তাদের কাছে একটা তৃতীয় চক্ষু দরকার, যার চোখ দিয়ে দেখে অপরাধ আর সামাজিক বিচার সম্পন্ন হতে পারে বলে মানুষ মনে করছেন। সেজন্যই ব্যোমকেশের ছবি মানুষকে আকৃষ্ট করছে। এছাড়াও ভারতের সব বড় শহরগুলোতে অপরাধের ধরণ পাল্টাচ্ছে, সেটা সাধারণ মানুষের কাছে একটা আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে। আমার মনে হয় এটাই হঠাৎ করে আমাদের গোয়েন্দা গল্পের প্রতি প্রীতি,” বলছিলেন অধ্যাপক সঞ্জয় মুখার্জি।
গোয়েন্দা গল্প নিয়ে যত বেশি ছবি হচ্ছে, ততই খোঁজ পড়ছে কোন সাহিত্যিক কোন গোয়েন্দা গল্প লিখে গেছেন, সেসবের। ফেলুদা, ব্যোমকেশের পরে যেমন উঠে এসেছেন কিরিটি রায়, তেমনই এসেছেন একেবারে নতুন ধাঁচের গোয়েন্দা – শবর।
অন্য গোয়েন্দা ছবির নায়কদের থেকে শবরের ফারাক এটাই যে তিনি অন্যদের মতো প্রাইভেট ডিটেকটিভ নন। তিনি পুলিশ গোয়েন্দা।
শবরের স্রষ্টা – সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখার্জির কাছে জানতে চেয়েছিলাম বাকি সব গোয়েন্দাদের থেকে নিজের হিরোকে অন্যভাবে কেন তৈরি করলেন।

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় সৃষ্টি করেছেন অন্য ধরণের গোয়েন্দা চরিত্র – শবর। সে পুলিশ গোয়েন্দা।

মি. মুখার্জি বলছিলেন, “প্রাইভেট ডিটেক্টিভ বলে বাস্তবে যারা আছেন, তারা তো আর খুন বা ওই ধরণের গুরুতর অপরাধের সমাধান করেন না, সেগুলো আসলে করে পুলিশই। সাহিত্য গুণে ফেলুদা বা ব্যোমকেশ অসাধারণ, তারা লেজেন্ড হয়ে গেছে – এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ থাকতে পারে না, কিন্তু ওরা যা যা করে, সেটা অবাস্তব, কল্পনা। তাই আমাকে যখন গোয়েন্দা গল্প লিখতে বলা হল, তখন আমি ঠিক করলাম পরিচিত পথে হেঁটে প্রাইভেট ডিক্টেটিভ তৈরি করব না। বাস্তবে তো পুলিশই রহস্য সমাধান করেন। সেজন্যই শবরকে এইভাবে তৈরি করা।”
এই বছরে ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা কাহিনি নিয়ে ছবি মুক্তি পেয়ে গেছে বেশ কয়েকটা। দুর্গাপুজো আর শীতের সময়ে মুক্তি পাওয়ার কথা আরও কয়েকটির। এবার আবার ফেলুদা গল্পের ৫০ বছর – তাই আসবে ডাবল ফেলুদা।
দর্শকদের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়ার আগে তাই এখন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় চলছে শ্যুটিং। সেখানে যেমন রয়েছেন ফেলুদা, তেমনই আছেন গোয়েন্দা কিরিটিও।
তবে একের পর এক এত গোয়েন্দা কাহিনি পশ্চিমবঙ্গের দর্শক গিলতে পারবেন তো? সেই আশঙ্কা যে একেবারে নেই চলচ্চিত্র মহলে, তা নয়।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *