আন্তর্জাতিক
ভারতে শিশু পাচারের শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আর জাতীয় অপরাধ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘চাইল্ড রাইটস এন্ড ইউ’- বা ক্রাই বলছে ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাড়ে চৌদ্দ হাজারেরও বেশী শিশু-কিশোর নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল।
ওই একই বছরে অপহৃত হয়েছিল ২৩৫১ জন শিশু-কিশোর। পূর্ববর্তী ৫ বছরে অপহরণের সংখ্যা ৬০৮ শতাংশ বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র, দিল্লি আর অন্ধ্র প্রদেশ।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে যত শিশু-কিশোর ২০১৪ সালে হারিয়ে গেছে, তাদের প্রায় ৭০ শতাংশই কিশোরী। এদের ৪০ শতাংশকে খুঁজেই পাওয়া যায় নি। এদের বেশীর ভাগই পাচার হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হয়।
‘ক্রাই’য়ের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা অতীন্দ্র নাথ দাস বিবিসি-কে বলেন, “হারিয়ে যাওয়া শিশু-কিশোরীদের একটা বড় অংশ নিঃসন্দেহে পাচার হয়ে যায়। নির্মান শিল্প, ভিক্ষাবৃত্তি, পার্লার, গৃহকর্ম প্রভৃতি ক্ষেত্রে যেমন এদের ব্যবহার করা হয়। একটা বড় অংশকে যৌনপল্লীগুলিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সংখ্যাটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।“
মি.দাস বলছিলেন বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের লোকেরাই কাজের লোভে কিশোরীদের বাইরে পাঠিয়ে দেয়, আর তারা পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে যায়।
“অনেক পরিবার মনে করে মেয়েদের যেহেতু বিয়ে দিয়ে বাড়ির বাইরেই পাঠিয়ে দিতে হবে, তাদের পেছনে আর টাকা খরচ করে কী লাভ। তাই পাড়া পড়শী বা কোনও এজেন্সি যখন এদের ভাল থাকা-খাওয়ার লোভ দেখায়, তখন পরিবারের লোকরাই কিশোরীদের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা কম।“
পাচার হওয়া শিশু-কিশোর আর নারীদের উদ্ধার আর পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে থাকে দিল্লি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শক্তি বাহিনী।
সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ঋষিকান্ত বলছিলেন, “পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে বেশী কিশোরী পাচার হয় –চব্বিশ পরগণা আর উত্তরবঙ্গ থেকে। তাদের কাজ যোগাড় করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয় – তার পরে জোর করে বিয়ে দেওয়া বা যৌন পল্লীতে বিক্রি করে দেওয়া বা গৃহকর্মে ক্রীতদাসীর মতো ব্যবহার করা হয়।“
মি. ঋষিকান্ত আরও বলছিলেন যে দিল্লিতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রচুর এজেন্সি কাজ করে – যাদের মাধ্যমে এই পাচার হয়ে থাকে।
তবে এখন মহারাষ্ট্রে ডান্স-বার নতুন করে খুলতে চলেছে – তাই পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাচারের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।