Connect with us

জাতীয়

‘মাঝারি ভূমিকম্পেও হতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়’

Published

on

স্টাফ রিপোর্টার:
মাঝারি মানের ভূমিকম্পও বাংলাদেশে বড় দুর্ঘটনা নিয়ে আসতে পারে যদি তার উৎপত্তিস্থল ঢাকা বা তার আশেপাশে হয়। সরকার আন্তরিকভাবে চাইলে ভূমিকম্পের ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে পারে। গতকাল রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও নির্মাণ কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। যৌথভাবে ক্রাউন সিমেন্ট ও জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড সেমিনারটির আয়োজন করে।
আলোচনায় কীভাবে ভূমিকম্প ঝুঁকি এবং পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায় তা প্রাধান্য পায়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) এর সভাপতি ড. এম. শামীম জেড বসুনিয়া বলেন, “রিখটার স্কেলের ৮ মাত্রার ভূমিকম্পও হয়তো ঢাকা শহরের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলবে না, যদি তার উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৪ হাজার মাইল দূরে হয়। অথচ রিখটার স্কেলের ৫ মাত্রার ভূমিকম্পও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, যদি তার উৎপত্তিস্থল ঢাকা বা তার আশপাশে কোথাও হয়। এজন্য সরকারকে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য বিপদ ঠেকাতে এখনই কাজ করতে হবে। সরকারই পারে বড় বিপর্যয় ঠেকাতে।” তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ফ্ল্যাট প্লেট (ভষধঃ ঢ়ষধঃব) সিস্টেমে ভবন নির্মাণের প্রবণতা বেড়ে গেছে। ফ্ল্যাট প্লেট হলো সেই সিস্টেম, যেখানে কোনো বিমের অস্তিত্ব থাকে না। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি সিস্টেম। বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, একটি কাঠের চেয়ারের ৪ পায়ার সঙ্গে আনুভূমিকভাবে কাঠের আলাদা ফ্রেম লাগানো হয়। একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারব যে ওই ফ্রেমগুলো লাগানো না থাকলে চেয়ারটি কিছুদিন ব্যবহারের ফলেই দুর্বল হয়ে পড়ত এবং পায়াগুলো নড়বড়ে হয়ে যেত। বিমগুলোও ভবনের বেলায় ঠিক একই রকম ফ্রেমের মতো কাজ করে এবং এই বিমের কারণেই কলামগুলো শক্ত-সমর্থ থাকে। ফ্ল্যাট প্লেট ভূমিকম্প প্রতিরোধব্যবস্থায় দুর্বল ও বিপজ্জনক। তিনি বলেন, একটি ভবন নির্মাণের সময় মাথায় রাখা উচিত, যেন ভবনটি কোনো অবস্থায়ই ডিজাইনের বেশি উচ্চতাসম্পন্ন না হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে ছয়তলার অনুমোদন ও ডিজাইন করিয়ে নিয়ে সেখানে ৯-১০ তলা নির্মাণ করা হচ্ছে। রানা প্লাজার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটেছিল। এমন যাতে না হয় আর সেজন্য রাজউককেও আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
সেমিনারের মূল বক্তা বুয়েট এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ভূমিকম্প সহনীয় ভবন করলেই হবে না। যেখানে ভবন নির্মাণ হয়েছে তার মাটিও পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আগে ডোবা-নালা ছিল এমন জায়গায় ভবন নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি নেপালের ভূমিকম্পে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রাউজককে এখন চিন্তিত করতে হবে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কোথায় আছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোও চিহ্নিত করে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ভবন চিহ্নিত করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডকে অনুসরণ করে ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভেল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমাদ খান বলেন, নেপালের মত ভূমিকম্প আমাদের দেশে হলে উদ্ধার কার্যক্রম কঠিন হয়ে পড়বে। শুধুমাত্র আমরা যদি পুরান ঢাকার কথাই চিন্তা করলে অনুমান করা যায় অবস্থা কি ভয়াবহ হবে। সে এলাকায় ভবনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ এছাড়া অপ্রশস্ত রাস্তা। “তবে অবস্থার ভয়াবহতা চিন্তা করে ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনা মোকাবেলায় নিজেদের তৈরি করছে। কোন দিকে দুর্ঘটনা হলে কোনপথে যাওয়া হবে সেরকম পরিকল্পনাও ফায়ার সার্ভিসের আছে।”
সম্প্রতি নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় দেশটিতে ছিলেন অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি এ অনুষ্ঠানে বলেন, “অবস্থা কত ভয়াবহ হতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। বাংলাদেশের মানুষকে এখন ভয় না ঢুকিয়ে সচেতন করতে হবে। এমন দুর্যোগ হলে তাৎক্ষণিক মানুষ কি করবে তা প্রতিটি মানুষকে বুঝাতে হবে।” সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্রাউন সিমেন্ট গ্র“পের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মেজর জেনারেল (অব.) হামিদ আল হাসান। আরও বক্তব্য রাখেন ভারতের আগরতলা এনআইটি-এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাজীব সাহা, ক্রাউন সিমেন্ট ও জিপিএইচ গ্র“পের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং ক্রাউন সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব খবির উদ্দীন মোল্লা প্রমুখ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *