Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

মানবতার কল্যাণই প্রকৃত ইবাদত

Published

on

সুলতানা রাজিয়া:

মহান সৃষ্টিকর্তা উদ্দেশ্যহীনভাবে কিছুই সৃষ্টি করেননি। যাকে যে উদ্দেশ্যে বা যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন সেই কাজ করাই তার ইবাদত। সূর্যকে সৃষ্টি করা হয়েছে আলো ও তাপ দেবার জন্য, এ কাজ করাই সূর্যের ইবাদত। তেমনি ঘড়ির ইবাদত সময় দেখানো, গাড়ির ইবাদত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়া। তাহলে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ সৃষ্টির পেছনেও স্রষ্টার কোনো মহান উদ্দেশ্য রয়েছে। মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগৎ যেভাবে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিচালনা করেন; ঠিক তেমনি পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং মানবতার কল্যাণ করার জন্য মানুষ সৃষ্টি করেছেন। এটাই তার প্রকৃত ইবাদত। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষকে সৃষ্টি করা হলো সে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ বাদ দিয়ে, পৃথিবীকে অন্যায় অশান্তি ও রক্তারক্তির অন্ধকার কুয়ায় নিক্ষেপ করে মানুষ যার যার উপাসনালয়ে বসে স্রষ্টার গুণগানকে প্রধান ইবাদত মনে করে খুব সাবধানতার সাথে পালন করে যাচ্ছে। মানবজাতি যে অন্যায় অশন্তির উত্তপ্ত সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে তাতে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ মানুষ জানেইনা কেন তাকে সৃষ্টি করা হলো? তাই বলে উপাসনা করা নিষেধ নয়। মানবতার কল্যাণে অবদান রাখার মতো মনোবল ও আত্মিক শক্তি অর্জনের জন্য উপাসনা প্রয়োজন।

আজ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এই চিন্তা নিয়ে ঘুম থেকে উঠে যে, পরের পকেটের টাকা কিভাবে নিজের পকেটে ঢুকাবে। এর জন্য তারা কোনো অন্যায় করতেও পিছপা হয় না। মানবতার কল্যাণ তো অনেক দূরের কথা। একটু কল্পনা করি তো এই ৭০০ কোটি মানুষ যদি এই চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুম থেকে উঠে যে, কিভাবে আমি মানুষের কল্যাণ করব, অন্যের দুঃখ-কষ্ট দূর করব, যে উদ্দেশ্যে স্রষ্টা আমাকে সৃষ্টি করলেন সেই কাজ করে স্রষ্টার ইবাদত করব তাহলে এই অন্যায়-অশান্তি, ক্ষুধা-দারিদ্র্য এসব থাকবে? নিমিষেই সমাধান হবে এত বড় সমস্যা। কি আশ্চর্যের বিষয়, কত সহজ সমাধান! অথচ আমরা কখনও চিন্তাও করিনি। বর্তমানে শান্তির আশায় কত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, কত সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, লক্ষ লক্ষ কর্মীর শ্রম, কোটি কোটি ডলার ব্যয় করা হচ্ছে। কিন্তু শান্তি কি এসেছে? আসেনি, আসবেও না। কারণ প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, মানবতার কল্যাণের জন্য কেউই কাজ করছে না। সবাই মানবতার কল্যাণের ওসিলায় নিজের কল্যাণে ব্যস্ত। অন্যের সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে নিজে সুখে থাকার চেষ্টায় রত। আলিশান উপাসনালয়ে বসে উপাসনা করলে স্রষ্টা খুশি হবেন না, মানবজাতিও শান্তিতে থাকবে না। স্রষ্টা শুধু মসজিদ, মন্দির, উপাসনালয়ে থাকেন না। স্রষ্টা থাকেন ভগ্নপ্রাণ মানুষের কাছে, বিপদগ্রস্তদের কাছে। তাই মসজিদ মন্দিরে স্রষ্টাকে না খুঁজে, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করা উচিত, গৃহহীনকে গৃহ নির্মান করে দেয়া উচিত। আর্ত পীড়িতের পাশে দাঁড়ানো উচিত। মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করাই প্রকৃত ধর্ম, প্রকৃত ইবাদত। এতে স্রষ্টা সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন, মানবজাতি শান্তিতে ও নিরাপত্তায় থাকবে। আর আমাদেরও মানবজনম সার্থক হবে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *