Connect with us

খেলাধুলা

মিরপুর সিরিজে ফেবারিট বাংলাদেশ

Published

on

sb

মিরপুরে স্টেডিয়ামে অনুশীলনে টাইগারদের দুই কাণ্ডারি সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। তাদের পারফরম্যান্সের ওপর অনেকটা নির্ভর করছে আজকের ম্যাচের বাংলাদেশের সাফল্য —রোহেত রাজীব

কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি। আশ্বিনের আকাশ যেন শ্রাবণকে অনুকরণে ব্যস্ত। দিনের তাপমাত্রাতে ভীষণ তারতম্য। সকালে বাংলাদেশ দল যখন অনুশীলন করছিল তখন ছিল খাঁ খাঁ রোদ। কিন্তু দুপুরে অনেকটা বিনা নোটিসে শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি। আবার বিকালে রোদের মধ্যেই অনুশীলন করল ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। সাধারণত বাংলাদেশে শ্রাবণ মাসে এমন আবহাওয়া দেখা যায়, কিন্তু গ্রীষ্ম ও শীতের সন্ধিক্ষণ আশ্বিন মাসেও খেলা করছে রোদ-বৃষ্টি। আবহাওয়ার এই বৈচিত্র্যই ভাবাচ্ছে মাশরাফিদের। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আজকের ম্যাচে ফেবারিট বাংলাদেশ! ভাবছেন একথা টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বলেছেন! না, মাশরাফি বলেননি। অধিনায়কের ভাষ্য, ‘সিরিজে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং আমরা সেটির জন্য প্রস্তুত।’ তবে ইংলিশ ক্যাপ্টেন জস বাটলার উপমহাদেশের পরিবেশ পরিস্থিতি ও হোমে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আগুনে পারফরম্যান্সের কথা চিন্তা করেই মাশরাফিদের গায়ে লাগিয়ে দিয়েছেন ফেবারিটের তকমা। ঘরের মাঠে যে দলটা টানা ষষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জিতেছে সেই দলকে এগিয়ে না রেখে উপায় আছে! সে কারণেই হয়তো বাংলাদেশের সামনে নিজেদেরকে ‘আন্ডার ডগ’ মনে করেছেন ইংল্যান্ড দলপতি।

অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে কখন কি ঘটে যায় বলা কঠিন! যেমন ?উইকেট নিয়ে এখনো দ্বিধান্বিত মাশরাফি। হয়তো পিচ কিউরেট গামিনি সিলভা টাইগারদের পছন্দের দিকে খেয়াল রেখেই উইকেট তৈরি করবেন। কিন্তু যদি বৃষ্টি এসে যায়, তখন তো কিছু করার থাকবে না। যেমন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টির কারণে টাইগারদের সহযোগিতা করার বদলে উল্টো আচরণ করেছে। তাই স্বাগতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ উইকেট থেকে কতটা সুবিধা পাবে তা নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। তবে সমস্যা হলে তাতে কেবল বাংলাদেশই কেন ভুক্তভোগী হবে, সফরকারীদের পারফরম্যান্সেও প্রভাব পড়বে। মাশরাফি বলেন, ‘এখন যে আবহাওয়া, বৃষ্টির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই বলতে পারছি না। যাই হোক, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের জন্য কঠিন হলে তাদের (ইংল্যান্ড) জন্যও কঠিন হবে। এটা ভেবেই আমরা মাঠে নামব। পরিস্থিতি যেমনই হোক এটা তো সত্য যে, আমরা স্ট্রাগল করলে ওরাও করবে।’

বাংলাদেশের জন্য এটা খুবই সুখের বিষয় যে, এই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ফেবারিট হয়ে মাঠে নামছে। টাইগারদের অনপ্রাণিত করছে দুই বিশ্বকাপের আত্মবিশ্বাসী দুই জয়। ২০১১ সালে চট্টগ্রামে দুই উইকেটে জয়ের পর ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে ১৫ রানের জয়। জয় দুটি আবার এসেছে দুই ভিন্ন কন্ডিশনে। প্রথমটি স্পিনিং কন্ডিশনে, দ্বিতীয়টি সিমিং কন্ডিশনে। তা ছাড়া ইংলিশদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রথম জয়টিও পেয়েছে তাদের ঘরের মাঠ ব্রিস্টলের কাউন্টি গ্রাউন্ডে।

আজকের ম্যাচে মাঠে নামার আগে নিঃসন্দেহে জয়গুলো টাইগারদের আত্মবিশ্বাসের পালে বাড়তি হাওয়া দিচ্ছে। গতকাল স্মৃতি রোমন্থন করে মাশরাফি বলেন, ‘গত দুই বিশ্বকাপের দুটি জয় আমাদের জন্য অবশ্যই ভালো স্মৃতি হয়ে আছে। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে হারানো বড় অর্জনও। তবে সবাই আসলে সাম্প্র্রতিক ব্যাপারটি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। ক্রিকেটার হিসেবে ওটা নিয়ে ভেবে আমাদের লাভ নেই। নতুন একটি সিরিজ শুরু হচ্ছে। আমাদের মনোযোগ এটিতে ভালো খেলা।’

মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাওয়া তিন জয়ের মধ্যে দুই জয়েই বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন যে ইমরুল কায়েস, সেই তারকা ব্যাটসম্যান এখন ফর্মের তুঙ্গে। ব্রিস্টলের ম্যাচে ৬০ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন। চট্টগ্রামে ইমরুল খেলেছিলেন ৭৬ রানের অসাধারণ ইনিংস। তবে অনেক দিন বাংলাদেশ দলে নিয়মিত জায়গা না পেলেও প্রস্তুতি ম্যাচে ৯১ বলে ১২১ রানের সাইক্লোন ইনিংস খেলে একাদশে সুযোগ পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে তার। ইমরুলকে নিয়ে তাই উচ্ছ্বসিত মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘ইমরুলের ইনিংস আমরা দেখিনি তবে আউটস্ট্যান্ডিং ইনিংস খেলেছে। দলের জন্য এটা স্বস্তিদায়ক। দলের সবাই খুব খুশি যে প্রথম ম্যাচে ৩৭ করে বাদ পড়ার পরও ইমরুল মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত ছিল এবং প্র্যাকটিস ম্যাচে প্রফেশানালি একটা সেঞ্চুরি করেছে। ওর জন্যও এটা ভালো, দলের জন্যও ভালো।’ বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স অধিনায়ককে প্রশান্তি দিলেও ইংল্যান্ড দলের ব্যাটিং গভীরতা নিয়েও ভাবছেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘ওদের ৮-৯-১০ নম্বর ব্যাটসম্যানও অনেক ভালো ব্যাট করে। ব্যাটিং তাই অনেক শক্তিশালী ওদের। বোলিং তো ভালোই।’

তবে আজ মাশরাফিরা মাঠে নামবেন আগের সফলতার ছবিগুলো মাথায় থেকে ঝেড়ে ফেলে, যাতে কোনো ক্রিকেটার আত্মতুষ্টিতে না ভোগেন। নতুন করে শুরুর প্রত্যয় স্বাগতিক। প্রথম ম্যাচটা জয় দিয়েই শুরুর প্রত্যাশা। মাশরাফি বলেন, ‘যে কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজে প্রথম ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছুর ভিতর দিয়ে গেলেও আমরা শেষ একটা সিরিজ খেললাম। এখন ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ শুরু হচ্ছে। আমরা ইতিবাচক আছি। প্রস্তুতি নিচ্ছি ভালো খেলার।’ টাইগার ক্যাপ্টেনের কথায় নিশ্চয়ই রোমাঞ্চিত হবে টাইগার-ভক্তরাও। তবে মুদ্রার উল্টো পীঠ সম্পর্কেও থাকতে হবে স্বচ্ছ ধারণা। ভাগ্য বলে একটা কথা আছে! শেষ পর্যন্ত যদি বাংলাদেশ হেরেও যায় সেটাও ইতিবাচক হিসেবে মেনে নেওয়ার ‘সাহসী’ মানসিকতা থাকতে হবে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *