বিবিধ
যিশু খ্রিষ্টের বাস্তুভিটা আবিষ্কার
রহস্য আছে বলেই মানুষের মনে ভয় নামক এক অজানা স্বত্ত্বা সর্বদা ক্রিয়াশীল থাকে। যদি সকল রহস্য উন্মোচিত হয়ে যায় তাহলে মানুষের আর ভয়ের কিছু থাকে না। মানুষের অতিপ্রাকৃত চিন্তা আর দর্শনের মাঝে এই ভয় তাড়ানোর কাজটি করে বিজ্ঞান। টমাস আলভা এডিসন যদি বৈদ্যুতিক বাতি না বানাতেন তাহলে আরও অনেক বছর পৃথিবীর মানুষ অন্ধকারকে জয় করার বদলে ভয় করতো। তেমনি অনেক অজানা রহস্যের সমাধানে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে বিজ্ঞান ও এর সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন যে তারা খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্টের জন্মশহরের রহস্য সমাধান করে ফেলেছেন। অধ্যাপক কেন ডার্ক ও তার দল উত্তর ইসরায়েলের একটি স্থানের মাটি খুড়ে বহু প্রাচীন একটি শহরের নিদর্শন আবিষ্কার করেছেন। কেন ডার্কের মতে, আইরিশ সন্নাসী আদমনান লিখিত বইয়ে যিশুর জন্মশহরের এবং তিনি যে ঘরে জন্মেছিলেন সেই স্থানের বর্ননা দেয়া আছে। সেই বর্ননায় দেখা যায়, যিশু যে ঘরে জন্মেছিলেন সেই বাড়িটি ছিল দুইটি উচু গম্বুজের মধ্যখানে এবং সঙ্গেই একই উপাসনালয় ছিল। বাইজানটাইন আমলে এবং ১২ শতকের ক্রুসেডের সেই উত্তাল সময়ে যিশুর ওই বাড়িটিকে স্থানীয় চার্চ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ঘটনার ভেতর দিয়ে বাড়িটি সবার অগোচরে চলে যায় এবং ধূলায় ডেবে যায়। গবেষক দলের দাবি, তাদের অবিষ্কৃত এই বাড়ি এবং শহর এখনই রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের গা থেকে ধসে যায় পাথর দিয়ে। বর্তমানে বাড়িটির পুরো অংশ সুরক্ষিত না থাকলেও মূল দরজাটি বহাল তবিয়তেই আছে। পাশাপাশি খড়িমাটি দিয়ে নির্মিত একটি ছাদও এখনও নিদর্শন হিসেবে রয়ে গেছে। যদিও কেন ডার্ক এবং তার দল যিশুর কথিত বাড়িটিকে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন কিন্তু গবেষক কেন ডার্ক এখনও নিশ্চিত নন যে এই বাড়িটিই যিশুর বাড়ি ছিল কিনা। তবে গোটা ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উপকথা থেকে যতটুকু জানা যায় তাতে এই স্থানটিকেই নির্দেশ করে। মূলত ১৯৩৬ সালে জেসুইত হেনরি উত্তর ইসরায়েলেই যিশুর বাড়ি ছিল বলে আওয়াজ তোলেন। এর আগে ১৮৮০ সালে কতিপয় ধর্মযাযকও একই আওয়াজ তুলেছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা করার কোনো কার্যকরী উপায় না থাকায় তখন নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। ২০০৬ সালে কেন ডার্ক ও তার দল এই অঞ্চলে অভিযান শুরু করেন এবং সেই থেকে আবিষ্কৃত সকল উপাদান এবং স্থান সম্পর্কে গবেষণা করে কিছুটা হলেও বলা যাচ্ছে যে এই ধ্বংসস্তুপটিই এক যুগে উল্লেখযোগ্য কোনো স্থান ছিল। ডক্টর কেনের লিখিত তথ্য মতে, ‘অনেক কষ্ট এবং চেষ্টার পর আমরা কিছু দালান উদ্ধার করতে পেরেছি। এবং সেই দালানগুলোর মধ্যে এমন একটি দালান পাওয়া গেছে যার দুপাশে দুটো গম্বুজ রয়েছে। এবং এই গম্বুজগুলোর গায়ে বাইজানটাইন আমলের মোজাইক করা আছে। যেহেতু পাশাপাশি দুটি নকশা করা গম্বুজের মধ্যবর্তী স্থানে এই বাড়িটি অবস্থিত, তার মানে এই বাড়িটি নিশ্চয়ই কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বাড়ি ছিল। এই বাড়িতেই যিশু খ্রিষ্টের শৈশব কেটেছে কিনা, তা ঠিক করে বলা মুশকিল। আবার এটাও ঠিক যে, দীর্ঘ সময় ধরে যিশুকে ঘিরে যত বর্ণনা প্রচলিত আছে, সেগুলোর সঙ্গে এই স্থানের বর্ণনা মিলে যাচ্ছে।’