Connect with us

খেলাধুলা

লঙ্কান দাপটে টাইগারদের স্বপ্নভঙ্গ

Published

on

Sri Lanka v Bangladesh - 2015 ICC Cricket World Cupস্পোর্টস ডেস্ক:

এবারের বিশ্বকাপে প্রথম বারের মত ম্যাচ হারের স্বাদ পেল টাইগাররা। টানা সাত ম্যাচের ছয়টিতে জয়ের পর (একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত) পরাজয় বরণ করলো মাশরাফি বাহিনী। গত কাল টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৩৩২ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৪৭ ওভারে ২৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ফলে, মেলবোর্নের মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৯২ রানের পরাজয় মেনে নিতে হয় টাইগারদের।

দিনের শুরুতে টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিংয়ে যায় মারশাফির সতীর্থরা। কিন্তু শুরু থেকেই ক্যাচ মিসের মহড়া আর বাজে ফিল্ডিংয়ের উদাহরণ তৈরি করে ক্রমশই লঙ্কানদের বড় সংগ্রহের পথকে সুগম করে দিতে থাকে টাইগাররা। আর সে সুযোগকে বেশ ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছে শ্রীলঙ্কার তিন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে নয়টি উইকেট হাতে রেখেই ৩৩২ রানের বিশাল সংগ্রহে পৌঁছে যায় শ্রীলংকা।

লাহিরু থিরিমান্নের সঙ্গে ১২২ রানের জুটিতে শ্রীলঙ্কাকে ভালো সূচনা এনে দেন দিলশান। যদিও প্রথম ওভারেই ভাঙতে পারতো এই জুটি। কিন্তু এনামুলের ব্যর্থতায় তা সম্ভব হয়নি। মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে স্লিপে থিরিমান্নের সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন তিনি। ২৫তম ওভারে ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দেন রুবেল হোসেন। তার বল স্লিপের ওপর দিয়ে তুলে দিতে চেয়েছিলেন থিরিমান্নে। ঠিক ভাবে খেলতে পারেননি তিনি। বল ব্যাটে লেগে থার্ড ম্যানে তাসকিন আহমেদের হাতে জমা পড়ে। নড়বড় থিরিমান্নের বিদায়ের পর দ্রুত রান তুলতে থাকে শ্রীলঙ্কা। অবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় উইকেটে ২১০ রানের জুটি গড়েন দিলশান-সাঙ্গাকারা। ২৫.৩ ওভার স্থায়ী জুটিতে ৮.২৩ গড়ে রান সংগ্রহ করেন এই দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার। ক্যারিয়ার সেরা ১৬১ রানে অপরাজিত থাকেন দিলশান। ডান হাতি এই ব্যাটসম্যানের আগের সেরা ছিল অপরাজিত ১৬০ রান। বাংলদেশের বিপক্ষে শেষ ৯ ম্যাচে এনিয়ে চারটি শতক পেলেন তিনি। ২১তম ওয়ানডে শতক পাওয়া দিলশানের ১৪৬ বলের ইনিংসটি ২২টি চার সমৃদ্ধ। ১০৫ রানে অপরাজিত থাকেন গত ম্যাচে অসাধারণ পারফর্ম করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাঙ্গাকারা। চারশ’তম ওয়ানডে খেলতে নেমে ব্যক্তিগত ২২তম শতকে পৌঁছান তিনি। ৭৬ বলে খেলা তার আক্রমণাত্মক ইনিংসটি গড়া ১৩টি চার ও ১টি ছক্কায়। ৭৩ বলে শতকে পৌঁছান সাঙ্গাকারা, এটি তার দ্রুততম শতক।
লংকানদের বেধে দেওয়া ৩৩৩ রানের টার্গেটে বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন তামিম ইকবাল এবং এনামুল হক বিজয়। তবে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে তামিমকে শূন্য রানে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান শ্রীলঙ্কার অন্যতম বোলিং শক্তি লাসিথ মালিঙ্গা। বাংলাদেশের বাঁহাতি ওপেনার তামিম ফিরলেও তিন নম্বরে নামা আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার টাইগারদের রানের চাকা সচল রাখেন। চতুর্থ ওভারে লাকমলকে পরপর তিনবার সীমানা ছাড়া করেন সৌম্য। তবে খুব বেশিদূর যেতে পারেননি সৌম্য। ১৫ বলে ২৫ রান করে ম্যাথুজের বলে উইকেটের পিছনে সাঙ্গাকারার হাতে ধরা পড়েন তিনি। তামিম, সৌম্য ফিরলে ব্যাটিং ক্রিজে আসেন মমিনুল হক। সপ্তম ওভারে তিনিও সাজঘরে ফেরেন। লাকমলের বলে জয়াবর্ধনের তালুবন্দি হন মমিনুল আর আউট হওয়ার আগে দলের খাতায় যোগ করেন মাত্র ১ রান। দলীয় ৪১ রানের মাথায় টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা চালান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং ওপেনার বিজয়। তবে ১৬তম ওভারে গিয়ে রানআউটের শিকার হন ৪৩ বলে এক চার আর এক ছয়ে ২৯ রান করা বিজয়। বিজয়ের আউটের পর ব্যাটিং ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারের সঙ্গে মাত্র ১৬ রানের জুটি গড়ে মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ দলীয় ১০০ রানের মাথায় পেরেরার বলে হেরাথের তালুবন্দি হন। দলীয় শত রানে ৫ উইকেট হারানোর পর টাইগারদের আশার আলো দেখায় সাকিব-মুশফিক জুটি। এ দুই ব্যাটসম্যান ৬৪ রানের জুটি গড়েন। ৫৯ বলে চারটি চার আর একটি ছয়ে ৪৬ রান করা সাকিব আউট হয়ে গেলে বড় ধরণের ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ৬ উইকেট হারিয়ে দু’শো রানের কোটা পার হওয়ার পর সাজঘরে ফিরলেন ৩৯ বলে ৩৬ রান করা মুশফিকুর রহিম। লাকমলের বলে বোল্ড হন তিনি। তার পরই সাঙ্গাকারার স্ট্যাম্পিংয়ে ক্রিজ থেকে ফিরে যান মাশরাফি। তবে ৫৩ রানের একটি ইনিংস খেলেন সাব্বির রহমান। পাওয়ার প্লে’তে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল তিন উইকেট হারিয়ে ৬০ রান। ২০ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় চার উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান। আর ৩০ ওভার শেষে ৫ উইকেট খুঁইয়ে বাংলাদেশ তোলে ১৪৫ রান। ৪০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে টাইগারদের সংগ্রহ হয়েছিল ২০৪ রান। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা লঙ্কান ওপেনার তিলকারতেœ দিলশান ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, বিশ্বকাপের আসরে দুইবারের মুখোমুখি দেখায় দুটি ম্যাচই জিতেছে লংকানরা। আর ৩৭টি ওয়ানডে ম্যাচে শ্রীলংকার জয় ৩২টি, বাংলাদেশের জয় ৪টি, বাকি একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল।সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩৩২/১ (থিরিমান্নে ৫২, দিলশান ১৬১*, সাঙ্গাকারা ১০৫*; রুবেল ১/৬২)।
বাংলাদেশ: ৪৭ ওভারে ২৪০ (তামিম ০, এনামুল ২৯, সৌম্য ২৫, মুমিনুল ১, মাহমুদুল্লাহ ২৮, সাকিব ৪৬, মুশফিক ৩৬, সাব্বির ৫৩, মাশরাফি ৭, রুবেল ০*, তাসকিন ০; মালিঙ্গা ৩/৩৫, দিলশান ২/৩৫, লাকমাল ২/৪৯, থিসারা ১/৩৩, ম্যাথিউস ১/৩৬)।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *