কুড়িগ্রাম
শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাড়াতে চায় কুড়িগ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধি সফিকুল
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
সমাজের বোঝা না হয়ে নিজের পায়ে দাড়াতে অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধি সফিকুল। উজ্জল ভবিষ্যতের আশায় নিজের পঙ্গু দুটি পা নিয়ে শত দারিদ্রতার মাঝেও চালিয়ে যাচ্ছেন পড়া-লেখা। প্রতিবন্ধি হিসেবে নয় উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে সমাজে মাথা উচু করে দাড়ানোর ইচ্ছে তার।
১৯৯৭ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সুখান দিঘি গ্রামের পঙ্গুত্বকে বরন করেই জন্ম নেন শফিকুল ইসলাম। বাবা না থাকায় জন্মের পর থেকে মা রুপভানকে নিয়ে একটি কুটুরী ঘরে বাস করছেন তারা। মা রুপভান সামান্য একটি পনের দোকান ও অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে কোন রকমে সংসার চালান। পাশাপাশি লেখা-পড়ার খরচ চালাতে হাতে ভর দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে দিনভর ভিক্ষাবৃত্তি করে রাতে পড়া লেখার কাজটিও চালিয়ে যাচ্ছেন সফিকুল। ২০১৩ সালে ফুলবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করে ফুলবাড়ী ডিগ্রী কলেজে কমার্স শাখায় ভর্তি হয়ে ২০১৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
পঙ্গুত্ব নিয়ে সফিকুলের সাহসিকতায় অবাক হয়ে যান তার গ্রামের মানুষ। শিক্ষা জীবনে সহযোগীতা করতে সরকারসহ বিত্তবানদের হাত বাড়িয়ে দিলে পঙ্গুত্বকে ভুলে সফিকুল তার কাংক্ষিত লক্ষে পৌছিতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।
রুপভান বেগম বলেন, কিশোর বয়সে প্রতিবেশিদের স্কুলে যাওয়া দেখে পড়া লেখা করার অদ্যম বাসনা যাগে প্রতিবন্ধি সফিকুলের। সংসার আর লেখা-পড়ার খরচ যোগাতে ইউনিয়ন পরিষদে বার বার যোগাযোগ করেও ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতার কার্ড পাননি তিনি। ছেলের পড়া-লেখার খরচ জোগাতে না পারার কষ্টে মাঝে মধ্যে চোখের জল ফেলতে হয় তাকে।
সফিকুল জানান, হাটতে না পারলেও অদম্য উচ্ছায় হাতে ভর দিয়ে স্কুল যাওয়া শুরু করেন সফিকুল। পড়া লেখার খরচ যোগাতেই নিরুপায় হয়ে ভিক্ষার পথ বেচে নিতে হয়েছে তাকে। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হবার পর গত দুই বছরে প্রতিবন্ধি বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েও থেমে থাকেনি উজ্জল ভবিষতের স্বপ্ন দেখা। চড়া সুধে টাকা নিয়ে ফরম ফিলাব করতে হয় তাকে। উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডী পেরিয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে চায় প্রতিবন্ধি সফিকুল। সমাজের কাছে বোঝা নয় প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সে।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মঈনুল হক জানান, সফিকুলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে যতটুকু পারা যায় সহযোগীতা করা হবে। তবে তার ভবিষ্যৎ জীবনের লেখা-পড়ার খরচ যোগাতে বিত্তবানরা এগিয়ে আসা দরকার। এতে করে সে প্রতিবন্ধিদের মডেল হিসেবে কাজ করবে। প্রতিবন্ধিরা আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না।
সমাজের বোঝা নয় পঙ্গুত্বকে জয় করে কাংক্ষিত লক্ষে পৌছিতে সফিকুলের শিক্ষা জীবনে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিবে সরকারসহ দেশের বিত্তবানেরা এমনটাই প্রত্যাশা সবার।